আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তপন বাগচী'র সোমবারের গল্প

কবিতা ও যোগাযোগ

সোমবারের গল্প তপন বাগচী এক দেশে এক রাজা ছিলেন। প্রজাদের মঙ্গল কামনায় তিনি সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর রাজ্যে ছিল এক তীর্থস্থান। সেখানে ছিল এক শিবমন্দির। রাজ্যের লোক সেই স্থানে আসতেন পুণ্যার্থীরা।

তীর্থস্থানে ছিল একটি দিঘি। সেই দিঘির জল একসময় শুকিয়ে যায়। জল ছাড়া কি দিঘি হয়! রাজা চাইলে সেই দিঘি শুধু জল কেন, দুধ দিয়েই তো পূর্ণ করা যায়! এখন কীভাবে এই কাজটি করা যায়, তাই নিয়ে তাঁর দিনরাত ভাবনা। একরাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন, শিব ঠাকুর তার কাছে এসে বলছেন, ‘কী আর অত ভাবনা করিস হয়ে দেশের রাজা মন দিয়ে শোন্, এখন আমি বলছি তোরে যা-যা। দেশের সকল প্রজার কাছে করিস দাবি যদি এক ঘড়া দুধ পেলেই দেখিস বইবে দুধের নদী’।

ঘুম থেকে ধড়ফড় করে রাজা বিছানার উপর উঠে বসেন। এক গ্লাস জল খান। তারপর মন্ত্রীকে ডেকে বলেন, ‘রাজ্য জুড়ে পাঠাও খবর যেথায় যত প্রজা করতে হবে একখানি কাজ সরল এবং সোজা বইতে হবে সবার কাঁধে একটুখানি বোঝা। আনতে হবে সবটুকু দুধ না দিয়ে ‘মিল-গোঁজা’ সবার সে দুধ ঢালতে হবে দিঘির শুকনো বুকে তাতেই দিঘি ভরবে জলে হাসবে সবাই সুখে। ’ মন্ত্রী সারা রাজ্যে ঢ্যারা পিটিয়ে জানিয়ে দেয় রাজের এই আদেশ।

রাজার আদেশ অমান্য করার সাধ্য কারো নেই। ঘরের সকল দুধ দিয়ে যদি রাজার আদেশ পালন করা যায়, তাতে আর কষ্ট কী! কয়েকদিন পরে এক শুভদিন দেখে প্রজারা দিঘিতে দুধ ঢালার আয়োজন করে। নির্ধারিত দিনে সকল প্রজা ঘরের সকল দুধ নিয়ে আসে এবং এক এক করে ওই দুধ দিঘিতে ঢালে। তারপর সকলে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু পরের দিন দেখা গেল, দিঘিতে একটুও জল জমেনি।

রাজা অবাক! সবাই অবাক! কী হলো, কী হলো! রাজা ভেবে পায় না। তাই আবারও দুধ ঢালার আদেশ দিলেন। প্রজারা রাজার আদেশ মেনে সাতদিন পরে আবারও দুধ ঢালেন। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। রাজা চিন্তায় পড়েন।

সমস্যা সামাধানের নতুন কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করেন। একদিন এক বুড়ি ওই মন্দিরে আসে। সঙ্গে তার তিনটি নাতি। বুড়ি নাতনিদের নিয়ে মন্দিরে এসে দিঘিতে গিয়ে দেখে জল নেই। তখন সে তার হাতের ঘড়া থেকে এক ফোঁটা দুধ দিঘিতে ছিটিয়ে দেয়।

ধান আর দূর্বা দিয়ে শিবের উদ্দেশে পূজা দেয়। সে শিব ঠাকুরে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমি তো আর রাজার মতো ধনে বড় নই হাজার ঘড়া দুধের নহর পাব আমি কই? কিন্তু আমি এক ফোঁটা দুধ দিলাম হৃদয় থেকে তুমি ছাড়া কে আছে আর আপন করে দেখে! ডাকছি আমি দুহাত তুলে তোমার দয়া হলে রাজার দিঘি পূর্ণ হবে কানায় কানায় জলে। ’ শিবের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বুড়ি তার নাতনিদের নিয়ে পূর্ব দিকে মুখ করে বসে চোখ বুঁজে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় দিঘিটা দুধে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন বুড়ি তার নাতনিদের নিয়ে দিঘিতে নেমে স্নান করে।

তারপর মন্দিরে প্রণাম করে বাড়ি ফিরে যায়। দুধে ভরা দিঘি দেখে এক ব্যক্তি রাজাকে খবর দেয়। রাজা দিঘির পাড়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে দিঘি আবার খালি হয়ে গেছে। কীভাবে এটি হলো তা কেউ বুঝতে পারে না।

রাজা এই রহস্য বোঝার জন্য এক প্রহরী নিয়োগ করে। প্রহরী দেখে ঠিক সাতদিন পরে আবার একদিন দিঘি দুধে পূর্ণ হয় এবং কিছুক্ষণ পরে তা খালি হয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে হলো, তা সে বুঝতে পারে না। এরপর রাজা নিজে লুকিয়ে থাকে দিঘির পাড়ে। সাতদিন পরে বুড়ি তার তিন নাতনিকে নিয়ে আবার আসে।

তারপর একই নিয়মে পূজা করে। দিঘি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। রাজা দৌড়ে গিয়ে বুড়ির ধরে ফেলে। বুড়িকে তার আসল পরিচয় জানতে চান। কীভাবে সে দিঘি দুধ দিয়ে ভরিয় তোলে, সেই রহস্য জানতে চান।

বুড়ি রাজাকে বলে, ‘রাজা হয়ে প্রজার কাছে চাইছ সকল দুধ কিন্তু তাদের ছেলে মেয়ে কেমন করে খাবে? কচি কচি বাছুরগুলো কাঁদছে ভীষণ খিদেয় তাদের খাবার কেড়ে নিলে কেমনে সুফল পাবে?’ রাজা তার ভুল বুঝতে পারেন। তাই তো? কচি কচি শিশুদের জন্য দুধ তো রাখা উচিত ছিল! দুধের বাছুরদের জন্য তো দুধ রাখা উচিত ছিল! শিশুদের আর বাছুরদের বঞ্চিত করার জন্য কেউ তো খুশি মনে দুধ দেয় নি। রাজার আদেশ মেনে নিতেই কেবল দুধ দিয়েছে। আর তাছাড়া তারা দুধ ঢেলেছে কিন্তু শিবের কাছে পূজা দেয়নি। তাই শিব তাদের মনোবঞ্ছা পূরণ করেনি।

রাজা ঘোষণা দিলেন সাত দিন পরে আবার সবাইকে দুধ নিয়ে আসতে হবে। তবে এবার সমস্ত দুধ নয়। শিশু এবং বাছুরদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধটুকু রেখে বাকিটুকু নিয়ে আসতে হবে। প্রজারা এবার খুশি। শিশুদের আর কাঁদাতে হবে না।

বাছুরগুলো আর হাম্বা রব তুলে কাঁদবে না। প্রজারা খুশি মনে দুধ নিয়ে নির্ধারিত দিনে দিঘির পাড়ে আসে। সকলে একে একে দুধ ঢালে দিঘিতে। তারপর দিঘির পাড়ে বসে ধান আর দূর্বা দিয়ে পূজা করে। তারপর দিঘি জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে।

রাজা খুশি হয়ে বুড়ি ও তার নাতনিদের অনেক উপহার দেয়। আর প্রজাদের ডেকে ঘটা করে শিবের পূজার আয়োজন করে। সপ্তাহের যে দিনটাতে এই দুধ দেয়া আর শিবের পূজা দেয়ার ঘটনা হয়েছে, সেই দিনটার নাম রাখা হয় শিবের নামে। সেদিন ছিল সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন। শিবের এক নাম সোম।

তাই দিনটির নাম রাখা হলো সোমবার। সোম অর্থ চন্দ্র চন্দ্র বা তীর্থ। শ্রীকৃষ্ণের অন্ত্য বা শেষ লীলাক্ষেত্রকেও সোমতীর্থ বলা হয়। সোমের দেবতাকে বলা হয় নাথ বা সোমেশ্বর বা শিব। দিনটির নাম তাই সোমবার।

ইংরেজিতে সোমবার বা চন্দ্রবারের অর্থ মুন’স ডে বা মনডে। এইভাবে সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটির নাম সোমবার হয়ে ওঠে। শিব ঠাকুরের ব্রত থেকেই পেয়েছি সোমবার শিবের পূজায় সব পাওয়া যায় নাই ভাবনা আর। আজ থেকে ভাই শুরু করো শিবঠাকুরে ব্রত শুকনো দিঘি পূরণ হবে নাই ভাবনা অত! সোমবারের ওই সোম হলো ভাই শিব ঠাবুরের নাম ব্রত পালন করলে সবার পূরবে মনষ্কাম।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।