আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছয় মাসের আলোচিত সমালোচিত বক্তব্য

বেঁচে থেকেও আমি মৃত; কিছু না লিখতে জেনেও কবি............

মহাজোট সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলো। এই ছয় মাসে বিভিন্ন মন্ত্রী, সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতারা নানা রকমের মন্তব্য করেছেন, যেগুলো বেশ আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের কোনো কোনো মন্তব্য নিয়ে দেশের মানুষ দিনভর আলোচনায় মত্ত থেকেছে। কখনও কখনও পাওয়া গেছে বেশ মজার কিছু উক্তি। কখনও করেছেন আত্মসমালোচনা।

তাদের কোনো কোনো বক্তব্যে জনগণের মনে বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সময় চটুল মন্তব্যের কারণে তারা সাধারণ মানুষের কাছে উপহাসের পাত্রও হয়েছেন। গত ছয় মাসের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ রকম কিছু মন্তব্য নিয়ে এই প্রতিবেদন। ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী আসন্ন বোরো মৌসুমে নতুন সরকারের ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, মহাজোটের সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর মানুষ সার খুঁজবে না, সারে মানুষ খুঁজবে। ২ জানুয়ারি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সুজনের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হতে পারে।

৫ জানুয়ারি উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গভবনে মন্ত্রিপরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে আমরা যাব পতাকা উড়িয়ে। আর ফিরব পতাকা ছাড়া নিজ গাড়িতে। ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের বিপুল প্রত্যাশায় নিজের মাথায় পাথরের মতো চাপ তৈরি হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কর প্রদান প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে অসম্ভব বিত্তশালী কিছু রাক্ষস তৈরি হয়েছে। তারা ঠিকমতো কর দেন না।

১৫ জানুয়ারি আ'লীগের সাংসদ অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস শিক্ষকরা চাঁদা তুলে তাকে সোনার নৌকা উপহার দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, কেউ যদি ভালোবেসে কাউকে কিছু দেয়, তাতে তো দোষের কিছু নেই। ২২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত চা-চক্র অনুষ্ঠানে বলেন, মানুষ হিসেবে আমিও সমালোচনার ঊধর্ে্ব নই। ২৭ জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন তাঁতী দল আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেন, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কালকের এই রাষ্ট্রপতি কী সেই রাষ্ট্রপতি আছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি স্পিকার আবদুল হামিদ সংসদে হাবিবুর রহমান মোল্লার ধন্যবাদের জবাবে বলেন, জেলে থেকে তো আপনে ঘুমাইয়া পাস করলেন, আমরা যারা বাইরে ছিলাম তাঁরা তো হাঁটতে হাঁটতে শেষ। ৯ ফেব্রুয়ারি সাংসদ রাশেদ খান মেনন জাতীয় সংসদে আলোচনায় বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে আমরা বৈধতা দিতে পারি না।

খুব বেশি হলে ক্ষমা করে দিতে পারি। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, তৃতীয় উপজেলা নির্বাচন অতীব ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নের জবাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, যে বাঘ একবার রক্তের স্বাদ পেয়েছে তাকে ওই স্বাদ ভোলাতে সময় লাগে। ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও সরকার জঞ্জালের স্তূপ ও আগ্নেয়গিরির মুখে বসে আছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বলেন, আলাদিনের চেরাগ নিয়ে ক্ষমতায় আসিনি যে এ ক'দিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলব।

২০ ফেব্রুয়ারি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ইউরিয়া সার পানিতে গুলিয়ে ছিটানো নিয়ে টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, ঝাড়ফুঁক-পানিতে দিয়ে সারের ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা একমত নন। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বিডিআর বিদ্রোহ দমনে বিরোধী দলের সাহায্য নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন 'আমার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে নয় যে, কাউকে দাওয়াত দেব'। ৬ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিডিআর সদর দফতরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দলের শোক মিছিলের শুরুতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের আগেই আমি এই ষড়যন্ত্র বুঝেছিলাম। এ জন্যই আমি 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'-এর ডাক দিয়েছিলাম। ১০ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী তার ছেলে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, সংবাদ মাধ্যমে ওর এ কথা বলা ঠিক হয়নি।

ও সহজ-সরল অনাড়ম্বর একটা মানুষ। ১৩ মার্চ টিআইবির চেয়ারম্যন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সাংসদদের প্রসঙ্গে বলেন, বুঝতে পারি না সাংসদরা সাংবিধানিকভাবে র্নিধারিত কাজের বাইরের কাজও কেন করতে চায়। ১৬ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধূরী কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব মুক্তমঞ্চে মতবিনিময় সভায় বলেন, লোভ ও সুযোগ-এই দুইয়ের সমন্বয় হলেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ১৮ মার্চ চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী বিএনপি থেকে বহিষ্কারের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ।

২২ মার্চ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিবিসির সংলাপে বলেন, মন্ত্রীদের কম কথা বলাটা আমিও পছন্দ করি। সরকারি দলের কাছে মানুষ কথা কম, কাজ বেশি চায়। কথা বলার জন্য তো বিরোধী দলই আছে। ২৩ মার্চ বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজধানীতে আলোচনা সভায় বলেন, রাজনৈতিক ব্যানারে আজ আমরা 'অনেক সুবিধাবাদী' এক জায়গায় হয়েছি। এ জন্যই আজ জাতীয়তাবাদীদের এত দুর্দশা।

২৫ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেন্ডার বাজেট বিষয়ক কর্মশালায় বলেন, মন-মানসিকতার দিক থেকে সরকারের মুখটা পুরুষেরই মুখ। ২৭ মার্চ জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এটা আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন নয়। আপনারা শত চেষ্টা করলেও আমার মুখ থেকে একটা শব্দও বের করতে পারবেন না। ৩০ মার্চ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক সিপিডির আলোচনায় বিদ্যুৎ খাতের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে নির্বাচনে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর নেত্রী আমাকে আরেক কঠিন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৬ এপ্রিল স্পিকার আবদুল হামিদ সংসদে যোগাযোগমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, 'সংসদে কোনো বন্ধুও নেই, নেতাও নেই।

এখানে সবার পরিচয় সংসদ সদস্য'। ১৮ এপ্রিল খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি শহীদুল ইসলাম সরকারকে উদ্দেশ করে এক আলোচনা সভায় বলেন, এদেশে জঙ্গি আর কইবেন না, তাইলে কিন্তু জঙ্গি হইয়া যাইব'। ২৩ এপ্রিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, জলিল সাহেব অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। একজন বিক্ষুব্ধ মানুষের দিগ্গি্বদিক জ্ঞান থাকে না। ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী সিরডাপ মিলনায়তনে সেমিনারে বলেন, ক্ষমতায় এলে এত ভাগনা-ভাগনী জমে যায় যে, আসল আত্মীয় কি-না তার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

৪ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাজাহান তথ্য অধিকার আইন নিয়ে এক সেমিনারে বলেন, এদেশে সবচেয়ে বেশি আলুর হিমাগার আছে মুন্সীগঞ্জে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় হিমাগার সচিবালয়। ৬ মে পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গোলটেবিল আলোচনায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বে যদি কোনো সন্ত্রাস থাকে তা হলো মিডিয়া সন্ত্রাস। ২১ মে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দলের অবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, মওদুদ আহমদরা সরাসরি নির্বাচনে সাংসদ হননি। ওনারা অনুদানের ও অনুগ্রহের সাংসদ।

২২ মে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে তাহলে ধরে নিতে হবে ওই দলেই যুদ্ধাপরাধী আছে। ২৪ মে সাংসদ শাজাহান অষ্টম সংসদের কেনাকাটায় অনিয়ম তদন্তে গঠিত উপকমিটির পাওয়া দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে পত্রিকাকে বলেন, কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে আর্থিক অনিয়মে দেলোয়ারই সেরা হবেন। ৫ জুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাহারা খাতুন মায়ের মতো, এটা অনুভব করি। ৬ জুন বিএনপির সাংসদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দলের পুনর্গঠন প্রসঙ্গে নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা করে বলেন, 'যাঁদের নীতি অচল তাঁরাই যদি দল চালান চলবে কী করে'। ৮ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি মানবাধিকার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে বলেন, আইনের শাসন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একসঙ্গে চলতে পারে না।

১০ জুন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশটা আহাম্মকের স্বর্গ নয়, যে কোনো ইস্যু ছাড়াই পাঁচ মাসের মধ্যে সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে। ১৬ জুন সিইসি এটিএম শামসুল ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভোটার করার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কম খরচেই যখন ভোটার করা সম্ভব তখন বাদ রেখে লাভ কী? ১৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর প্রসঙ্গে বলেন, তবু ভালো যে সামরিক শাসন আসেনি। ২৩ জুন রাশেদ খান মেনন টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের কাছে যেন মিউ মিউ করে কথা বলা হচ্ছে। ২৭ জুন সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য কম বরাদ্দের সমালোচনা করে বলেন, অন্যগুলো কাঁচি দিয়ে কাটা হলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কাটা হয় কোদাল দিয়ে। ৩০ জুন আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে বাজেট আলোচনায় বলেন, কৃষক তো ধান দিল, আপনি তো দাম দিলেন না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।