আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের লক্ষ্য-৬

এডিট করুন

জীবনের লক্ষ্য-৫ জীবনের লক্ষ্য-৪ জীবনের লক্ষ্য-৩ জীবনের লক্ষ্য-২ জীবনের লক্ষ্য-১ মা'র সাথে স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিলাম। প্রত্যেক শাখার শ্রেনী শিক্ষক নিজ নিজ শাখার ছাত্র ভর্তি তদাকর করছে। মা আমাকে নিয়ে সবুর স্যারের কাছে গেলেন। ভর্তির টাকা জমার স্লিপ দেওয়ার পর স্যার বললেন, "আপনার ছেলের নাম বলেন"। মা বললেন, "লেখেন, রাজ মো, আশরাফুল হক বারামদী"।

স্যার বললেন, এত বড় নাম? মা বললেন, হ্যা, পুরোটা লেখেন। স্যার বললেন, আবার বলেন, এক এক করে। আমার এই দীর্ঘ নাম নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম সেই কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুছ হাই স্কুলে। পরে ক্লাস সেভেনে উঠে আমি নিজেই নাম ছোট করে আশরাফুল হক বানিয়ে নেই। কিন্তু এস এস সি'র রেজিষ্ট্রেশন করার সময় আমার বাবা মা আমাকে এই দীর্ঘ নাম পুনরায় উপহার দেন।

আমি আসলে বহুনামী এক ব্যাক্তি। আমাকে বাসায় এবং আমার দাদার দিকের আত্মীয়রা সবাই ডাকে বাবু বলে। আবার আমার মার দিকের আত্মীয়রা সবাই ডাকে রাজ বলে। রাজ নামটা আমার মার দিক থেকে আসা। আমি এবং আমার এক খালাত বোন প্রায় একই সময়ে মায়ের পেটে আসি।

আমার মা আর খালা ঠিক করেন দুজনের মধ্যে যার আগে ছেলে হবে তার নাম রাখা হবে রাজ, আর মেয়ে হলে নন্দিনী। আমার দাদা ভাইয়ের অভিশাপে আমার খালার আগে মেয়ে হয় এবং সে নন্দিনী নাম ধারন করে। আর আমার দাদা ভাইয়ের আশীর্বাদে আমি ছেলে হয়ে জন্ম নেই এবং নাম ধারন করি রাজ। আমার আরেকটা নাম হল আশ্রাফুইল্যা বা আশরাফ বা আশরাফুল। এইটা আমার একান্ত কাছের বন্ধুরা ব্যাবহার করে।

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস করা শুরু করলাম। আমার কিন্ডার গার্ডেনের এক বন্ধু ফয়সালও আমাদের সাথে যোগ দিল। আমার রোল ২২০ আর ওর ২২২। প্রথমদিন ক্লাসে বিরাট গ্যাঞ্জাম, হই চই। সবুর স্যার রোল কল করলেন।

গলা ফাটিয়ে সবাই ইয়েস স্যার, উপস্থিত, প্রেজেন স্যার ইত্যাদি বলতে লাগল। আমি গলা যথাসম্ভব চড়িয়ে ইয়েস স্যার বললাম। স্যার একটু আমার দিকে তাকালেন। প্রেজেন্ট শেষে স্যার গাল গল্প করলেন। বিভিন্ন উপদেশ দিলেন যা আমরা উনার থেকে আরো ভালভাবে দিতে পারি।

সবশেষে প্রথম গল্পটা রিডিং পড়া দিয়ে চলে গেলেন। শহরের স্কুলগুলোর অবস্থা কি জানি না কিন্তু আমাদের কুদ্দুছ নগরের ক্লাস সেভেনের পোলাপানো ঠিক মত রিডিং পড়তে পারত না। আমরা আসলে খুবই পিছিয়ে ছিলাম। আমার অবশ্য রিডিং পড়া দিলে ভালোই লাগত। কারন বাসায় তাহলে পড়ার মত কিছু থাকত না।

রিডিং তো এমনিতেই পারি। পুরা ফাকিবাজীর এক দিন। সমস্যা হত শব্দার্থ পড়া দিলে। নিজের মত করে উত্তর দিলে সবুর স্যার দুই হাতে তার শক্তিশালী বেতটা দিয়ে গায়ের জোরে চারটা বাড়ী দিতেন। আচ্ছা এইভাবে মারের ভয় দেখিয়ে পড়া শেখানোটা কি আপনাদের কাছে একটা অপরাধ বলে মনে হয় না? একটা বাচ্চাকে আপনি এক্ষেত্রে বাংলা শিখাচ্ছেন নাকি নির্যাতন শিখাচ্ছেন? ছেলে বাচ্চাটা হয়তো বড় হয়ে তার বউয়ের উপর এই শিক্ষাটা প্রয়োগ করবে।

তা প্রথম দিন সব স্যারেরা গল্প করলেন। অংক ক্লাস নিতে এলেন হাবীব স্যার যদিও উনি উপরের ক্লাসে বাংলার শিক্ষক। উনি বেশ তেল মাখানো হাসি হেসে আমাদের সাথে গল্প করলেন। বেশ ভালো লাগছিল দেখতে। তা কিছুদিন পরিচিত হলাম ক্লাসের পোলাপানের সাথে।

এর মধ্যে এসে গেল নির্বাচনী জোয়ার। মানে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন আর কি। আমি চুপ করে বসে আছি, কারন ইতিমধ্যে পোলাপান জেনে গেছে কাকে ভোট দিলে তাদের লাভ হবে। বিপুল ভোটে আমি ফার্ষ্ট ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হলাম। পরে মা'র কাছ থেকে একশ টাকা নিয়ে চার কেজি জিলাপি কিনে পোলাপানকে খাওয়াইতে হইছিল।

অবশ্য সব ক্লাসেই নির্বাচিত ক্যাপ্টেনরাই খাওয়াইছে। ক-শাখার এক পোলা, আমার সাথে প্রাইমারীতে পড়ছে, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোদের ক্যাপ্টেন কে হইছে? বেটা ভাব দেখাইয়া বলে জানি না। অথচ আমি নিজ চোখে দেখেছি ও জিলাপী কিনে আনছে। পরে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলাম ওই হারামী ক্যাপ্টেন হয় নাই, আরেকজন হয়েছে। আমার আমলে ক্লাস ছিল সম্পূর্ণ শনির আখড়া।

যেখানে ক্যাপ্টেন নিজেই সারা ক্লাস ফাতরামী করে বেড়ায়, ক্লাসের বাকী পোলাপান কি করবে তা বলাই বাহুল্য। ক্যাপ্টেনের কাজ ছিল দুই ক্লাসের মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষক আসলে দেরী করলে খাতায় নাম লিখে রাখা এবং পরবর্তীতে তা শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে শাস্তির ব্যাবস্থা করা। কেউ টিফিন পলাইলে তার নাম লিখে রাখা এবং পরেরদিন সবুর স্যারের কাছে তা জমা দিয়ে বিশাল শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমার কল্যানে ছাত্ররা রাম রাজত্বে বাস করেছে। টিফিন পলানোর শাস্তি তাদের পেতে হয় নাই।

এত কিছুর পরেও কতিপয় ক্ষমতালোভী পোলাপান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে আমি কঠোর হস্তে তা দমন করেছিলাম। এই ক্লাস সিক্সেই আমি একদিন শব্দার্থ পড়া না পারার কারনে ৫০০ বার কান ধরে উঠবস করেছিলাম। মার খেতে আমার কোন লজ্জা ছিল না। অনেকে বলবেন আমি ক্যাপ্টেন হয়ে কিভাবে কান ধরি সবার সামনে। আরে আমি ক্যাপ্টেন হলেও পুরো ক্লাস ছিল আমার ইয়ার দোস্ত।

আমরা সবাই ছিলাম সমান। আমি আলাদা একজন হয়ে ক্যাপ্টেন ছিলাম না। আমি ওদেরই একজন ছিলাম। মহান সাম্যবাদী মনোভাব বিদ্যমান ছিল আমার মধ্যে। তা জীবন চলতে থাকে ক্লাস সিক্সের।

আমি চলতে থাকি সেই সাথে। বিধান স্যার ইংরেজী ক্লাস নিতেন। উনি ক্লাসে এসেই প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন কে কে পড়া শিখে আসিস নি দাড়া। যারা যারা আসেনি তারা দাড়াত। স্যারের শাস্তি ছিল দুই রকম।

কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা আর বেতের বাড়ি খাওয়া। স্যার একেক দিন একেক শাস্তি দিতেন। সত্যি কথা বলতে কি আমি কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে খুব পছন্দ করতাম। স্যার কখনো নিজের সাথে বেত আনতেন না। সবার সাথে আমিও পড়া না পারার দলে দাড়াতাম।

স্যার যদি কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিতেন তাহলে সবার সাথে আমিও কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে যেতাম। আর যদি বেতের বাড়ি দিতে চাইতেন তাহলে বলতেন, যা একটা বেত নিয়া আয় অফিস থিকা। ক্যাপ্টেন হিসেবে এই দায়িত্বটা আমার উপরই পড়ত। আমি সুন্দর বেতটা এনে স্যারের হাতে দিয়ে বসে পড়তাম। আমি এখন পড়া পারি।

চলবে................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.