যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
অতন্দ্রিলাকে নিয়ে বসার জন্য ধানমন্ডী এম্পোথিয়েটার বা রবীন্দ্র সরোবরের আশপাশটা হচ্ছে সুহাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। লেকের পাশে কংক্রিটের রাস্তা ধরে হেঁটে হেঁটে সুধাসদনের পাশের আয়ল্যান্ডে গিয়ে কোনদিন বসে। শীতকালে পানি অনেক কম থাকায় লেকের পাড়ে কিছুটা ঘাস জন্মেছে। সেখানে বসে দেখা যায় লেকের জলে গাছপালা আর এপার্টমেন্ট হাউসগুলোর প্রতিবিম্ব। সুহাদের কাধে তার চুল জমতে থাকে, অদ্ভুত মাতাল গন্ধ, সুহাদ বুঁদ হয়ে থাকে।
বলে, কি ভাবছো?
এখন কতই সহজ। অথচ আগে নিজেকে খুলে বলোনি কখনও। একটা সময়ে কত চেয়েছি তুমি হয়তো আমার কাঁধে মাথা রেখে বলবে ভালবাসার কথা। কিন্তু তখন শুধু কেরিয়ার নিয়ে কথা বলা ছাড়া তোমার আর কিছুই করার ছিল না! বড় অদ্ভুত তালগোল প্যাচনো ছিল সে দিনগুলি।
সুহাদ বলে, তুমিও তো কখনও বলোনি! অতন্দ্রিলা ম্লান মুখে বসে থাকে।
বলে, আমি তোমাকে অবলম্বন ভাবতাম, মনে হতো তুমি ছাড়া আর কোন গন্তব্য নেই! কিন্তু তোমার নিস্পৃহ সংগ আমাকে ভাবাতো, তুমি বুঝি স্রেফ একজন ওয়াইফ খুঁজছো! বড় দ্বন্দ্বে ছিলাম!
তোমার আর আমার একটা বাবু হবার স্বপ্ন দেখি। কেমন হবে ওর নাকটা!
অতন্দ্রিলা বলে, আমার মনে হয়, বাবুটাকে শুধু চেয়ে চেয়েই দেখবো। দেকতেই থাকবো। নাকটা তোমার মতই হতো। ঠ্যাপসে!
আমার নাক ঠ্যাপসে?
বাতাসের চকমকি ছুটে যায় অতন্দ্রিলার হাসিতে।
কুটুস করে ভেঙে ফেলে বাদাম। উত্তরে বলে, আচ্ছা আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কি কমেছে?
হয়তো একটু কমেছে, নয়তো একটু বেড়েছে। সুহাদের হেয়ালিপূর্ণ উত্তর।
অতন্দ্রিলা অভ্যস্ত। জিজ্ঞেস করে হেসে, কেন বাড়বে বা কমবে?
যেভাবে তুমি কমাবে বা বাড়াবে।
ঠিকমত বলো, তোমার কি কমেছে? অতন্দ্রিলা জানতে চায়।
আমার সবসময় বাড়তে থাকে।
কতটুকু বেড়েছে?
গত বৈশাখের তুলনায় ডাবল!
ওর বাপস! আমার কিন্তু কমেছে!
কমারই কথা! অনেকদিন আর আগের মত ফোন করো না, রাতে তো কথাই বলতে চাও না, ঘুমিয়ে যাও!
নতুন চাকুরী, এত ব্যস্ত থাকি, ঘুম এসে যায় সোনা!
কৈফয়েত দিচ্ছো কেন? এর অর্থ হচ্ছে ভালোবাসা কমেনি বরং বেড়েছে তোমার। সহাস্যে সুহাদ বলে।
কিভাবে বুঝলে?
এই যে তুমি ফোন না করার কারণ হিসাবে ভালোবাসা কমাটা স্বীকার করতে পারছো না!
হেসে ওঠে সুহাদ।
তার ভেতরে চাপটুকু কমে যায়। সুহাদ বেশী ভালবাসে নাকি অতন্দ্রিলা সে হিসাব গণিতের নয়, সে হিসাব রহস্য দিয়ে মেলাতে হবে। অথচ অদ্ভুতভাবে তারা দুজনেই একে অপরের প্রতি আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তোমাকে তোমার চেয়ে বেশী ভালবাসি। অতন্দ্রিলা ব্রীজের দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে বলে।
তাহলে সমান সমান হলো!
কেন?
কারণ আমি তোমাকে বেশী ভালবাসি তোমার চেয়ে!
অতন্দ্রিলা হাসে। ভ্রু কুচকে বলে, তাহলে প্রেম আমাদের কমে যায় না বলতে চাচ্ছো?
হয়তো হয়!
কখন হয়?
যখন দেখি তোমাকে ফোন করছি না, দেখা করছি না, দেখতে যাবার কথা থাকলেও কাজের চাপে সময় করতে পারি না, চিন্তা হতে থাকে, অস্থির হয়ে পড়ি। অস্থিরতাকে ভয় পেতে থাকি।
আমারও তো একই অবস্থা! তোমাকে কখন ফোন করি জান?
কখন?
যখন হাঁফিয়ে উঠি। নিশ্বাস নিতে ভুলে যাই।
মনে হয় তোমাকে দেখলে স্বাভাবিক হবো।
সুহাদ মাথা নাড়ে। বলে, তুমি আমার কথা বলে দিচ্ছো!
হেসে ওঠে মেঘের দরজা খুলে রোদের ঝিলিক। পাতা বেয়ে তুষার নেমেছে। এক ঝলক বাতাস এসে পানির উপরে তরঙ্গ তৈরি করে।
চঞ্চল হয়ে ওঠে দুজন।
তোমার হাতটা দাও!
অতদ্রিলা হাত বাড়িয়ে দেয়, সুহাদ নিজের হাতে তুলে মাপতে থাকে অতন্দ্রিলার হাতের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।