আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজান: ছোটদের উৎসব



হিজরি বর্ষপঞ্জিতে শুরু হলো রমজান। তাই আমাদের চারদিকে অন্য রকম পরিবেশ। অন্য এক ভাবগম্ভীর আবহ-আমেজ। পবিত্রতার, শুদ্ধতার, পুণ্য সঞ্চয়ের প্রতিযোগিতা চলছে। চোখ খুললেই দেখা যাবে বদলে গেছে পরিচিত অনেক কিছুই।

ছোট-বড় সবার জানা হয়ে গেছে রমজান এসেছে। ছোটদের (নাবালেগ) রোজা রাখায় বাধ্যবাধকতা নেই। মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য এ মাসটি উৎসবের। তারা বোঝে এক মাস পর আসছে খুশির ঈদ। ছোটরা রোজার মৌসুমে চাঁদ দেখা, কোরান খতম দেওয়া, দোয়া-দরুদ শেখা, দলবেঁধে তারাবি পড়তে মসজিদে যাওয়া, রকমারি ইফতারি-সেহেরি খাওয়া ও আত্মীয়স্বজন-গরিবদের মাঝে বিলানো, অবসরে মজার মজার বই পড়া, ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর পরিকল্পনা করে বেশ আনন্দে থাকে।

চাঁদ দেখার আনন্দ কী ভাষায় প্রকাশ করা যায়? কেউ হয়তো দেখলেন পশ্চিম আকাশে সরু-বাঁকা একফালি চাঁদ উঠেছে। অমনি শোরগোল পড়ে যায়। কই কই? আঙুল দিয়ে দিক নির্দেশ করে কেউ বলে `ওই যে লম্বা গাছটা আছে না তার উত্তর দিকে বড় ডালটার আগায় এক হাত ডানে গিয়ে তারপর মেঘের নিচে দেখ!' ততক্ষণে চাঁদ মিলিয়ে গেছে আকাশে। আর আকাশ মেঘলা হলে তো চাঁদ দেখতে হয় টেলিভিশনের পর্দায়। কিংবা চাঁদ দেখার খবর শুনতে হয় বেতারযন্ত্রে।

অনেকে আব্বু-আম্মু কিংবা দাদা-দাদির কাছে বায়না ধরে সেহেরির সময় ঘুম থেকে জাগানোর জন্য। ইফতারের সময় বাহারি আয়োজন চনাভাজা, পিঁয়াজি, বেগুনি, শরবত, খেজুর, জিলাপি, দইবড়া, আলুর চপ, কাটলেট, চিংড়ি চপ, সবজি রোল, সমুচা... আর রোজাদারদের কদর দেখে নিজেকে অসহায় মনে হয়। চোখের সামনে ভাসে সেহেরির বিশেষ আয়োজন দুধ-কলা-ঘি মেশানো ভাত, গরু-ছাগল-খাসির মাংস, মাছ কত কী! এ ব্যাপারে কত আকুতি ঝরে সোনামণিদের মুখে। অনেকে আবার শুক্রবার বা শবে কদরে রোজা রাখার বায়না ধরে আগে থেকেই। অভিভাবককে রাজি করাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় কেউ কেউ।

কেউ আবার রোজার সওয়াব বিলি করে `এটার সওয়াব আম্মু পাবেন', `পরেরটা আব্বুর। ' আর বেশি রোজা রেখে সহপাঠীদের কাছ থেকে বাহবা কুড়াতে কে না চায় `আমি এ বছর ১০টা রোজা রেখেছি', `আমি ১২ টা' ইত্যাদি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রকাশিত শিশু বিশ্বকোষ-এ রোজা সম্পর্কে বলা হয়েছে রোজা ইসলামী বিধানের চতুর্থ স্তম্ভ, যা মুসলমানদের জন্য একটি অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। আরবিতে একে সাওম বা সিয়াম বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ: আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া।

সাধারণভাবে রমযান মাসে দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে উপবাস পালন করাকে রোজা বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে বিশ্বের সকল জাতির মধ্যেই কোনো-না-কোনোভাবে উপবাসের সংযম পালিত হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি এবং খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও এর প্রচলন আছে। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে আত্মসংযমের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে অনাচার থেকে বিরত রাখা, সৎকাজে অনুপ্রাণিত করা এবং দুঃখী ও অনাহারীদের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধির মাধ্যমে মানুষের মনে সহানুভূতি জাগ্রত করা। (পঞ্চম খণ্ড/পৃষ্ঠা ৮০)আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরান শরিফে বলেছেন, `হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।

' (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৩) হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, `যখন রমজান মাস আগত হয় তখন আকাশ বা বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা বন্ধ করা হয় না, আর দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা আর খোলা হয় না, আর শয়তানকে জিঞ্জিরে বন্দী করা হয়। ' (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজা) এ মাসে মহাগ্রন্থ আল কোরান নাজিল হয়েছে। এ মাসের ১৭ তারিখ ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর। তাই পুণ্যময় রমজানের আসল তাৎপর্য, গুরুত্ব, ফজিলত অপরিসীম।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস শোনা যাক `আদম সন্তানের প্রত্যেক ভালো কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারে এর ব্যতিক্রম হবে। কেননা বান্দা আমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য রোজা রেখেছে এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। সে তো আমার জন্য কামনা-বাসনা ও খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ' (মুসলিম) রোজা আমাদের জন্য বয়ে আনুক অধিকতর কল্যাণ আর সাফল্য এ কামনা করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।