আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক মৃত্যুপথযাত্রীর উদ্ধৃতি...

Thank you very much for teaching me the new policy! I'd just love to spit on it!
আমি একজন অসুস্থ মানুষ। আমার সারা দেহে প্রচন্ড ব্যথা অনেক বছর ধরে এই রোগ কুয়াশার মত আচ্ছন্ন করেছে আমাকে। এখন আমার অন্তিমকাল। কালো বেড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসছে ‘মরণ’। সব বিজ্ঞ চিকিৎসক একবাক্যে বলেছে--- তোমার আয়ু বেশিদিন নেই।

। অথচ, আমার যে বাঁচতে ইচ্ছে করে। তাই, আমি শেষ চেষ্টা করতে চাই। ক্ষীয়মাণ প্রাণশক্তি জড়ো করে, বেঁচে থাকার অনাদি তাড়না নিয়ে, নিজের নিরাময়কারী হয়ে নিজেই দাঁড়াই, নিজের সামনে, প্রতিবিম্বের মত। সারা সত্ত্বার রোগাক্রান্ত রূপটা সর্বাগ্রে নিরীক্ষণ করি।

ইস ! হৃ্দপিন্ডে কি তীব্র হলুদ অসুখ বাসা বেঁধে আছে; সেখানে হাত রেখে বললাম, “অসুখ, তুমি চলে যাও এই হৃদপিন্ড ছেড়ে !” সেই হলুদ অসুখ জবাব দিলো -“খবরদার, তাড়াতে চেওনা আমাকে ! আমি ভালোবাসা বহুকাল ধরে এই হৃদপিন্ডে বসতি গেড়ে আছি। ” ফুসফুসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে ঘন নীল পতঙ্গেরা অগণিত রন্ধ্র তৈরী করেছে; করছে এখনও। তাই, ঝাঁঝরা হয়ে গেছে ফুসফুস। বললাম, “তোমাদের পুড়িয়ে মারবো !” তারা জবাব দিলো – “আমরা ভালোবাসার অজস্র স্বপ্ন; আমাদের চিরকালীন বসতি থেকে উচ্ছেদ করে দেবার ক্ষমতা তোমার নেই !” দেহের অজস্র ধমনীর দিকে চেয়ে দেখি, তারা রক্তহীন, পান্ডুর। খরায় শুকিয়ে যাওয়া নালার মত শুষ্ক।

ধমনীর লাল, শুদ্ধ রক্ত তৃষিতের মত শুষে নিয়ে প্রতিটি ধমনীতে ফুটে আছে কয়েকটি কৃষ্ণচূড়া। দূর্নিবার ক্রোধে আমি বললাম – “ছিঁড়ে নেবো তোমাদের !” হিমশীতল নির্দয়তায় তারা জানালো – “তোমার সাধ্য নেই ! আমরা ভালোবাসার নৈবেদ্য, আমরা অক্ষয়-মৃত্যুহীন। “ দৃষ্টি ফেরালাম দেহের শিরাগুলোর প্রতি। কোথায় সেখানে নীল রক্তের প্রবাহ? খটখটে, শুকনো শিরাগুলো একাকার হয়ে গাঢ় নীল আকাশ হয়ে গেছে; জৈষ্ঠ্যের বর্ষণহীন, তপ্ত আকাশ। চিৎকার করে বললাম – “দূর হও, দূর হও !” বিষণ্ন হেসে সে জবাব দিলো – “আমি ভালোবাসার অসহ্য ব্যথা, আমার অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই!” এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছি এখন অজস্র নীল মাছি, লাল লাল কৃষ্ণচূড়া আর একটি আকাশকে ধারণ করে আমি নিজেকে বড় অসহায় ভাবে সঁপে দিয়েছি মৃত্যুর চারটি থাবার কাছে।

‘ভালোবাসার হলুদ বিষে আক্রান্ত’ আমি এখন খুব ভালো করে জানি; হীরা-চুনি, সোঁদা ঘ্রাণ ভরা নবান্ন, বৃষ্টির রাত শেষে একটি সূর্যোদয়, সোনালি চিলের পালক............ এসব কোনওটাই ভালোবাসার স্বরূপ নয়। ভালোবাসা আসলে চিরক্ষুধিত, চিরতৃষিত বলির মঞ্চ। ভালোবাসা ঘাতক অসুখ ভালোবাসা জমকালো কারাগার। ******************************************************* ******************************************************* কবিতাটি আমার লেখা নয়। এত অসহ্য সুন্দর কবিতা আমি লিখবো, উপরওয়ালা সেই ক্ষমতাই দেননি আমাকে! যে মেয়েটি লিখেছিলো, তাকে আমি আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।

বহু বছর পর নিতান্তই কপালগুণে যখন খুঁজে পেলাম তখন খুব অবাক হয়ে দেখি, কতই না বদলে গেছে সে! খুব চঞ্চলতা বা উচ্ছলতা কখনোই ছিলো না তার মধ্যে, বরাবরই সে ধীর-স্থির স্বভাবের, কিন্তু এখন আরও কেমন যেন স্থবির হয়ে গেছে। খানিকটা রষকষহীনও। নিজের স্বামীকে কি পাগলের মত ভালোই না বাসতো (এই কবিতাটাও স্বামীকে ভালোবেসেই লেখা), হয়তো এখনও বাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসাও মনে হয় যেন কোনও জড়পদার্থের ভালোবাসা। মা হওয়া কপালে লেখা ছিলো না, কিন্তু অসম্ভব ফুটফুটে একটি সন্তানের মা হবার সৌভাগ্য তার হয়েছে। আমার চেয়ে সে যে বয়সে অনেক বড় তা নয়, তবু কি এক অদ্ভূত কারণে আমাকেও সে তার সন্তানের মতই ভালোবাসতো।

কত মজার মজার নামে ডাকতো আমাকে, এখন আর তা ডাকে না। মাঝেমাঝে বলতো, "চুলগুলোর এমন বারোটা বাজিয়ে রেখেছ কেন? এসো আমি তেল দিয়ে দিই"... তারপর কত যত্ন করেই না তেল দিয়ে আঁচড়ে দিত। কত প্রিয় ছিলো তার বৃষ্টিভেজা শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়া- কিংবা জীবনানন্দের বই হাতে রাতের পর রাত পার করে দেয়া, নিজের লাল শাড়ি, আলতার শিশি আর সিঁদুরের কৌটা নিয়ে পাগলামি করা... এসব এখন তার কাছে শুধুই এক সুদূর পরাহত কল্পনা। লেখাপড়া, সংসার, ক্যারিয়ার আর জীবনের চাপে শত সহস্রবার নিষ্পেষিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত আজ সে পরিণত হয়েছে এক জীবন্ত ফসিলে। এই কবিতা আজ উৎসর্গ করলাম তাকেই – সেই জীবন্ত ফসিলকে, আমার সেই হারিয়ে পাওয়া দ্বিতীয় মাকে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।