আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি আন্দালীব ও তাঁর প্রথম বইঃ ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে - একটি পাঠপ্রতিক্রিয়ার খসড়া

উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি

কবি আন্দালীব আমার পরিচিত। ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অন্যতম। আমি এইক্ষণে ঘনিষ্ঠজনদের লেখা নিয়ে কথা বলা কতটুকু নিরাপদ কতটুকু নয়, এনিয়ে একদমই ভাবছি না। তবু অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন একে অপরের পিঠের উপর রোদ ফেলতেছেন, যে যা বলে বলুক, আমার তাতে কিছুই যাই আসে না। কবি আন্দালীব আমার কাব্য-চর্চার যে ক্ষেত্র যে সম্পর্কের জাল আমার আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, সে জালের ভিতর সেও ঘনিষ্ঠভাবেই জড়িয়ে আছে, তাঁর কাব্যচিন্তার সাথে কিছুটা হলেও আমি অবগত, ঠাহর করতে পারি এপাশ-ওপাশ।

তাঁর প্রথম বই ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে যখন প্রকাশিত হলো সেই সময়ে তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক কেবল গড়ে উঠতেছে, বলা যায় সম্পর্কের মৃত্তিকাতে পানির দাগ পড়ছে (২০০৮ এর প্রথম দিকে), আমরা কবিতা নিয়ে যেখানেই দেখা হচ্ছে; সেটা চাদোকান হোক, ফুটপাথ হোক কিংবা ফাস্টফুডের দোকান হোক, আজিজ মার্কেটের বারান্দা হোক, পিজির আউটডোর কিংবা মিরপুর ১০ এর ফারুক ভাইয়ের চায়ের দোকান হোক, কিংবা আগারগাওয়ের প্রবীণ হাসপাতালের উল্টোদিকে ভুট্টোর চাদোকান হোক, আমরা কবিতা নিয়ে, বর্তমানের কবিতা কেমন হওয়া উচিত, কোন দিকে যাচ্ছে বর্তমান সময়ের কবিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তর্ক করছি, কোথাও কোথাও একমত হচ্ছি আবার কোথাও কোথাও একমত হচ্ছি না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একমত হই না। এই একমত না হওয়ার কারণে আন্দালীবের সাথে আমার কাব্য সম্পর্ক বার বার টিকে যাচ্ছে, আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আমি আজ পর্যন্ত কারো বই নিয়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখিত আকার উপস্থাপন করি নাই। এইটা আমার কাছে কঠিন কাজ বলেই মনে হয়।

আর নিজের গদ্যের হাত নেহাতই বালকের বাঁকাচোরা লেখার মত বলে মনে করি, এইজন্য কবিতার পাঠকপ্রতিক্রিয়া লেখা একটা সুকঠিন কাজ ভেবে বার বার লিখতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছি। তবু সেই কাজটার একটা খসড়া প্রস্তুত করার পায়তারা করছি। কবি আন্দালীবের কবিতা আমাদের এখানে অপরিকল্পিত ভাবে যে নগর গড়ে উঠেছে; সেখানে যে ব্যক্তির গড়ন, সেখানকার যে পরিমণ্ডলে নগরকেন্দ্রিক সামাজিক রীতিনীতির যে কাঠামো, তার ঘাত-প্রতিঘাতের ব্যক্তিক বিবরণ, খণ্ড-খণ্ড মনোবিচ্যুতির নাগরিক পরিভ্রমণ। এই নাগরিক সামাজিক পরিমণ্ডল গঠনে বৃটিশ সওদাগরদের ভূমিকা আছে। বৃটিশ শাসকদের হাতে গড়া যে শিক্ষা ব্যবস্থা তার থেকে উদ্ভূত ব্যক্তির যে মানসিকতা, যে সাংস্কৃতি জটাজাল তার আবর্তেই এখনো ঘুরছে বর্তমানের অধিকাংশ নাগরিক সুনীতি ও সকুমার পরিতৃপ্তি।

এই বলয়ের ভিতরই কবি আন্দালীবের কবিতার অবয়ব ভেসে থাকে, কখনো কখনো উড়তেও চায়, ওড়েও কখনো কখনো। তাঁর কবিতায় নগর-ব্যক্তির মননশীলতার যে টোপখাওয়া গাল যে দনোমনো যে জীবনযাপন, সেসকলের দর্পণ হয়ে ওঠে, যার ভিতর ব্যক্তির মনোভূমির জোনাকরোড কখনো সখনো উঁকিঝুকি মারে। এইটা আমার ভাল লাগে। কোন রাখঢাক না রেখে সে তাঁর জীবনযাপনের যে কালিমা ও সুষমা, বেঁচে থাকার তাগিদে যে সম্পর্কের জালে সে আবদ্ধ, তার ভিতরকার নানা দৃশ্যরাজি, চিন্তার প্রবাহ, একে অপরের সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের ভিতর দিয়ে যে অভিজ্ঞতা লতানো গাছের পাতার মত নাচে, সেসবের সাথে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, তারই এক জটিল গ্রন্থি হয়ে ওঠে কবি আন্দালীবের কবিতা। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক যে কাঠামো বৃটিশপূর্ব সময়ে অক্ষত ছিল, তার বেশির ভাগ পরিবর্তন বৃটিশ পুঁজিবাদী সওদাগরি ঢেউ লেগে ঘটেছে।

ভারতীয় সামন্তবাদী প্রথায় - ইউরোপেও, এসময় ভূমিই ছিল সম্পদের বা ক্ষমতার প্রধানতম অনুঘটক বা চাবিকাঠি। ব্যক্তির চরিত্র ও সাংস্কৃতিকবোধ এই ক্ষমতার পরিসরেই বেড়ে ওঠে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ভূমিকেন্দ্রিক ক্ষমতার পরিসরে বৃটিশ সওদাগরি শাসন ব্যবস্থা প্রথমবারের মতো বৃহত্তর আকারে সম্পদ বা ক্ষমতার অনুঘটকের জায়গায় নতুন করে সংযুক্ত করে দেয় টাকা বা পুঁজি এবং ঋণ ব্যবস্থা। বৃটিশ পুঁজিবাদী এন্টারপ্রাইজ সম্পদের বা ক্ষমতার এই নতুন পাটাতন তৈরি করে এখানে তাদের সুবিধাসমূহ আদায় করেছে। এসময় ভারতীয় সামন্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের যে গঠন এবং ইউরোপেও, তার ভিতর ঐতিহ্যগতভাবে ব্যক্তির শ্রেণিকরণ নির্দিষ্ট হতো জন্মসূত্রে এবং ভূমিকেন্দ্রিক ক্ষমতার বলয়ে।

এই জন্মসূত্রের আভিজাত্য এবং ভূমিকেন্দ্রিক ক্ষমতা ব্যক্তির নিজস্ব আভিজত্যবোধ ও সাংস্কৃতিক প্রপজ্ঞ্চ নিয়ন্ত্রণ করতো। বৃটিশ সওদাগররা ক্ষমতার যে নতুন প্রপজ্ঞ্চ যুক্ত করলো ভারতীয় সামন্ত সমাজের করিডোরে, সেখানে পূর্বের জন্মগত পরিচয়সূত্রে পাওয়া আভিজাত্যকে দুর্বল করে দিলো। নতুন আভিজাত্য তৈরি হলো টাকার কড়কড়ে নোটের গন্ধ দিয়ে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় বৃটিশদের এই সওদাগরি পরিবর্তনের ফলে তৈরি হলো নানা অনুষঙ্গ। সাংস্কৃতিক বলয়ে সংযুক্ত হয়ে এইসব অনুষঙ্গের তাপ ও প্রতাপ ছড়িয়ে পড়েছিল শিক্ষার মাধ্যমে।

সেই যে আলাদা একটা বলয় তৈরি হলো - সেখানের যে নগর মনস্কতা, যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবোধ, ব্যক্তির বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াগত যে ঝোঁক তৈরি হয়েছিল, সেখানে আলো ফেললে যে ব্যক্তির মনোসিঁড়ির ধাপগুলো চোখে পড়ে, আন্দালীবের কবিতা পাঠ করলে সেই ধাপগুলো কখনো স্পষ্ট কখনো অস্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়, দেখাও যায়। আমি এইভাবেই কবিতাকে দেখতে চাই। একজন কবি তো প্রথমত একজন ব্যক্তিও। তার বেড়ে ওঠা পরিসর তার কবিতার ভিতর উপলব্ধির একটি জায়গা তৈরি করে বলে মনে করি। সেই উপলব্ধির জায়গাটাকে অবলোকনের জন্য দরকারি মনে করি সে যে সমাজ ব্যবস্থার কাঠামোর ভিতর এক্টিং করছে যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে যে সাংস্কৃতিকবোধ গড়ে উঠছে তার ভিতরকার পরিবর্তনগুলোকে আগে পর্যালোচনা করা।

সেই কারণেই সে যে সমাজস্থ কাঠামোর ভিতর বর্তমান আছে তার বিবর্তনের বিষয়ে একটু আধটু আলোকপাত করে নিচ্ছি। ভারতীয় স্থির সমাজ ব্যবস্থায় যে সামাজিক কাঠামো ছিল সেখানে বৃটিশদের পরিবর্তন প্রক্রিয়ার প্রপজ্ঞ্চগুলো এখানকার সমাজের সামাজিক গতিশীলতায় প্রণোদনা জুগাতে শুরু করলো। অতীতকাল থেকেই ভারতীয় সনাতন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল চরম এক স্তরায়িত সামাজিক কাঠামো। এসময় সামাজিক শ্রেণির নির্ণায়ক ছিল বর্ণপ্রথা, যখন একজন ব্যক্তির জন্মগত পরিচয়ই নির্ধারণ করে দিত তার শ্রেণিচিহ্ন, তার অবস্থান। এধরণের স্থির সামাজিক কাঠামোতে - স্তরবিভাগের কারণে চিরতরে সামাজিক গতিশীলতার পথ রুদ্ধ করে দিতো।

সামাজিক অ-গতিশীলতা সনাতন বর্ণপ্রথার একমাত্র অনুরণন ছিল। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রেও এরকম ব্যবস্থা চালু ছিল সেসময়। সেখানেও জন্মগত পরিচয় বেশির ভাগ মানুষের শ্রেণিগত অবস্থানকে নির্দেশ করতো। গ্রীক এবং রোমেও সামাজিক কাঠামোতে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার আদল পরিলক্ষিত হতো। বাণিজ্যিক পরিসর, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অগ্রগামীতা এবং কলকারখানার উত্থানের ফলে ইউরোপের স্থির সামন্ত সমাজের ভিতর বেড়ে উঠা শ্রেণি বিভাজনের কাঠামোতে ভাঙন শুরু হয়।

এর ফলে ওখানে তৈরি হলো অপেন ক্লাস ব্যবস্থা। আগের সেই শ্রেণি বিভাজনের জায়গাটা আর টিকে থাকতে পারলো না। ইউরোপীয় এই পর্যবেক্ষণ ভারতীয় সনাতন স্থির সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনেও প্রযোজ্য। বৃটিশপূর্ব মুসলিম শাসকগণও এখানে অনেক পরিবর্তন সাধিত করেছিল। সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছিল তা হলো সামন্ত সমাজের ভগ্নস্তূপ থেকে পূঁজিবাদী সমাজে সওয়ার হওয়ার সম্ভবনা মুসলিম শাসকগণই তৈরি করেছিল।

এসময়ই এঅজ্ঞ্চলের স্থানীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে এবং বৃটিশ বণিকের হাতে লাটাইয়ের অধিকার চলে যেতে থাকে আস্তে আস্তে। এবং এসময় থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো ঘটতে থাকে বৃটিশ বণিককুলের ওষ্ঠ্যগত রোদে। এই পরিবর্তনের ছাপ ও ছাচগুলো এখনো আমাদের মন-মননে ওৎ পেতে আছে। আন্দালীবের কবিতা পড়লে এর ছায়াগুলো টের পাওয়া যায়। দর্পণে ভেসে ওঠে।

দর্পণে যা ভাসে তা প্রথমত ব্যক্তির মনোজগত। সমষ্টির দিকে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে পরে দেখার চেষ্টা করবো। তার আগে এই যে ব্যক্তি মানুষ, সেই ব্যক্তি মানুষের যে ধারণা আমাদের এখানে গড়ে উঠেছে, তা কিভাবে গড়ে উঠেছে তা যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে আন্দালীবের কবিতায় যে শব্দসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে যে বাক্য গঠন হচ্ছে সেগুলোর দ্যোতনাজাত পরিসরকে বোঝা যাবে। এজন্যই জরুরী আমাদের সামাজিক বিবর্তনটাকে ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। কারণ সামাজিক কাঠামোর ভিতরই একজন মানুষ বেড়ে ওঠে।

বেড়ে ওঠে তার ভাষা গঠনের আদল। শব্দ ব্যবহারের চাতুর্য। আন্দালীবের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে আমার এইরকম মনে হয় যে তার কবিতার ভিতরকার যে ব্যক্তি সে সমাজের যে ব্যক্তি মানুষ তার থেকে অনেক স্বাধীন। এই স্বাধীনতা কবিতাচর্চায় খুব দরকার বলে মনে করি। ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা বা স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতাও সামাজিক কাঠামোর ভিতর প্রোথিত।

এইজন্য এই কাঠামোর গায়ে লেগে থাকা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনদর্শনবোধ বিষয়ে অবগত হওয়া যেমন দরকার তেমনি এইগুলোর বিকাশ কিভাবে ঘটেছে সেটাও জানা দরকার। যে ভাষায় এখন কবিতাচর্চা হচ্ছে সেভাষা বিবর্তনের পিছনে উপরোক্ত বিষয়গুলোর ভূমিকা আছে। আঁচ আছে। এগুলোর পরিসরকে বোঝার এবং তার ভিতর থেকে আন্দালীবের কবিতা অনুভব করার প্রচেষ্টা থেকে এত কথা আসতেছে। একজন পাঠক হিসেবে এই দেখার চেষ্টা।

বৃটিশ বণিকদের ছককাটা ঘরে বেড়ে ওঠা ব্যক্তির মনন, তার ভোগবাদী কামনা-বাসনার তলপেটে জমে উঠা পুঁজির মেঘদলে যেই আনন্দ, যেই বিমর্ষতা, যেই স্বপ্ন-কল্পনার বাতিঘর, সেখানে স্বদেশের শুকনো নদীর তলরেখা টেকে না, এমনি এক ব্যক্তি-চেতনার ইশকুল ঘরে আন্দালীবের কবিতার ব্যক্তিচিন্তনের বালক নগরমুখী ডিভাইডারে. জেব্রক্রসিং এ হেঁটে বেড়ায়, দেখে নেয় চারপাশের চাতুর্যভরা নাভিতল, নাগরিক সমাজবাস্তবতার ভিতর নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ মুছে যাওয়া ব্যক্তির উড়ন্ত স্বভাবের কামনা-বাসনার দাগ তুলে আনে। ইচ্ছে করে নয়, চলে আসে এমনি এমনি সামাজিকীকরণের ছাল বেয়ে বেয়ে। মনের গহনে এই ছালচামড়ার রসে ভিজে চুপচুপি হয়ে থাকা অভিজ্ঞতার চৌবাচ্চা থেকে ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায় ব্যক্তির দর্পণ অভীপ্সা। এভাষার শব্দ, বাক্যের অন্তরে ওই পুঁজিবাদী পণ্য সরবরাহকারী প্রশাসকদের গড়ে দেওয়া ভিতের উপর দাঁড়িয়েই প্রকাশিত করতে দেখা যায়। এর ভাল দিক মন্দ দিক সম্পর্কে বলার চেয়ে আমি ঢুকতে চাচ্ছি এর গভীরে।

সেখানকার চূর্ণমতিতে এই সময়ের কবিদের অন্তর কিভাবে প্রোথিত এবং তার ঝলক কিভাবে কবিতার ভিতর দিকে প্রকাশ পায় তা অবলোকন করা। সে প্রয়াসের আগে কয় লাইন; মুক্ত ডানার বালক ভুলে যাবে প্রিয়তম মাঠ তার এবং ছায়াবৃক্ষ পুঞ্জমেঘ, যতটুকু ভুলে যাবার বাসনায় মধ্যরাতেও অনায়াস জেগে থাকে ট্রেইন। কিরকম এক বালকইচ্ছার লেনের ভিতর ছড়িয়ে পড়ে উন্মত্ত হাওয়া। এ এক নিঃস্ব-স্বভাবের কাচ পুকুরে টলটলা পানির মত ঠাহর হয়। এই বাক্যবন্ধের নিহিত অবভাসে মন কেমন যেন করে ওঠে।

কেন ভুলে যাবে প্রিয়তম মাঠ ও ছায়াবৃক্ষ পুঞ্জমেঘ? এইবোধ যে ব্যক্তির, সে নগরমনস্ক। আর এই নগর মনস্ক তৈরি করেছে বৃটিশ বণিক প্রশাসকগণ। কেন এই বোধ পুরনো সনাতন সামন্ত সমাজের একজন ব্যক্তির বোধের মত ঠেকছে না?, এর আলাপই পাড়তে চাচ্ছি, উছিলা আন্দালীবের কবিতা। আমাদের নোলক হরণের এই কালে কাবিতায় স্বপ্নচারণ পরিত্যাজ্য নয়। বরং প্রতিদিনের জীবনবোধের অন্তর্নিহিত নিগূঢ় পর্যবেক্ষণ যে অনুপ্রেরণা জোগায় তা সত্যরুপে গ্রহণ সাপেক্ষে তাঁর প্রেক্ষিতসমূদয় তুলে ধরা আমি মনে করি প্রধান গুণ হিসেবে বিবেচ্য হওয়া উচিত।

তা যতই নাবোধক হোক কদাকর হোক তার তলপেট জুড়ে আমাদের যে স্বদেশ যে সমস্ত মানুষের মুখমন্ডল প্রতিদিন ঝলসাচ্ছে, সেই ঝলসানো মৃদু আলোয় আমাদের চেহারা যদি দেখতে পারি, তাকে যদি আমরা স্বপ্নের ডানায় ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে, অনুপ্রাণিত আমাদের বোধ সম্পন্ন লোকালয়ে উৎসাহর কার্যক্ষেত্র তৈরি করবে। যার অন্তরে আমাদের ভঙ্গি দাঁড়াতে শিখবে, নতুন পাতার মতো তার রোদ্দুর হবে কবিতার শব্দে অবগাহনের গাত্রবাহক, ভেঙে পড়া বাক্যের ভাজে ভাজে থোকা থোকা জোনাক পোকার আলোয় - আমরা টেবিলের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে নিজেদের হৃৎপিন্ডকে বের করে আনতে পারবো। এই দৃষ্ঠিগোচর যে সকল কবির মধ্যে ফুটে উঠছে আমাদের এই সময়ের কবিতায়, তাদের জন্য স্বপ্নচারণ ত্যাজ্য নয়। আন্দালীবের কবিতায় এইধরনের স্বপ্নময় এক জগত আছে, যা ব্যক্তির একাকীত্বে, বিষাদের কাচে ফুটে ওঠে। চলবে.....


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।