আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট গল্পঃ নুহের নাও

আমার হাতদুটো পা হয়ে গেলে আর পা হাত; তাহলে কি তুমি করমদর্নের সজ্ঞাটা পালটে দিবে

ছোট গল্পঃ নুহের নাও ---------------------------------- ** এই গল্পটা পোয়াতি বিলাই গল্পের পরের সুর ধরে লিখা Click This Link শোভার নানান রঙের ছাপ্পা মারা কলকিডা লুঙ্গীর কোছড়ে লইয়া মুন্সির পোলায় হারাইয়া গেছে অ-নে-ক-দিন অইলো। সবায় সবকিছু সহ্য করনের কইলজা লইয়া জন্মায়না। মুন্সির পোলায়ও না। শোভার বিয়া অওনের পর যেই ছ্যাকা খাইছি তা সামলাইয়া আমি অহন বাপের আড়ত চালাইলেও মুন্সির পো'য় অইলো দেবদাস। পোলাডা হারাইয়া গেল শোভার বাচ্চাডা অওনের পরেরদিন থেইক্যা।

বাজারের উপর দিয়া অহন শোভার পোলায় প্রাইমারী স্কুলে যায় পড়তে; ওর চেহারা সুরত দেখলেই আমার মুন্সির পোলার কতা মনে পইরা যায়। মাঝে মইদ্যে পোলাডারে ডাক দিয়া লেবেন চুস কিইন্যা দেই ওর মার কতা জিগাই মাঝেসাজে। ওর মার কতা জিগাইতে আমার শরম লাগে। এইডা শরম না ভয়? জানিনা। তয় চিন্তায় মাতার রগ ঠর ঠর কইরা কাঁপে; কেন মুন্সিরপো'য় হারাইয়া গেল? কেন এই বাচ্চাডারে দেখলে আমার মায়া লাগে? কেন মুন্সিরপো'র মতন নাকটা চেপডা অইছে? শোভার নাকতো টিয়াপাখীর ঠোডের লাহান! শোভার জামাইর নাকও কম চেকনাই না।

ধুর শালা! শোভার জামাইর কতা চিন্তায় আনলে শইল্যে আমার আগুন জ্বলে। মাদারচোদ অমন সুন্দর বউ ঘরে রাইখ্যা এক বাজাইরা মাগীরে বিয়া করছে। মাঝে মইধ্যে আঙ্গো আড়তের সামনে দিয়া হাইট্যা যায়। মাইনষ্যের ভিতর একটা কালাবন আছে সেই কালাবনে একটা ভূত থাকে। এই ভূতেরে বোতলের ভিতর না আটকাইলে মানুষ ইতর অইয়া যায়।

শোভার কাছে কি সেই বোতলের মুক্ষা ছিলোনা? কত বোতলেইতো সে সরিষা, কাসুন্তি, সয়াবিন, আচার রাখছিলো মুক্ষা বন্ধ কইরা। কেন পারেনাই জামাইর কালাবনের ভূতেরে বোতলবন্দী করতে? আমারো একটা ফুটফুটা পোলা অইছে গেলবার বাইষ্যা কালে। আঙ্গো খেলার মাডে এইবার গোলিয়ার মেলা বইছে। হালারপুতে হারাইয়া যাওনের পর থিকা আমি আর এই মেলায় যাইনা। আর বেবাগ দোস্তরাও অহন যে যার ধান্দায় মইজ্যা গেছে, আগের মতন আর মেলায় যায়না কেউ।

শোভার বিয়া অওনের আগে, মেলায় শোভার হাতে বানাইন্যা গরু, হরিন, লালটুকটুকা বউ, রুমাল মুখে দেওয়া রসের নাগর, জোলাপাতি খেলোনের হাড়ি পাতিল উঠতো। হেই শোভা মইরা গেছে অহন আর কিচ্ছু বানায়না- বাপের বাড়ি অহন চুলায় শিঙ্গা ফুকায়। একবার গোলিয়ার মেলায় শোভারানী একটা নাও বানাইছিল। আমি হেই নাও লাইরা চাইরা তারে কইছিলাম "নাওডা বড় লাগতো, বড় অইলে তোমারে লইয়া ভাইষ্যা যাইতাম"। শোভা বেহেস্তী হূরের লাহান হাসি দিয়া কইছিল " মনে মহব্বত থাকলে তেতুল পাতায় ও বিছনা পাতন যায়; তোঙ্গ আর কি কমু! তোমরা তো তেতুল তলায়ই যাইতে পারোনা গাছে উঠবা কি আর পাতায় বইবা কি; অহন ভাগো যার নাও বড় আছে তার নাওয়ে উডোগা- পিতলা আলাপ পারোগা যত মন চায়"।

এই ছ্যামড়ির এই দেমাগটা আমারে যেমন কষ্ট দিত তেমন আবার ভালো লাগতো। তার দেমাগ যেন মান্দার কাডা, এই কাডায় বিন্দা যাইতাম আমি আর মুন্সির পোলায়। আর বাড়ন্ত মাইয়ার দেমাগে কাডা থাকবোনা কেন? ঘুমের মইদ্যে অগো শইল্যে বাতাস লাগলেও ওরা চমকাইয়া বুকের ওড়না ঠিক করে। এই মান্দার কাডার ওড়না গায়ে উঠলেই এরা যুবতী অইয়া যায়। যে এই মান্দার কাডার বিষ সহ্য করতে পারে সেই নদীতে ভাসতে পারে।

তয় কি মান্দার কাডার ভয় ছিল আমার? শোভার পোলার নাক চেপডা কেন মুন্সির পোলার মতন? মুন্সির পোলায় হারাইয়া যাওনের সময় কোন পথ দিয়া গেছিলো? সেই পথে কি অহনো কাডা বিন্দা শইল্যের রক্ত পইরা আছে? ভাবতে ভাবতে আমি গোলিয়ায় চইল্যা আহি। আমি একটা বড় নাও খুঁজি। আমার পোলার লেইগ্যা হরিন কিনি, গরু কিনি কিন্তু আমি একটা বড় নাও খুঁজি। আমি শোভার লেইগ্যা একটা বড় নাও খুঁজি। শোভার কি অহনো হেই দেমাগ আছে? সেকি আমার বড় নাও নিবো? বড় নাও গোলিয়াতে উডেনাই।

তয় মাঝারি একটা নাও খুঁজি। আমার সেই আগের গোলিয়ার তেতুল পাতার পুরান কথা মনে পইরা যায়। আমি নাও খুঁজি তয় বড়- মাঝারি ভাবতাছি কেন? তাইলে কোন মহব্বতের টানে আমি নাও খুজতে আইলাম? আমি অহনো তেতুল গাছতলায় যাইতে পারিনাই, অহনো তেতুল গাছে উঠতে পারিনা। আমার ছোট্ট ঘরে আমার বিছানাতো অনেক ছোট্ট সেই বিছানায় আমার পোলা ঘুমায় আমি ঘুমায় পোলার মায় ঘুমায়। সেই বিছানায় কি তাইলে সব মহব্বত পইরা আছে? তাইলে শোভার জন্য আমার মন কান্দে কেন? মায়া না ভালোবাসা নাকি নিজেরে খুব ভালোবাসি বইল্ল্যা নিজের না পাওনের দুঃখের লগে এই খেলা? তয় এইডা ঠিক আমার শোভার লেইগ্যা খুব কষ্ট লাগে।

বুকটা চিন চিন করে। আমি একটা নাও কিনছি; ছোট্ট একটা নাও। সেই নাও হাতে নিয়া আমার মন পশ্চিম পাড়ার দিকে দৌড় দিতে চায় ছাড়া গরুর মতন। শোভা কি আমার ছোট্ট নাও নিবো? মনের মইদ্যে এই কোন যুদ্ধ লাগে। আমি শোভার বাড়ি যাইনাই।

চুপ কইরা খালপাড়ে বইসা আছি। আমি কোন পয়গম্বর না, আমার কাছে কোন গায়েবি আওয়াজ আহেনাই। আমি এই নাওয়ে শোভারে- মুন্সির পো'র মতন দেখতে সেই বাচ্চারে উডাইতে পারুমনা নুহের মতন। মাটির নাওডা খালের পানিতে ছাড়তেই ডুইব্যা গেল; আমি নুহ নবী না আমি কোন পয়গম্বর না আমি মানুষ। চাইলেই আঙ্গো নাও ভাসেনা; চাইলেই তেতুল পাতায় মহব্বত হয়না।

----------------------------- আল্লাইয়ার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।