আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি আর তনি হাটছি পাশা পাশি

অনুতাপ নিপীড়িত ব্যাথিত জনের শক্তিধরে অস্ত্রধারী শত সিপাহের

সিগলানে সবুজ বাতি জ্বলছে তবু কেন জানি রাস্তা পার হতে ইচ্ছে করছে না, দেখতে দেখতে লাল বাতি জ্বলে উঠল। আমার সাথের সবাই রাস্তা পার হয়েগেল, নিজেও বুঝতে পারছিনা কেন এমন করলাম। এই সিগলান গুলি হুব দ্রুত পার হয় আমি, সাধারনত অফিসের পাসে রাস্তার সিগলানটা এক দৌড়ে পার হতে হয়। দাড়িয়ে থাকলে বসে যদি দেখে ফেলে তাখলে আবার রাগ করে কিনা। কিন্তু কেন জানি আজ ইচ্ছা করেই মিস করলাম, আবার সবুজ বাতি জ্বল্ল কিন্তু আমি দাড়িয়ে থাকলাম।

হঠাৎ কি হল কেন এমন করছি কিছুই বুঝতে পারছিনা। ঘড়িতে সময় দেখলাম ৮টা বেজে গেছে। নাহ! এবার আর দেড়ি কারা যাবে না, এক দৌড়ে রাস্তা পার হতে হবে। - এই ভাবে কেউ সিগলানে দাড়িয়ে থাকে। পাশে তাকিয়ে দেখি তনি আমার পাশে দাড়িয়ে এই কথা বলছে।

কি উত্তর দেব কিছুই ভাবতে পারছিনা, শুধু বল্লাম। - আসলে এই ভাবে মিস করাটা ঠিক হয়নি, কিন্তু কেন করলাম বুঝতে পারছিনা। - কারো জন্য অপেক্ষা করছেন নাকি? - আরে না পরবাসে এমন কে আছে যে অপেক্ষা করতে হবে। মনে মনে আমি হুব আনন্দিত হচ্ছি এই ভেবে যে, আজ পাগলামি করে দেরি করা তে তনির সাথে পাশা পাশি হেটে যেতে পারব অফিস পর্যন্ত। কেন জানি তনিকে আমার খুব ভাল লাগে সে পাশে থাকলে সব কিছুই সাধারন মনে হয়।

যত সমস্যাই হোক পলকের মাঝে সমধান করতে পারি। মনের মাঝে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই আনন্দটা খুব বেশি প্রকাশ করা যাবে না তাখলে তনি আবার কিছু মনে করে কিনা। - আপনি প্রতিদিন এমন করে দুইটা সিগলান মিস করেন নাকি? - আরে না, আজকে কেন জানি মিস করতে ভাল লাগছিল তাই মিস করলাম। একটু হাসির ভঙ্গিতে বল্লাম হয়ত তুমি আসবে বলে এই দেড়ি। - আমি প্রতিদিন এই সময়ে ঠিক এই দিক দিয়ে আসি সুতরাং আমার জন্য যে অপেক্ষা করছেন না তা আমি নিশ্চিত হয়ত অন্য কারো জন্য।

সামনে সবুজ বাতি জ্বলতে আমরা রাস্তা ক্রস করছি, তনির পাশে হাটছি কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। অনেক পরিক্ষা করে নিশ্চিত হতে চাইলাম, আমি কি স্বপ্নে নাকি বাস্তবে। এবার নিশ্চিত হলাম আমি বাস্তবে। তনি আমাদের অফিসে জয়েন করেছেন প্রায় ২ মাস কিন্তু তেমন কথা বার্তা হয়না। আমি থাকি আমার কাজ নিয়ে আর তনি ওর কাজ নিয়ে, আমার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকলেও তনিকে নিয়ে প্রায় কল্পনার জগতে থাকি।

মেয়েটা কে নিয়ে ভাবতে আমার খুবভাল লাগে, প্রায় মেয়েটা দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রথম দিন যখন মেয়েটা অফিসে জয়েন করে, আমাদের এডমিন এক্সিকিউটিব সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সবার সাথে হাত মিলাচ্ছেন। অফিসে কেউ যখন নতুন আসে প্রথাম দিন সবার সাথেই পরিচয় পর্ব সারতে হয়, যেহেতু সিঙ্গাপুর সেহেতু ছেলে মেয়ে হাত মিলানোটা কোন ফ্যাক্টর না। আমিও সবার সাথে হাত মিলাই এতে কোন হারাপ লাগেনা, বাংলাদশে কোন কারনে মেয়েদের সাথে হাত মিলাতে গেলে শরীর দিয়ে কেমন যানি একটা চিকন গাম বাহির হতে থাকে কিন্তু এখানে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

মেয়েটা আমার সামনে আসল - - হাই! আমি তনি। এই বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিল, কনে যানি আমি হাত না বাড়িয়ে দুটা হাত একত্রে করে একপ্রকার নমস্কার ভঙ্গিতে বল্লাম। - হাই! আমি শরিফুল। মেয়েটা কেমন যানি একটু অপস্তুত হয়ে গেল, হয়ত সে ভাবে নি কেও এমন করে ফিরিয়ে দেবে। আর তনির মত মেয়েকে ফিরিয়ে দেবার মত বুকের সাহস কয়টা ছেলের আছে।

না আমি কোন সাহসের জোড়ে হাত না মিলিয়ে থাকিনি, এই কাজটা আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব না। তার উপর তনির মত মেয়ে যদি হাত বাড়িয়ে দেই তাখলে আমার জন্য মেঘ না ছাড়তে বৃষ্টি। কোম্পানির কাজের একরা জামেলায় পরছিলাম বলে মন মেজাজ কিছুই ভাল ছিলনা তাই হাত ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। মেয়েটা কিছুটা লজ্জায় নিজের হাতটা নামাল, ম্যাডাম তখন শুধু একটু হেসে চলে গেল। তনির সাথে হাটছি, সময় যেন খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

রাস্তাটা হাটতে আমার সময় লাগে ৬ থেকে ৭ মিনিট আজ মনে হচ্ছে ৬/৭ সেকেন্ড এর মধ্যেই শেষ হয়ে আসছে। লিফটে উঠে যেই অফিসের মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করছি, দু'এক জন আড় চোখে তাকাচ্ছে যেন আশ্চর্য কিছু দেখছে। আমার মনের মাঝে কি সুখ লাগছে কিছুতেই বুঝেতে পারছিনা, আমি আর তনি এক সাথে পাশা পাশি হেটে এসেছি এতটা রাস্তা। এমন সুখের জন্য কয়েকটা সবুজ সিগনাল মিস করলেই কি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।