আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক জোড়া জুতো কিনবো (গ্যারান্টিসহ - সর্বোচ্চ ক্রয়মূল্য ৩০০০ টাকা)



কিনেছি জুতো, কেতাদুরস্ত । অথচ - বয়স মাত্র দু’মাস, তাতেই নাভিশ্বাস । ক্ষয় নয়, বরং খসে পড়া, চাই ক্ষতিপূরণ বা স্থায়িত্ব-বীমা । কবি নই । ক্লাস’টুর অপটু স্কুলছাত্র যেমন ছন্দ মেলানোর চেষ্টা করে, মাঝে মধ্যে সে রকম চেষ্টা করি ।

আজ করলাম শোকে, মনের দুঃখে । এবারের জুতো-জোড়া কিনেছি মাস দুয়েক আগে । খানিকটা গবেষণা আর সময় ব্যয়ের পর । কারণ আগের জুতোর মেয়াদ ছয মাসও স্থায়ী হয়নি । যতই দিন যাচ্ছে, কেনা জুতোর স্থায়িত্ব ততোই কমছে ।

প্রতি পদক্ষেপেই যদি সাবলীলতা না থাকে, তাহলে আত্মবিশ্বাসটা আসবে কোথা থেকে? জুতোর জন্য বাজেট বরাদ্দ রেখেছিলাম ২,৫০০ টাকা । হয়তো ভাল মানের জুতোর জন্য এতটুকু বরাদ্দ যথেষ্ট নয় । তবে আমারও তো ক্রয়ক্ষমতার একটা মাত্রা আছে !! বিশ্বাস ছিল, এই দামে জুতো পাবো 'ফার্স্ট ক্লাস' । বিশ্বমন্দা চলছে । চামড়ার দাম কমেছে কয়েকগুণ ।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য 'চামড়া শিল্প' নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন হয় না । জুম্মাবারে নিয়মিত মসজিদে গেলেই হয় । কোরবানী ঈদের পর থেকেই মসজিদ কর্তৃপক্ষ বেশি বেশি করে মুক্ত-হস্তে দান করার কথা বলছেন । কারণ, মূল আয়ের উৎস কুরবানীর চামড়ার বাজার দর এবার স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ম । সেই হিসেবে ভাবলাম, এবার তো জুতোর দাম নিশ্চয়ই কমবে ।

হায় ! আশা হলো দুরাশা । বাটা-র বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, কাঁচাবাজারের কাঁচামরিচের মতো জুতোরও অগ্নিমূল্য । পছন্দের জুতোর দাম ৫০০ টাকা । গন্ডারের চামড়ায় তৈরি কিনা তা অবশ্য জিজ্ঞাসা করা হয়নি । বুঝলাম, এ উচ্চমূল্যের প্রতিদান ক্রেতা-সাধারন পাবেন না ।

বছর শেষে শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন তিন অংকের 'ডিভিডেন্ড'-এর মাধ্যমে । এপেক্সও একই অবস্থা । মানে আর দামে কোনটাই জুতসই মনে হয় না । কয়েক জোড়ার মান মনে ধরলেও দামের উত্তাপ অনেক বেশি । অবশেষে, আড়াই হাজারের মধ্যে বাটা-র এক জোড়া 'টার্গেট' করলাম ।

ভাবলাম, কেনার আগে বাইরের বাজারেও একটু ঢু মারি । ইটালীর জুতো কেনার সাধ্য নেই । আর কোরিয়ান-থাই-চাইনিজ জুতো কেনার আগ্রহ নেই । এর আগের জুতো জোড়া থাই জেনেই কিনেছিলাম । তাও দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল 'বসুন্ধরা' থেকে ।

সে জুতো ছয় মাসও না টেকায় আবার 'ব্রান্ড'-এ প্রত্যাগমনের ভাবনা । এলিফ্যান্ট রোডের প্রথম দোকানটায় ঢুকেই আসলে ফাঁদে পা দিলাম । বলাবাহুল্য, সে ফাঁদ এড়ানোর মতো যথেষ্ট মেধাবী এই অধম নয় । আটশত থেকে শুরু করে আট হাজার টাকা দরের জুতোর 'ট্রায়াল' দেয়া শেষ । এবার তো পছন্দের কথাটা জানাতে হয় ।

'হ্যাজার্ড' ব্র্যান্ডের এক জোড়া জুতো পছন্দ হলো, 'কান্ট্রি অব অরিজিন' নাকি কোরিয়া । দোকানদার ভাই দাম হাঁকলেন ৩,৬০০ টাকা । আমার নির্লিপ্ত জবাব, ১,৮০০ টাকা । বিক্রেতার ভাবখানা দেখে মনে হলো, আমি যেন তাকে চপেটাঘাত করেছি । তবুও পরম সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে তিনি ২,০০০ টাকা প্রস্তাবমূল্যের জুতো গছানোর সংকল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ।

কথা না বাড়িয়ে পা বাড়ালাম বাটা-র পথে । জুতোর দামও সেই সাথে খসে পড়লো তারকা পতনের চেযেও দ্রুততায় । ৩,৬০০ টাকা প্রস্তাবমূল্যের জুতো ১,৮০০ টাকায় বেচতে বিক্রেতার এখন আর কোন আপত্তি নেই । কি আর করা । স্বভাবসুলভ ভাবেই মনো হলো, 'ইস্‌, দামটা আসলে ১,২০০ বলা উচিত ছিল' ।

দামে ধরা খেলেও মানে হয়তো ধরা খাইনি, বিশ্বাস ছিল সেটা । নাহ্! আয়ু মাত্র দু'মাস স্থায়ী হলো । অর্ধেক আয়ুষ্কালের সমাপ্তি ঘটেছে, গত ২৮ এ জুলাইয়ের বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় । আর চুড়ান্ত মৃত্যুঘন্টা ঘটেছে গতকালের বৃষ্টিতে । বগলদাবা করেও বাঁচাতে পারিনি ।

অথচ শৈশব-কৈশোরে পরিহিত জুতোগুলো কতই না ব্যবহারপোযোগী ছিল ! কত অযত্নে-অবহেলায় ব্যবহার করতাম । রোদ, বৃষ্টি, ধূলো, কাদা কিছূতেই বাধ মানতাম না । টিকে যেত, তলাটা ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত । কমপক্ষে এক বছরতো বটেই । শুধু বাটা নয়, জাম্প কেডস্, বেইলী কেডস্, জাগুয়ার, এপেক্স ।

সবগুলোই উনিশ-বিশ মাত্রায় ভাল ছিল । আর এখন ?? ৬,৮০০ টাকা স্কেলে চাকুরী করে দুই মাস অন্তর জুতো কেনা সম্ভব নয় । সে জুতোয় পা ভরলেও পেটটাকে হয়তো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে । জুতোর স্থায়িত্ব হ্রাস পাবার খানিকটা দায় সরকারেরও । নিয়মিত জুতো-যুগলকে যদি পানিতে হাবুডুবু খেতে হয়, তবে আয়ু তো কিছুটা কমবেই ।

আছে এবড়ো-থেবড়ো রাস্তার ভোগান্তি । মুড়ির টিনে সহযাত্রীদের পায়ের চাপা । তাই সরকারের কাছে মহার্ঘ-ভাতার মতো পাদুকা-ভাতা দাবী করা অযৌক্তিক হবে না । পাদুকার স্থায়িত্ব-বীমার ব্যবস্থাও বীমা কোম্পানীগুলোর জন্য ভাল ব্যবসা হতে পারে । কর্পোরেট চুক্তি, 'বাটা বনাম ঢাকা ইন্স্যুরেন্স' ।

দুঃখ-ক্ষোভ-অনুভূতির কথা লিখলাম । আরেক জোড়া জুতো কিনবো । এবার বাজেট ৫০০ টাকা বাড়িয়েছি । ৩,০০০ টাকা দামের মধ্যে মানসম্মত জুতো চাই । কমপক্ষে ১ বছর স্থায়িত্বের নিশ্চয়তাসহ ।

ব্লগার বন্ধুরা পরামর্শ দিন । দুএকজন জুতো ব্যবসায়ী ব্লগার বন্ধুও থাকতে পারেন । তারা হয়তো বলতে পারবেন, ভাল জুতো চেনার উপায় কি? তবে গামবুটের পরামর্শ পরিত্যাজ্য ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।