আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ নিসফে শাবান বা শবে বরাত - এরাতে বুজুর্গ গণ যে ভাবে ইবাদত করতেনঃ

সুবহানাহু তায়া’লা ওয়ারাআল ওয়ারাই ছুম্মা ওয়ারাআল ওয়ারাই-জ্ঞান ও অনুভূতি যে পর্যন্ত পৌছে, আল্লাহতায়ালার জাতে পাক তার পরে, বরং তারও আরো পরে।

মাদারেজুন নবুওয়াত-শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ), তৃতীয় খন্ড শাবান চান্দ্রমাসের মধ্যবর্তী রাতে রসুল আকদাস স. রাত জেগে নামাজ আদায় করতেন। আমাদের দেশে এই রাত্রিকে বলা হয় শবে বরাত। শাবানের মধ্যবর্তী রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে মর্যাদার দিক দিয়ে ‘শবে কদর’ রাত্রির পরই এই রাত্রির মর্যাদা। হাদিস শরীফে চারটি রাত্রিতে আল্লাহ পাক তাঁর বিশেষ রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন- ঈদুল আযহার রাত্রি, ঈদুল ফিতরের রাত্রি, শাবানের রাত্রি এবং আরাফার রাত্রি।

শাবানের রাতে ইবাদত করা এবং দিনে রোজা রাখার বিষয়টি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। শাম দেশের তাবেয়ীগণের মদ্যে খালেদ ইবনে মা’দান, নোমন ইবনে আমের এবং মাকনুল এই রাত্রে অধিকর ইবাদত করতে সচেষ্ট থাকতেন। তখন তারা উত্তম পোশাক পরিধান করতেন, আগর বাতি জ্বালাতেন, সুরমা ব্যবহার করতেন এবং মসজিদে গিয়ে ইবাদত করতেন। তবে হেজাজ ও মদীনার আলেমগণ তাঁদরে অনুসরণ করতেন না। তাঁরা মনে করতেন, এই রাতে মসজিদে সমবেত হয়ে ইবাদত করা বেদাত।

শাম দেশের ইমাম আওজায়ী এই রাতে একা একা নামাজ পড়াকে মকরূহ মনে করেন নি। রসুল পাক স. থেকে আমল কিয়ামে লাইল, দীর্ঘ সেজদা এবং জান্নাতুল বাকীর কবর বাসীদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থণা-এগুলো ছাড়া অন্য কোন প্রকার ইবাদতের কথা বিশুদ্ধতার স্তর পর্যন্ত পৌছেনি। মাশায়েখগণের অজিফার গ্রন্থসমূহে এই রাতে একশ’ রাকাত নফল রামাজ পড়ার কথা রয়েছে। প্রতি রাকাতে দশবার করে সুরা এখলাস পড়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে মোহাদ্দেছগণের নিকট এরকম আমল বিশূদ্ধ সূত্রে সমর্থিত নয়।

শায়েখ আবুল হাসানের বর্ণনায় রয়েছে আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী রা. বলেছেন, আমি রসুল আকরাম স.কে শাবানের রাতে চৌদ্দ রাকাত নামাজ পড়তে দেখেচি। সালাম ফিরানোর পর তিনি স. চৌদ্দবার সুরা নাস এবং একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করেছেন। তারপর পাঠ করেছেন ‘লাক্বদ জায়াকুম রসুলু ম্মিন আন্ ফুসিকুম ’ এই আয়াতটি। এই আমল সম্পর্কে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি স. আমাকে বলেছিলেন, যে এরকম আমল করবে সে বিশটি মকবুল হজ এবং বিশ বৎসরের মকবুল রোজার সওয়াব লাভ করবে। আর পরদিন রোজা রাখলে পাবে দুই বৎসরের রোজা রাখার সওয়াব।

মোহাদ্দেছগণ এই হাদিসের সূত্র সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন। ইমাম বায়হাকী বলেছেন, প্রকাশ থাকে যে হাদিসটি মারফু। ওয়াল্লাহু আলাম। আমাদের দেশে শবে-বরাতের রাতে আলোক সজ্জা ইত্যাদি করার যে রীতি রয়েছে তা শরিয়তসিদ্ধ নয়। এ সকল রীতি হিন্দুদের দেওয়ালী পূজার অনুকরণ অথবা অগ্নি পূজকদের অসৎ রীতির অনুরূপ।

গুনিয়াতুত্ব-ত্বালেবীন- ১ম খন্ড হযরত মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে এক শত রাকয়াত নামায আদায় করা সম্বন্ধে বর্ণিত রহিয়াছে। এই নামাযে মোট এক হাজার বার সূরা আহাদ পড়া হয় । অর্থাৎ প্রত্যেক রাকয়াতে দশবার করিয়া সূরা আহাদ (ইখলাস) পাঠ করিবে। এই নামাযকে নামাযে খায়ের বলা হয়। প্রাচীন কালের বোযর্গগণ এই নামায আদায়ের জন্য একস্থানে সমবেত হইয়া জামাতের সাথে আদায় করিতেন।

হযরত হাসান বছরী (রহঃ) তিনজন সাহাবীর নিকট হইতে বর্ণনা করেন, তাহারা বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করিয়াছেন, এই রাতে নামায আদায়কারীদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা সত্তুরবার দৃষ্টিপাত করিয়া থাকেন এবং প্রত্যেকবার দৃষ্টিতে তাহার সত্তরটি করিয়া মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। সর্বাপক্ষা কম ফজীলতের কথা এই রাতে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা লাভ করা। উল্লেখ্য যে, মাহে শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রে এই নামায আদায় করা মুস্তাহাব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।