আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না, এমন ব্লগ আজ লেখার কথা ছিল না



মাঝ পদ্মা, শীতল বাতাস, সন্ধ্যা শেষে আঁধার নেমেছে, হাতে মোবাইল ফোনে জিপিএস এ বারবার দেখছি গুগল ম্যাপে নিজের অবস্থান, সব মিলিয়ে চমৎকার এক ফিরতি যাত্রার মধ্যে ছিলাম!!! বলছি গতকালের(১০জুলাই,০৯) কথা, গ্রামের বাড়ী থেকে ফিরতি যাত্রায় তখন নদী পাড়ি দিচ্ছিলাম ফেরীতে করে, খুব ইচ্ছেও ছিল আজ বা কালই জিপিএস নিয়ে আর ছোট একটা ছবি ব্লগ নিয়ে আসবো কিন্তু আজ আর সেসব কিছু নিয়েই লেখা হচ্ছে না, কারন................... ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে, বিশেষ করে ছোটবেলার বন্ধুদের কথা গুলো, হারিয়ে যাওয়া সব নাম যেন হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেছে, সবচেয়ে মনে পড়ছে খুলনা পাবলিক কলেজে পড়াকালীন সময়ের সব চেয়ে কাছের বন্ধু রোমান্সের কথা, ও সময়টায় ওই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল সব ব্যাপারে। বাবার সরকারী চাকুরী, খুলনা ছেড়ে আসি, আর তখন ঠিক মোবাইলের যুগ ও ছিল না, আস্তে আস্তে রোমান্স নামের বন্ধুর প্রত্যেক ঘটনা কেমন যেন বর্নহীন হয়ে ওঠে, একটা সময় হয়ে উঠলো - 'হ্যাঁ, রোমান্স নামের আমার একটা বন্ধু ছিল।' ( এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো হারানো এক বন্ধুর গল্প ) কিন্তু, ঘটনা হঠাৎই ঘুরে যায় নটর ডেম লাইফে, কোন একদিন কলেযে কেন জানি আমার মা বাবা এসেছিলেন, ক্যান্টিনের পাশে অপেক্ষা করছিলেন, আমার ব্রেকে চারতলা থেকে নেমেই দূর থেকে দেখি আম্মু যেন কার সাথে কথা বলছে, কাছে যেতেই সিনামেটিক টার্ন, আরে এ যে রোমান্স, আম্মুকে দেখে চিনেফেলেছে!!! মুহূর্তেই বর্নহীন অতীত পেলো নতুন রঙ, প্রায় ৭ বছর পর ছোটবেলার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে ফিরে পাওয়া সত্যিই এক অভূতপূর্ব ব্যাপার!!!!!! ঘটনা আরো বাড়ে, মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান, মাঝে মাঝেই বিশেষ করে প্রাইমেটের সেই মেয়েটিকে নিয়ে কথা বলা ইন্টারের পর..... কোন মেয়েটা? আরে তুই না বুঝে ক্লাস শুরুর আগে একদিন পায়ে পাড়া দিয়েছিলি, আবার সরিও বলিস নাই!! আরে তাই নাকি, আমি তো খেয়ালও করি নাই দোস্ত!! আমি তোকে চিনি , ওকে আমি বুঝিয়ে বলছি তোর কথা, ও বুঝছে, পারলে কথা বলিস!!!!! এরকম আরো কত কথা, আমি তখন প্রাইমেট শান্তিবাগের শাখায় কোচিং করি, কথপোকথনের মেয়েটিও আমার ব্যাচেই পড়তো, আর সেই মেয়ের নায়ক তথা রোমান্স তখন ওমেকাতে কোচিং এ ব্যস্ত!!!! রোমান্সের কারনেই মেয়েটির সাথে আমার কথা হয় তখন, মাঝে মাঝেই কথা হতো, এর পর আমি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে আর প্রাইমেটে যাইনি, আর সেই মেয়ের সাথে কথা হয়নি, কিন্তু জন্ডিসের সময়ও রোমান্সের সাথে ঠিকই কথা হতো!!!! সময় এগিয়ে গেল, সময়ের স্রোতে আমি বারডেমের মেডিকেলে, রোমান্স MIST তে, আর সেই মেয়েটি কুমুদিনী মেডিকেল এ!!!! এর মাঝে আমার সাধের প্রথম মোবাইলটি হারিয়ে যাওয়ায় আবার হারিয়ে ফেলি ছোটবেলার বন্ধুটিকে!!!! যদিও ৬ ৭ মাস পর সে নিজেই ফোন দেয়, বলি নতুন নাম্বার পেলি কি করে?? উত্তরে অবাক হলাম, সে নাকি আমার বাবা মায়ের নাম্বারও লিখে রেখেছে, আবার আমরা হারিয়ে যাই কিনা!!! বাহ, যোগাযোগ চলতে থাকলো, সঙ্গে যোগ হলো চ্যাটিং, তারপর ফেসবুক, মাঝে রোমান্স আমার সাথে এসে দেখা করলো বারডেমে, আর রাগ ঝারলো, তুই তো গেলি না আমিই আসলাম!!!! ঘটনা আরো অনেক ছোট ছোট ডালপালা বিস্তার করলো- পড়া শেষ, এখন রোমান্স মেকানিক্যাল ইঙ্গিনিয়ার, চাকরী ও করে, আরো কত কি!!!!!!!!!! কিন্তু অবিশ্বাস্য, আজ সেই বন্ধুই কিনা আমার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলো, এমনকি সম্পর্ক রাখার উপায়টিও রাখলো না!!!!!!!!!!!! …........................ গতকাল রাতের ফেরীর কথায়ই ফিরে আসি, এতসব শীতল আবহাওয়ায় একটা ফোনই সব বদলে দিল – ফেসবুকের স্ট্যাটাস গুলো সব বদলে দিল!!!!!!! আমাদের গল্পের সেই মেয়েটিকে সাথে নিয়ে ঢাকা ফেরার পথে সাভার ইপিজেড এর কাছে এক সড়ক দূর্ঘটনায় রোমান্স …....................................................................................... অধিক শোকে চোখে নাকি পানি আসে না!!!!!! হঠাৎ করেই গ্রামের বাজারের এক সাধারন মিষ্টির দোকানদারের একটা কথা মনে পড়ে গেল- 'মৃত্যুটা সত্য, আর বেঁচে আছি এটা অবিশ্বাস্য' বারবার ফোনকলের বন্ধুর কথাটি কানে বাজছে, আমরা নাহয় ভুলে যাব, কিন্তু একমাত্র সন্তানের মা বাবা-র কি হবে???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।