আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনৈক নৈরাশ্যবাদীর মৃত্যু ভাবনা

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

মৃত্যুর খবরগুলো আমি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি। পত্রিকার যে প্যারাগুলোতে মৃত্যুর খবর থাকে আমি ভুলেও সেদিকে চোখ বুলাইনা। চলার পথে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কোন প্রাণহানী ঘটলে কিভাবে ঘটল, কেন ঘটল তার অনুসন্ধান করিনা। বরং বহুদিন সে পথটাকে এড়িয়ে চলি। আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুসংবাদ আসলে তার বাড়িতে যাই, প্রথামাফিক শেষকৃত্যেও অংশগ্রহণ করি।

কিন্তু কখনও তার চেহারাটা শেষবারের মতো দেখিনা। এমনকি তার লাশটি যেখানে রাখা হয় সেই স্থান থেকে নিজেকে যথসম্ভব দূরে রাখি। মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে রাখার এমন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা কেন আমার? আপনারা হয়তো বলবেন মৃত্যূভয়। লজিকও হয়তো তাই বলে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও এর সাথে একমত।

তবে এই ভয় অবশ্যই মৃত্যু পরবর্তী শাস্তি-কে চিন্তা করে নয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সাধারণ কিছু পাপ আমি অবশ্যই করেছি। তবে আমি নিশ্চিত, প্রায়শ্চিত্ত করার মতো কোন পাপ আমি করিনি। আর ঈশ্বর-কে আমি অতো কঠোরও মনে করিনা। তিনি হয়তো শাস্তি তাকেই দিবেন যাকে না দিলেই নয়।

যদি শাস্তির ভয়ই না থাকে তবে মৃত্যুকে এতো ভয় কেন আমার? এর একটাই উত্তর, জীবনের প্রতি চরম আকর্ষণ। এটা হয়তো জীবনের সাধ বা ইচ্ছাগুলো অপূর্ণ থাকার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির ফল। জীবনের বেশিরভাগ সাধই আমার পূর্ণ হয়নি। বর্ষার ভরা পুকুরে কোনদিন সাতার কাটিনি। পাহাড়ের বুকচিরে ঝরে পড়া ঝর্ণা আমি দেখিনি।

সমুদ্র দেখেছি, তবে তার নোনাজলে কখনও সাতার কাটিনি। কারো প্রাণ উজার করা ভালবাসা পাইনি, কাউকে তেমনভাবে ভালও বাসিনি। হিন্দু ও বৌদ্ধশাস্ত্র মতে জীব-কে পূর্বজন্মের কর্মফল ভোগ করার জন্য পুনঃ পুনঃ জন্ম নিতে হয়। আর যদি সে ঈশ্বর-কে সন্তুষ্ট করতে পারে কিংবা নিজের রিপু বা ইচ্ছা-কে বশ করতে পারে তবে জীবনের এই চক্র এবং এর ফলে জীবনধারণের যে যন্ত্রণা তা থেকে মুক্তি পায়। কোন প্রকার বৈজ্ঞানীক যুক্তি বা প্রামাণ্য দলিল না থাকলেও আমার জীবনাকাংখী হৃদয় এ মতবাদের প্রথম অংশকে গ্রহণ করতে চায় বিনা সংকোচে।

তবে ২য় অংশ অর্থাৎ মুক্তি পাওয়ার কোন বাসনা আমার নেই। আমি পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করতে চাই। মানুষ হয়ে না জন্মাতে পারলেও কোন আপত্তি নাই। যেকোন জীব হয়েই আমি পৃথিবীর এই আলো-বাতাসে পুনঃ পুনঃ ফিরে আসতে চাই। পৃথিবীর শেষদিনের শেষ সূর্যাস্তটি প্রাণভরে উপভোগ করতে চাই।

পৃথিবীর শেষ ঘাসফুলের স্পর্শে নিজেকে সুরভিত করতে চাই। অনেকেই আমাকে নৈরাশ্যবাদী বলেন। আমার জীবনাচারণ, উপলব্ধি এবং লেখাতে নিরাশার ছাপ দেখেন। কিন্তু আমি নিজেকে কখনই তা মনে করিনি। বরং আমার নিজের কাছে নিজেকে অতিরিক্ত আশাবাদী বলে নয়।

আশার মাঝে আশা সবাই খুঁজতে পারেন, দেখতে পারেন। কিন্তু নিরাশার মাঝে আশা ক'জন দেখতে পারেন? ক'জন খুঁজতে পারেন? আমি এই নিরাশার মাঝে আশা খুঁজি। তাই ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অতিরিক্ত আশাবাদী বলেই ভাবতে পছন্দ করি। অন্তত নিজের কাছে আমার নিজেকে তাই মনে হয়। এই অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়ার কারণে আমি মৃত্যুর মতো একটা চূড়ান্ত হতাশার মাঝেও চূড়ান্ত আশা দেখতে পাই।

আমার মতে মানুষের কোন জ্ঞানই সম্পূর্ণ নয় যখন পর্যন্ত সে সৃষ্টিরহস্যকে জানতে না পারে। সৃষ্টিরহস্যের জ্ঞানই মানুষকে সম্পূর্ণ জ্ঞানী করতে পারে। এর আগ পর্যন্ত সে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সে বিবেচনায় মানুষ মৃত্যুর মাধ্যমেই নিজেকে সম্পূর্ণ জ্ঞানী করতে পারে। মৃত্যুর মাধ্যমেই তার হৃদয়ে সদা বহমান আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে।

ধর্মের সততা নির্ধারণ করতে পারে। আর এই জ্ঞান অর্জনের জন্য কোন বিশেষ জ্ঞানী বা শিক্ষিত অথবা ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মৃত্যুর কাছে জ্ঞানী, মূর্খ, ধনী, গরীব সবার মর্যাদা সমান। সবাই-কেই সে সমানভাবে কাছে টানে, একান্ত আপন করে নেয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.