আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন মিনিটের গল্প (স্বপ্নের শেকল)

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মতিন মিয়ার গৎবাধা জীবনে রংয়ের কোন ছোয়া একেবারেই নেই। বয়স পয়ত্রিশ ছুই ছুই করলেও বিয়ে সাদী করা হয়নি। ছোটখাট একটা চাকুরি করে যে কয়টাকা রোজগার হয়ে তা খরচ হয়ে যায় বুড়ো বাবা মাকে পালতে গিয়ে। শুকোনো খটখটে শরীরের মতিন মিয়ার জীবনটি গত দশটি বছর বন্দি হয়ে আছে একটি ছোট চাকুরি, থাকার একটা ছোটি চৌকি আর একটা ট্রানজিস্টার রেডিওতে। গোটা পাচ বছর আগে সাহস করে কিনে ফেলেছিল যন্ত্রটি।

যদিও দাম টানতে হয়েছিল মাত্র পাচশতটি টাকা। এনিয়ে মতিন মিয়ার যেমনটি কোন অনুযোগ বা অভিযোগ নেই, তেমনটি এমন অন্য কেউ নেই যে ব্যপারটি নিয়ে সামান্যতম চিন্তা করার সময় পায়। গত একটা মাস ধরে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরে মতিন মিয়া। ঠিক তার মতই দেখতে যমজ বললেও অত্যুক্তি হয় না, এমন একটি মানুষ, তার চিন্তার জগতে একটু একটু জায়গা করে নিতে থাকে। তার অফিসটির আশেপাশে কোথাও কাজ করে হয়ত, নিশ্চিতভাবে তার চাইতে ঢের ভাল কোন চাকুরি।

দুপুরবেলা কর্তার লান্চের যোগান দিতে বাইরে বেরোয় যখন তখন লোকটিকে দেখে দুপুরবেলার খাবার আয়োজনে। প্রতিদিনই কোন না কোন ভাল খাবার নিয়ে। আর অফিস ছুটিতে কিংবা অফিসের জানালায় দাড়িয়ে লোকটিকে মাঝে মাঝে ঘরে ফিরতে দেখে মোটামুটি সুন্দর একটি মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘরে ফিরতে। এরিমাঝে অনেকটা আকস্মিকভাবে মতিন মিয়ার বাবামা দুজনেই খুব কম কয়টা দিনের ব্যবধানে এ জগত ছাড়েন। শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই মতিন মিয়া আবিস্কার করে মনের খায়েশ মেটাতে এখন প্রতি মাসেই কয়টি টাকা তার হাতে উদ্ধৃত থাকবে।

ছোট মাপের কিছু স্বপ্নও দেখা শুরু করে সে। হয়ত দুপুরবেলায় অফিসের পাশের কোন রেস্তোরায় ভাল কিছু খাওয়া দাওয়া কিংবা অফিসে শেষে কোন একটি মেয়েকে নিয়ে কোথাও অভিসারে বেরোবার। কিন্তু ছোট একটি দুর্ঘটনা তাকে আবার দু:চিন্তায় পরে মতিন মিয়া, স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলার আশংকা দেখা দেয়। তার একমাত্র ছোট বোনটির গরীব খেটেখাওয়া স্বামী প্রান হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। এতিম ছোটো দুটো মেয়েকে নিয়ে সাহায্যের জন্য হাত পাতে মতিন মিয়ার দুয়ারে।

গভীর রাতে ঘুম ভেংগে ধরফরিয়ে জেগে উঠে মতিন মিয়া। খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। স্নপ্নটিতে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল সে পাখির মতই যেমনটি ইচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে। খুব সুস্বাদু কিছু খাবার কিংবা খুব সুন্দর একটি মেয়েও ছিল স্বপ্নটিতে। খুব অস্পষ্টভাবে আশেপাশে কোথাও ঘুরোঘুরি করছিল।

স্বপ্নের শেষের দিকটাতে কানের কাছে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলছিল, স্বপ্নের সবকিছুই তোমার, শুধু চাই স্বাধীন হয়ে ডানা মেলা। এক গ্লাস পানি গলায় ঢেলে দিয়ে জানালায় চোখ ফেরায় মতিন মিয়া। আকাশটা বেশ পরিস্কার। বেশ কয়টা তারাও মিটি মিটি জ্বলছে। বিড়বিড় করে নিজের অজান্তেই এক গ্লাস পানি গলায় ঢেলে দিয়ে জানালায় চোখ ফেরায় মতিন মিয়া।

আকাশটা বেশ পরিস্কার। বেশ কয়টা তারাও মিটি মিটি জ্বলছে। কে যেন মনের মাঝে নি:শব্দে বলে উঠে কিছু ভাল খাবার আর একটি সুন্দর মেয়ের স্বপ্নের শেকলে আমার বহু বছরের স্বাধীন জীবনটিকে শৃংখলিত করতে চাই না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।