আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অধিকারের আসল উদ্দেশ্য কী?



রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামকে হটাতে ৫ মে রাতের অভিযানে ‘নিহত ৬১ জনের’ কথিত তালিকাকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্ক উঠেছে। পুলিশ ও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘তালিকা’ নিয়ে বিভ্রান্তিও বেড়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে অধিকারের তৈরি তালিকা হিসেবে ৬১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইতিপূর্বে অধিকারের কার্যালয় থেকে জব্দ করা কম্পিউটার থেকে কথিত এই তালিকা উদ্ধার করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর অধিকার দাবি করছে, প্রকাশিত এই তালিকা তাদের তালিকা নয়।

তাদের করা নিহত ৬১ জনের তালিকা ভিন্ন। এদিকে পুলিশের সরবরাহ করা ওই ৬১ জনের তালিকা প্রথম আলোর হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, কম্পিউটার কম্পোজ করা ওই তালিকায় দুটি কলামে এ নিয়ে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধান এবং এর অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া আছে। এই তালিকার শেষ ক্রমিক ৬১ হলেও ১০ নম্বর ক্রমিকে কারও নাম নেই। বাকি ৬০ জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম ও পরিচয় দুবার করে উল্লেখ রয়েছে।

তালিকার নাম ও ঠিকানা ধরে খোঁজ করে ১৯ জনের কোনো অস্তিত্ব পাননি পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ছয়জন অন্যত্র মারা গেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনজনকে জীবিত পাওয়া গেছে। ২৬ জনের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের দাবি, শাপলা চত্বরে অভিযানে নিহত হিসাবে অধিকারের ৬১ জনের তালিকার মধ্যে ৩৫ জনের নামই ভুয়া। হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ৫ মে দিনভর সংঘাত, ৬ মে নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডের সংঘাত এবং ঢাকার বাইরের সংঘাতে নিহতদের নামও অধিকার এ তালিকায় দিয়েছে। তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। গতকাল অধিকারের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে অধিকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নিহতদের তালিকাবহির্ভূত অনেক নামই পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমনকি অধিকারের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে তিনজন জীবিত আছে বলে দাবি করা হয়েছে, তারা অধিকারের প্রস্তুতকৃত তালিকাতেই নেই। ’ বিবৃতিতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যখ্যান করা হয়। তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই তালিকা তাঁদের নয় বলে অধিকার দাবি করলেও প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করছে না সংস্থাটি। ফলে অধিকারের ‘নিহত ৬১ জনের’ তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি জিইয়ে রইল। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা তাসকিন ফাহমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হয়।

ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এই তালিকা অন্য কাউকে দিতে পারি না। ’ তাসকিন ফাহমিন দাবি করেন, পুলিশ ১১ আগস্ট অধিকারের কার্যালয় থেকে কম্পিউটার নিয়ে গেছে। তাতে বিভিন্ন ঘটনার নানা তথ্য ছিল। একটা খসড়া তালিকাও ছিল। আরও অনেক কিছু ছিল।

কিন্তু হেফাজতের সমাবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতদের যে চূড়ান্ত তালিকা অধিকার তৈরি করেছিল, তা জব্দ করা কম্পিউটারে ছিল না। তিনি বলেন, অধিকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ভুয়া তথ্য দিয়ে পুলিশ মনগড়া তালিকা তৈরি ও প্রচার করছে। গত ১০ জুন অধিকার ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ‘মানবাধিকার’ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তারা নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে দাবি করে। গত ১০ জুলাই সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় তালিকাটি চেয়ে পাঠালে অধিকার তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এ ঘটনার জের ধরে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়, অধিকার ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এবং চারটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে নিহতদের প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছে। এসব সংস্থা ও সংগঠনকে সুষ্ঠু ও সংবেদনশীল তদন্তের মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আহ্বান জানিয়েছে অধিকার।

একই সঙ্গে শাপলা চত্বরে অভিযানের ঘটনা তদন্তে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য আবারও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.