আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

HSC পাশ পোলাপাইনের জন্য কিছু অজনপ্রিয় কথা (চেনাজানা ধরা খাওয়াদের কাছ থেকে সংকলিত)

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!

আবেগ আর হুজুগ নির্ভর ভর্তির খেসারত দলবদ্ধ পথ চলার এখানেই শেষ। এরপর ছোট ছোট দল। তারপর পুরো একা। কায়দামত জায়গায় পা রাখতে পারলে তেমন কোন দু:শ্চিন্তা ছাড়াই স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে পদ পদবী জুটে যাবে। আর বেহুদা জায়গায় পা রেখে কাদায় আটকালে কারো উদ্ধারের সাধ্য নেই।

একদার ক্লাশমেটরা, ইভেন দুর্বল বন্ধুরা, অনেক দুরে চলে যাবে। ঝাপসা দৃস্টি সীমা পেরিয়ে দিগন্তের ওপারে। আর নিজে রইলাম বটতলায়- এ দশা। দেশীয় উদাহরন দিই। সমমেধার বন্ধু অখিল ও নিখিল।

নটরডেম থেকে স্টার মার্কস। বিভাগ বিজ্ঞান। অখিলের ভাবনা চাকরির বাজার কেন্দ্রীক। ঢুকে পড়ল আইবিএর বিবিএ প্রোগ্রামে। আর নিখিল বুয়েট বলতে অজ্ঞান।

হেভী ফাইট দিয়ে চান্স পেল মেটালার্জি। দেখা হয়। কথা হয়। কিন্তু সংগত কারনে আলাদা পথ চলা। ৪ বছরেই অখিলের প্রোগ্রাম শেষ।

ব্যাচের মাঝারী গোচের ছাত্র হলেও চাপাবাজিতে পারঙ্গম অখিল ইন্টার্নশীপ শেষ হবার আগেই BBA (IBA) দের জন্য বাঁধাধরা চাকরীগুলোর ১টি পেয়ে যায়। যেমন- Management Trainee at Unilever এখানে ইন্টারভিউর ডাকটা সে মাগনাই পেয়েছে। আর কম্পিটিশন করেছে শুধু ৩০ জনের মত ক্লাশমেটের সাথে। ব্যাস! বন্ধু নিখিলের আরো ১টি লেভেল বাকি তখনো। যাহোক অখিলের দেড় বছর পর B.Sc Eng (Metal.) Certificate হাতে নিখিল এল বাজারে।

মাঝারি গোচের রেজাল্ট। পত্রিকার পাতা, বিডিজবস, এখানে ওখানে যোগাযোগ। না যুৎসই কিছু হয়না। মাঝে মাঝে ভাবে আমেরিকায় চলে যাবে। যা আছে কপালে! বিক্ষিপ্ত ভাবনার মাঝে স্বগোত্রীয় অনেকের সাথে হঠাৎ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বসে MBA Program (IBA) এ।

হয়েও যায়। শুরু হল আরেক দফা ২ বছর মেয়াদী দৌড় ঝাঁপ! সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা হয় লাস্ট সেমিস্টারে। প্রাণবন্ধু অখিল হাজির একদিন ক্লাশে। এবং ক্লাশমেট হিসেবে। আবারো।

তবে এখন তার হাতে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা। আছে ম্যানেজার হিসেবে। লিভারেই। আইবিএতে পার্ট টাইমে এমবিএতে এনরোল করেছে। বেশ কিছু ওয়েভার পেয়েছে।

তাই ২ টি কোর্সে নিখিলের কোর্সমেট। আরো ৬ মাস গেল। নিখিল ইন্টার্ন বা চাকরি খুজঁছে। নোটিশবোর্ড, পত্রিকার পাতা, বিডিজবস, এখানে ওখানে খোজ লাগানো সবই চলছে। তেমন কস্ট হয়নি।

কাকতালীয় ভাবে ইউনিলিভারেই কল পেল নিখিল। Management Trainee Supply Chain. খুবই ভাল চাকরি। আরো ৬ মাস পর, বাল্যবন্ধু অখিল ও নিখিল একই অফিসেই কাজ করছে। পার্থক্য হল একজন Sr Manager আরেকজন Management Trainee!! যাহোক এ লেখা কোন প্রতিষ্ঠানকে বড় বা ছোট করার জন্য নয়। পথ কিভাবে আলাদা হয় তা বুঝানো।

বুয়েট, বিআইটি, মেডিক্যাল, আইবিএ, প্রাইভেটে বিবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স, ঢাবি ইত্যাদি শিক্ষাঙ্গন বা শাস্ত্রের প্রতি বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপক হুজুগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবেগ, হুজুগ ও অর্থলোভী শিক্ষাবেনীয়াদের অতি প্রচারণায় ব্যাপক গবেষনা না করেই নামের পিছে পাগল হয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে পোলাপাইন ও মা-বাবা রা। সেটার ভিন্ন একটা ভাবনা এখানে দিলাম। চাকুরে, প্রফেশনাল না ব্যবসায়ী হব? এ প্রশ্নটার উত্তর এখনই জানা ভাল। উত্তরটা যদি হয় চাকরি তাহলে Aquatic Biology গোছের কিছুর কি কি চাকরি বাজারে কত টাকা বেতনে বিদ্যমান তা জেনে পা বাড়ানো ভালো।

আর যে কোন বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতকদের চাকরিই যদি হয় উত্তর তাহলে হাদাঁরামের মত এত কঠিন বিষয় পড়ার দরকার কি? ইসলামের ইতিহাসে ভর্তি হয়ে, ব্যাপক তাসপিটিয়ে সেকেন্ড ক্লাস পেলেই তো ল্যাঠা চুকে গেল! সেসব চাকরির পরীক্ষায়তো ক্লাস সেভেনের উপরের কোন প্রশ্ন থাকেনা!! আর প্রফেশনাল মানে আইন, চিকিৎসা, একাউন্টেন্ট, স্থপতি- এসব পেশা। অর্থাৎ ছোট খাট ১টা চেম্বার দিয়ে যেখানে মক্কেল ধরা যায়। Economist এর কাছে কোন মক্কেল আসার যেহেতু কোন চান্স নাই সেহেতু এ লাইনে স্বাধীন প্রফেশনাল হবার কোন মানে নাই। ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য অনেক ইচ্ছা, সাহস, একাগ্রতা, ঝামেলাপুর্ন রুটিন হীন জীবন মেনে নেয়া, প্রাকৃতিক মেধার ও কিছু পুজিঁর দরকার আছে। প্রয়োজনে উপোস থাকা, ফ্লোরে ঘুমানো, এক কাপড়ে ২/৩ দিন থাকা, মানুষের দরবারে লাথি গুতা খাওয়া এসবও বাধ্যতামূলক।

আগে ভাগে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে গেলে ব্যবসায়ী হওয়া কঠিন বৈকি! বেশী ভাল ছাত্রের জন্যও ব্যবসায়ী হওয়া কঠিন। তবুও যেকোন বিষয়ে স্নাতক পড়া যেতে পারে। SAT দিয়ে বিদেশে যাইনা কেন? ইংরেজী মাধ্যমের পোলাপান এ লাইনে বেশ অগ্রসর। A level শেষ হতে না হতে SAT (Scholastic Aptitude Test) ও TOEFL দিয়ে ফেলে। ১০০% স্কলারশিপ নিয়েও অনেক ছেলেমেয়ে আমেরিকার প্রথম সারির কলেজগুলোতে স্নাতক করছে।

৫০%, ৭৫% হলেও মন্দ কি? সমমেধার বাংলামাধ্যমের বন্ধুদের মগজে তখনো বিষয়টা ঢুকছেইনা। ঢুকছে অনেক পরে। দাড়ি মোচে পাক ধরার পর। ২৮ বছর বয়সে। নিছক বয়সের কারনে যখন অনেক কিছুতে পিছিয়ে পড়তে হয়।

বিষয় ও প্রতিস্ঠান দুটো ভিন্ন ব্যাপার অর্থনীতি খুব ভাল একটি বিষয় হলেও সেটা পড়ার জন্য সব প্রতিস্ঠান ভালো না। বুয়েট একটি নামকরা প্রতিস্ঠান হলেও সেখানকার সব বিষয়ের চাকরির বাজার একনা। এ অমোঘ সত্যটা না বুঝে কেরানিগন্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়া শুরু করা কোন কাজের কথা না। বাপের টাকা থাকলেই তা পানিতে ঢালার মানে নাই। চাকরির বাজারে যথাক্রমে আপনি কোন সাবজেক্টের গ্রাজুয়েট? গ্রেড কত? কোল্থেকে? ও চেহারা সুরৎ, বাৎচিত, ভাবচক্কর, মামা, চাচা, খালু সবই গুরুত্বপূর্ন! সব মিলিয়ে ফিট হওয়া আর কি! আর লেখাপড়া না করাও একটা বেটার অপশন যে ক'জন ইন্টার পাশ করছে তাদের সবাইকে কেন স্নাতক পর্যায়ে পড়তে হবে তা আমার বোধগম্য না! মধ্যম ও তদনিম্ন ফলাফলধারীদের এখানেই ইতি টানা উচিৎ।

গরু, ছাগল, হাসঁ, মুরগী সবাইকে মাস্টার্স বানানোর জন্য ঘাটে ঘাটে কলেজ (বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ!!) খোলা রাস্ট্রীয় অর্থের চূড়ান্ত অপচয়। বরং সম্পুর্ন কর্মমুখী কোন ট্রেনিং/ডিপ্লোমা করাই শ্রেয়। সবার ভবিষ্যৎ আরো উজ্জ্বল হোক!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।