কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..
আমার নামাজ পড়ার ইতিহাস অনেক পুরোন। যতটুকু মনে পড়ে জীবনে সর্বপ্রথম বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম অনেক ছোটবেলায়। এত ছোট ছিলাম যে, বাবা আমাকে তাঁর পাশে জোর করে বসিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তবুও জামাতের সাথে সাথে চেষ্টা করতে থাকলাম।
স্কুলে ভর্তি হবার কয়দিন পরেই মক্তবে ভর্তি করে দিয়েছিল বাবা।
মক্তবে যেতে হতো দুপুর বেলা, আর প্রতি শুক্রবারে যেতে হতো ভোর বেলা। প্রতি শুক্রবারে নামাজের প্রশিক্ষন দেয়া হতো। মক্তবের অপেক্ষাকৃত বড়রা মডেল নামাজের ইমামতি করত আর আমরা পেছনে তা অনুকরন করতাম। এরপর একটু বড় হবার পর মক্তব ঝাড়ু দেয়া ও ওস্তাদজীর ভাত এনে দেবার জন্যে আমাদের কয়েকজনকে বাছাই করা হলো। তখন একটু আগে মক্তবে আসতে হতো এবং তাই দুপুরের জোহরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া শুরু হল।
মাঝে মাঝে আসরের নামাজ পড়া হতো তবে নিয়মিত না।
সন্ধ্যায় একই বাসার একজন প্রতিবেশি আমাকে পড়াতে ডাকতেন। সেই পড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে মাগরিবের আযানের একটু আগে বেরিয়ে পড়তাম। দুএকজনকে ডেকে সামান্য সওয়াব বেশি কামিয়ে তারপর মাগরিবের জামাতে অংশ নিতাম। নামাজের পরে বসে যেতাম তাবলীগ জামাতের তালিম নিতে।
কিছুক্ষন জিকির আসকার করে হুজুরের জন্য খাবার নিয়ে আসার জন্যে কোন একজনের বাড়িতে রওনা দিতাম। খাবারের ক্যারিয়ার তাদের বাসায় রেখে এসে মসজিদের মেঝে মুছতাম একলাই। এশার নামাজ পড়ে রেখে আসা খালি ক্যারিয়ার ভরা অবস্থায় নিয়ে হাজির হতাম হুজুরের কাছে। সবশেষে বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে ঘুম, পড়াশোনা থেকে মুক্তি।
মক্তবে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবার পর অনেক বছর আর মসজিদের ধারে কাছেও যাওয়া হয়নি।
মাঝে মাঝে জুমার নামাজ পড়তে যেতাম এই যা। ক্লাস নাইনে ওঠার পর বাসা পরিবর্তন করে আসলাম অন্য জায়গায়। সেই বাসাটার সামনেই একটা মসজিদ ছিল। নতুন বাসার পাশেই একটা ক্লাসমেটকে প্রতিবেশি হিসেবে পেয়ে গেলাম। ওর সাথে আমার একটা মিল ছিল তা হল প্রচুর পরিমানে গল্পের বই পড়া।
ওর নাম অপু। ওর সাথে নিয়মিত জুমার নামাজ আদায় শুরু হল। রমজান এল, ওকে দেখলাম খুব নামাজী হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ওর সাথে আমিও নামাজ পড়তে যেতাম বিশেষ করে ফজর আর তারাবীর নামাজ নিয়মিত একসাথে জামাতে পড়া হতো। এর সাথে আরেকজনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
তিনি হলেন সেলিম মামা। তিনি আগে মফস্বলে থাকতেন, পরে ঢাকায় আমাদের বাসায় উঠলেন অনেকটা স্থায়ীভাবেই। তিনি নিয়মিত জুমার নামাজ পড়তেন, আর তিনি আমার সবচে প্রিয় মানুষ হওয়াতে তার সাথে আমারও মসজিদে যাতায়াত হতো বছরকয়েক ধরে।
পরের রমজানে ক্ষানিকটা উন্নতি হলেও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। রমজান চলে গেলেও এবার ধারাবাহিকতা বজায় রইল কেননা সামনে ছিল এস এস সি পরীক্ষা।
এস এস সি পরীক্ষার পরপরই বছর কয়েক ক্যান্সারে ভোগার পর মারা গেলেন সেলিম মামা। সেই উপলক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে গেলাম, মৃত্যুর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেও প্রায় এক মাসাধিক সময় গ্রামে ছিলাম। সেখানকার আবহাওয়াটাই যেন কেমন পবিত্র। ঘুম কোন এলার্ম ঘড়ি ছাড়াই ফজরের আযানের সাথে সাথেই টুটে যেত আর নানা বাড়ির পাশের মসজিদে ছুটে যেতাম। তারপর শুরু হতো গ্রামের সবাইকে কিভাবে বিরক্ত করা যায় তার বিভিন্ন মহড়া।
এখান ওখানে গ্রামের বিভিন্ন ধরনের সঙ্গী সাথিদের নিয়ে একেক সময় একেক দুষ্টুমী চালিয়ে যেতাম। সুর্য মাথার কাছাকাছি এলে প্রায় কোমর পানির ময়লা পুকুরে নেমে পড়তাম। সাঁতার শেখার চেষ্টা করতাম। পুকুর হতে উঠে কলে আরো ভালভাবে গোসল করে দৌড় দিতাম জোহরের নামাজের জামাতে। বিকেলে আসরের নামাজ, সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজ আর রাতে এশার নামাজ পড়া হতো দুষ্টুমীর ফাঁকে ফাঁকেই।
ঢাকায় ফিরে নামাজের ধারাবাহিকতা আবার নষ্ট হয়ে গেল, অনিয়মিত ভাবে বাসায় বা মসজিদে যেতাম তখন। কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন পরই রমজান এল। সে রমজানে আবার ধারাবাহিকতার ব্যবস্থা হলো। আবারও রমজানের পবিত্র আভায় আমি নিয়মিত নামাজে কিছুটা অভ্যস্ত হলাম। তবে রমজান যাবার পর স্বভাবতই নামাজের প্রতি আগ্রহে আবার ক্ষানিকটা ভাটা পড়ল।
শুধু বাসায় নামাজ পড়তে লাগলাম। বাসার বাইরে গেলে বাদ।
উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে উঠার পর আবার আরেকটা রমজান এল। এবারে প্লান করলাম যে করেই হোক নামাজে আমাকে অভ্যস্ত হতেই হবে। প্ল্যানমত কাজ করলাম, পুরো মাসে আমার মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাজা হল।
এবার রমজান গেলেও নিয়মিত ফজরের নামাজ সহ অন্যান্য নামাজ গুলো পড়া হতে লাগল। আগে শুধু বাসায় নামাজ পড়তাম, কিন্তু সেবার থেকে বাসার বাইরে গেলেও নিকটবর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করে নিতে শুরু করলাম। সেই রমজান আমার জীবনের গতিপথই পরিবর্তন করে দিল। আর আগের প্রতি রমজানেই আমার টার্গেট থাকত পুরো কোরআন একবার খতম দেয়া। কিন্তু শুধু খতমে আমার মন ভরত না, তাই সেই রমজানে আমি অর্থসহ কোরআন পড়ার চেষ্টা করেছিলাম।
সেই চেষ্টা আমাকে কোরআনে প্রতি অনেক দুর্বল করে দিল। নিয়মিত কোরআন অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ পড়তে লাগলাম। তার পাশাপাশি হাদিস অধ্যয়নও নিয়মিত হয়ে গেল। ইসলামী সাহিত্যগুলো অধ্যয়ন করতে থাকলাম সহায়ক হিসেবে। এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হবার পর থেকে এই বিভিন্ন ধরনের অধ্যয়নের মাত্রা ক্ষানিকটা বেড়ে যায়।
আর তখন হতে আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ কাজা করা ছেড়ে দেই। আর তার পাশাপাশি নামাজ শুধু পড়া নয় কায়েমের জন্য চেষ্টা করা শুরু করে দেই। এরপর আরো দুটো রমজান এসেছে। রমজানের রহমত আমাকে আরো পরিপূর্ন করেছে।
সারা বছরে গড়ে ওঠা আলসেমীকে দুর করে দেয় রমজান।
আমাদের উচিত রমজানের রহমতকে পুরোপুরিভাবে গ্রহন করার চেষ্টা করা আর এর মাধ্যমে নিজের অপূর্নতাগুলোকে পুরন করে নেয়া। আর বিশেষ করে যারা নামাজে নিয়মিত নন তারা রমজানকে প্রশিক্ষনের সময় হিসেবে গ্রহন করে নামাজে নিয়মতি হবার চেষ্টা করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।