আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই পাহাড়ির ভিতর সামরিক সম্পর্ক বলতে কি বুঝায়?



আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস। এই দিবসটি সব আদিবাসীদের জন্য নাকি নির্দিষ্ট কিছু আদিবাসীদের জন্য, যাদের যোগ ক্ষমতার সাথে তাদের জন্য? ভাবছেন এটা কি ধরনের প্রশ্ন? একটা ঘটনা এই প্রশ্নের উদয় ঘটিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল মানে ৮আগষ্ট শনিবার রাত্রে, ৮টার দিকে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান চরছিলো নাটমণ্ডলে। থুইকা নামে আমাদের এক পাহাড়ি বন্ধু অনুষ্ঠানস্তলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে ধাওয়া খেলো। কারা ধাওয়া করলো? না, ঢাকার রাস্তায় তাদের পাহাড়ের মতো বাঙালিরা ধাওয়া করেনি।

ধাওয়া করেছে তার মতোই পাহাড়ীরা। আরেকটু ব্যাখ্যাসহ বলি। তথাকথিত শান্তিচুক্তির কারনে পাহাড়ীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেলো। যারা শান্তিচুক্তিকে সমর্থন করেছিলো তারা জেএসএস (জনসংহতি সংস্থা) আর যারা সমর্থন করতে পারেনি, চুক্তিকে স্বার্থবিরোধী মনে করেছিলো তারা ইউপিডিএফ এদের দুই দলেরই সমর্থনে রয়েছে বিভক্ত দুই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ যার একটা পরিচিত জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আর ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নামে। থুইকা চাকমা ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এর কর্মী।

(সরকার) আর জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তাকে ধাওয়া করলো। দেশের খ্যাতনামা অনেক বুদ্ধিজীবীদের আশেপাশে ঘুরেফিরে বেড়ানো প্রগতিশীল দীপায়ন খীসার উপস্থিতিতে কিছু পাহাড়ী ছেলে পথ আটকে বললো (চাকমা ভাষায় গালিসহ): 'আদিবাসী ফোরামে যোগ দিস না কেনো? তোকে এখানেই মেরে ফেলবো, ছেলেগুলোকে নস্ট করে দিচ্ছিস? ইউপিডিএফ তোদের এসব শেখাচ্ছে?' থুইকা চেয়েছিলো সেখান থেকে বিনা বাক্যব্যয়ে চলে আসতে। তাকে কিছুদিন আগেও একবার ঢাবির লাইব্রেরীর সামনে এই দলটিই পিটিয়েছিলো। আবার তারা তাকে ধাওয়া করলে সে মসজিদে আশ্রয় নেয় এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ৫ সংগঠনের দুটি দল প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) ও সংস্কৃতির নয়া সেতুর বন্ধুদের ফোন করে ডাক দেয়। এই দুইটি দলের সাথে থুইকাদের দলীয় জোট রয়েছে।

এই বন্ধু সংগঠন দুটি আসার পর থুইকাকে বারবার মারার চেষ্টা করার কারণ জানতে চাইলে জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এর পক্ষ থেকে বলা হয়---- আমাদের সাথে ওদের সামরিক সম্পর্ক। এটা এভাবেই চলবে। এই কথার অর্থ কি দাঁড়ালো তা যদি সামরিক বিশ্লেষকদের কেউ বলে দেন। যে দীপায়ন খীসা, সন্তু লারমাদের শান্তির বাণী পাহাড়ে বয়ে বেড়াচ্ছে তা যদি এই বাক্যটা দিয়েই বুঝার চেষ্টা করি তাহলে নিশ্চয় আমার চেষ্টাকে কেউ ভুল বলবেন না। যুক্তিটা আরেকবার বুঝার চেষ্টা করি চলুন- সরকার পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে শান্তিচুক্তি করলো (যার কোন আশ্বাসই বাস্তবায়িত হয়নি, সেনাক্যাম্প বেড়েছে বই কমেনি।

) সেই চুক্তিকে সমর্থন জানালো পাহাড়ের একাংশ অর্থাৎ জেএসএস সেই জে এসএস সমর্থিত কর্মীরা মনে করে অন্য সকল পাহাড়ীদের সাথে তাদের সামরিক সম্পর্ক অতএব যুক্তিবিদ্যার যুক্তি বলে, সরকার আর জেএসএস একই কথা। সরকার যেমন বরাবর এই পাহাড়ীদের বাঙালী হয়ে যেতে বলেছে জেএসএসও নিজেদের লেজ কাটিয়ে অন্য সকল পাহাড়ীদের লেজ কাটানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে। একটু হালকাভাবে বলার চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু সত্যি যদি এই হয় জেএসএস অবস্থান আর এটা যদি হয় দীপায়ন খীসাদের মতো কিছু মুখোশধারী বুদ্ধিজীবীদের সহযাত্রীদের সামনে তাহলে সেইসব বুদ্ধিজীবীদের সতর্ক হওয়ার আছে যারা এই মানুষগুলোকে অধিকার আদায়ে সহায়তা করতে চায় 'সততা'র সাথে। ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কাছ থেকে ঘটনা শুনে, দীপায়ন খীসার উপস্থিতির কথা শুনে সরাসরি দীপায়নের কাছে টেলিফোন করে পরিস্থিতি জানতে চাইলে সাফ জবাব পাওয়া যায়, 'কে, কোথায় কি অভিযোগ তুললো তা দেখার টাইম নাই, আমি আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছি। ' তার এই উত্তর আমি উদ্ধৃতি আকারে ব্যবহার করতে পারি কিনা জানতে চাইলে তিনি আবারো বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি।

এক্কেবারে বড় 'নেতা'দের মতোই কথা বটে। দীপায়নের এই আত্মবিশ্বাসকে আমি শ্রদ্ধা করতে চাই। পাশাপাশি এটাও দোয়া করি তার জন্য, 'সামনে ককনো যেনো তিনি আবারো এই 'বাঘের বাচ্চা' স্বভাব থেকে সরে এসে ইদুরের গর্তে মুখ লুকানোর পরিস্থিতিতে না পড়েন। তার এই 'গায়েবি দাপট' অক্ষুন্ন থাকুক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।