আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিকশাচালকদের সৌজন্য মুলক সম্বোধন করুন

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

রিকশাচালকদের সৌজন্য মুলক সম্বোধন করুন সকালে বাসা থেকে বেড়িয়েছি। ধানমন্ডি ১০ নম্বর রোড এবং মিরপুর রোডের মাথায় দেখি ১২/১৩ বছরের স্কুল ড্রেস পরা দুই শিশু একজন বযস্ক রিকশা চালককে লাথি, কিল ঘুষি মারছে। রিকশা চালক মার খেয়ে অশ্লীল গালাগালি করছে-কিন্তু ছেলে দূটোকে শারিরিক প্রতিঘাত করছেনা! রিকশাওয়ালার দোষ হয়ত বেশী ভাড়া চেয়ে থাকবে কিম্বা ছাত্রদের গন্তব্যস্থানে যেতে নারাজ হয়ে থাকবে। এমন দৃশ্য ইদানীং আমরা হর-হামেশাই দেখে থাকি। রাস্তাঘাটে চলার সময় আমরা প্রায়শই বয়স্ক রিকশাচালকের সংস্পর্শে আসি।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় রিকশার মতো সহজ ও সুলভ বাহন দ্বিতীয়টি নেই বললেই চলে। তাই রিকশাচালকগণ অনেকটাই আমাদের নিকটজন হিসেবে পরিণত হন। কোনো কোনো রিকশাচালকের আচার-ব্যবহার যে খারাপ নয় তা বলবো না। তবে অধিকাংশ রিকশাচালকেরই ব্যবহার ভালো। অনেক সময় দেখা যায়, রিকশাচালকদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি এমনকি মারামারি পর্যন্ত হয়।

কোনো রিকশাচালকের সঙ্গে একজন যাত্রী বিবাদে লিপ্ত হবেন। । এটা কোনোভাবেই কারো কাম্য হতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো কোনো কোনো যাত্রী রিকশাচালকের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন। আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো রিকশাচালকের সঙ্গে যাত্রীদের বিবাদের প্রধানতম কারণ হচ্ছে ভাড়া নির্ধারণ না করেই রিকশায় উঠে বসা।

কিছু যাত্রী আছেন যারা দরদাম করে রিকশা ওঠাটাকে ভদ্রতা বলে মনে করেন না। যাত্রী ভাবেন ভাড়া দেবো ৮ টাকা আর রিকশাচালক মনে করেন ভাড়া হওয়া উচিত ১৫ টাকা। ফলে সৃষ্টি হয় মতান্তর। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি এবং পরিণতিতে মারামারি। আমরা যদি রিকশায় ওঠার আগেই ভাড়া এবং কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে(যদিও যাত্রী যে পথে রিকশাওয়ালাকে যেতে বলবেন-রিকশাওয়ালা অবশ্যই সেই পথে যাবেনা-এটা ওদের অভ্যাস) তা নির্ধারণ করে নিই তাহলে সহজেই এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।

কিছু মানুষকে দেখা যায়, বয়স্ক রিকশাচালকদেরও তুই/ তুমি বলে সম্বোধন করেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। একজন রিকশাচালক তিনি সাধারণ একটি পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তাকে সম্মান প্রদর্শন করা সবারই কর্তব্য। একবার ভাবুন তো যে রিকশাচালককে আপনি "তুই" বা "তুমি" বলে সম্বোধন করছেন তিনি যদি আপনার আত্মীয় হতেন তা হলে কি তাকে এভাবে সম্বোধন করতে পারতেন? তবে হ্যাঁ, রিকশাচালক যদি বয়সে চেয়ে কম হয় তাহলে তাকে তুমি বলে সম্বোধন করতে পারি। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

কিন্তু একজন বয়স্ক রিকশাচালক, যিনি আমার বাবার বয়সী তাকে তুমি বা তুই বলে সম্বোধন করা কি ঠিক? একবারও কি ভেবে দেখি আমি যদি রিকশাচালক হতাম এবং কেউ যদি এভাবে অসম্মানজনকভাবে সম্বোধন করতো তাহলে আমার কেমন লাগতো? রিকশা চালকেরাও অনেক সময় যাত্রীদের সাথে ঝাড়ি মেরে কথা বলে। অসৌজন্যমুলক ভাবে কথার উত্তর দেয়-একথা সত্য। আমরা ওদের এই বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে পারি কিম্বা ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখতে পারি। কারন, এই আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগেও আমাদের মত এক জন মানুষ যিনি রিকশায় পা তুলে বসে থাকবেন আর অন্য একজন মানুষ শরিরের রক্ত ঘাম ঝড়িয়ে, রোদ বৃস্টি ঝড় উপেক্ষা করে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে-সেই লোকটার মন মেজাজতো একটু খারাপ থাকতেই পারে! কারন সেও মানুষ বলেই তারতো আত্মমর্যাদাবোধ আছে। ভাগ্যের ফেরে পরে আজ আমি রিকশার যাত্রী আর অন্য জন রিকশা চালক! প্লীজ, ঘটনাটাকে ঠিক একটু উল্টিয়ে দেখুন......... সব বয়সী রিকশাচালকে "ভাই তুমি যাবে" এবং বাড়দের "আপনি যাবেন" বলে সম্বোধন করতে পরি।

আমরা যারা বড় তারা যদি রিকশাচালকদের "ভাই" বলে সম্বোধন করতে পরি তাহলে ছোটরাও কখনো রিকশাচালকদের "তুই" বা "তুমি" সম্বোধন করবে না। কোনো কাজই ছোট নয়, যদি তা অসৎ কাজ না হয়। মনে রাখতে হবে আল্লাহর কাছে সেই উপার্জনই শ্রেষ্ঠ যা নিজের হাতে করা হয়। ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা অত্যন্ত উঁচুতে(যদিও ইসলাম ধর্মের জন্ম ভুমি আরব দেশে মনিব আর ভৃত্যের ব্যবধান সব চাইতে বেশী) । কিন্তু আমরা অজ্ঞতাবশত সাধারণ শ্রমিকদের অবজ্ঞা করে থাকি, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না।

উল্লেখ্য, কাউকে সম্মান করলে কখনো নিজের সম্মান কমে না। বরং এতে নিজের মহত্ত্ব প্রকাশ পায়। আমি লক্ষ করে দেখেছি-যারা নিম্ন পেশায় থাকে মনস্তাত্বিক কারনেই তাদের মেজাজ কিছুটা চড়া হয়ে থাকে। যারা শারিরিক পরিশ্রম করে জিবীকা নির্বাহ করে তাদের এই সমস্যাটা আরো বেশী। রিকশাচালকরা তো আমাদেরই কারো না কারো ভাই, বাবা, চাচা কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত।

নিদেন পক্ষে তারাও মানুষ। তাই আমরা কি পারি না তাদের সঙ্গে একটু ভালো ব্যবহার করতে? আসুন আমরা সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। এখন থেকে রিকশাচালক শুধু নয় বয়স্কদের সবাইকে সম্মান করে কথা বলি। কাউকে সম্মান দেখাতে অর্থের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এতে যে প্রাপ্তি যোগ ঘটে তা পয়সা দিয়ে কেনা যায় না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।