আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট : (সিনেমাখোর পোষ্ট)

আদর্শটাকে আপাতত তালাবদ্ধ করে রেখেছি...
(ব্লগে মাসুম ভাইকে দেখতাম মুভি নিয়ে পোষ্ট দেন। তার ব্লগ খেয়াল করলে ভাল ভাল মুভির সন্ধান পাওয়া যায়, তারপর দেখলাম আরও অনেকেই আসলে ব্লগে মুভি নিয়ে পোষ্ট দেন, হাসান বিপুল , দারাশিকো , ফাহমিদুল হক , দুরন্ত , মেহরাব, শুন্য আরণ্যক আরও অনেকে। সিনেমাখোর নামে চমৎকার একটা গ্রুপও হয়েছে। সেখানে ভীষন ভাল ভাল পোষ্ট। ভয়ংকর ভাল লাগছে আসলে এসব দেখে।

আমি নিজে ওতটা সিনেমাখোর নই। সিনেমা দেখার সময় করে উঠতে পারি না তেমন একটা ছাইপাশ নানা হাবিজাবি করে। তবুও মাঝে মাঝে একটা দুটা সপ্তাহান্তে দেখার চেষ্টা করি, মাঝে মাঝে অনেক ভাল মুভি দেখা হয়ে যায়, মাথাটা কিছুক্ষন ঝিম ঝিম করে। মনে হয় দুনিয়ায় কতকিছুই না হয়ে যাচ্ছে তার কটা খবরই বারাখছি, দেখছি। মানুষ কেমনে বানায় এসব! সে যাই হোক, চিন্তা করছি মাঝে মাঝে নিজের দেখা কিছু মুভি নিয়ে একটু গপশপ করব ব্লগে পোষ্ট দিয়ে।

কারনটা সহজ, ব্লগই এমন একমাত্র জায়গা, যেখানে আমি আজাইরা কিছু বলতে গেলেও কেউ মানা করবে না। তাই বলতে যাচ্ছি ছাইপাশ। ) ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট ইটালিয়ান আমেরিকার ফিল্ম ডিরেক্টর ফ্রাংক ক্যাপরার প্রথমদিককার মুভি। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩৪ সালে, যখন পৃথিবীর ইতিহাসে নির্বাক মুভি সবাক মুভির দিকে তার সাবলীল যাত্রা সবে মাত্র শুরু করেছে। মুভি নির্মাতা তখন নানা রকম আইডিয়া থেকে মুভি তৈরি শুরু করেছেন।

ক্যাপরার এই মুভিটি স্যামুয়েলস হপকিন্স এডামস নামের এক আমেরিকার সাংবাদিক লেখকের 'নাইট বাস' নামের একটি গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। খুব সহজ সরল একটা কাহিনী মুভিটার। বিশাল ধনী এক লোকের মেয়ে এলি তার পছন্দের মানুস কিং ওয়েষ্টলীকি বিয়ে করতে চায়। তার বাপ তাকে এই বিয়ে থেকে বিরত থাকতে বোঝানোর চেষ্টা করলে এলি বাপের জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর তার ধনী বাপ প্রভাব খাটিয়ে চারিদিকে এলির খুজে হুলিয়া জারি করেন।

এদিকে এলি নিউইয়র্ক গামী বাসে চড়ে বসে। সেই বাসের যাত্রী ছিল নিউইয়র্কের এক পত্রিকার সাংবাদিক পিটার ওয়ার্ন। সে এলিকে চিনতে পারে সহজেই, কেননা ততক্ষনে এলির ছবি প্রত্যেক পত্রিকার হেডলাইন হয়ে গিয়েছিল। চতুর পিটারের ক্যারিয়ারে তখন মন্দা, এক্সক্লুসিভ কোন নিউজের অভাবে বেচারা অনেক চাপের মধ্যে। সে এলিকে প্রস্তাব দেয়, এলি যদি তাকে সাথে রেখে এলির এই স্টোরি কাভার করতে দেয় তাহলে সে এলিকে সাহায্য করবে ওয়েসলির সাথে দেখা করিয়ে দেবার, তানা হলে এলির বাপকে বলে ধরিয়ে দেবে।

উপায় না দেখে এলি নিমরাজী হয়। এরপরে শুরু হয় তাদের রোমান্টিক যাত্রাপথের। পথে যাত্রাবিরতীতে এলি এক জায়গায় গিয়ে আসতে দেরী করলে বাস তাকে রেখেই চলে যায়, পিটার ইচ্ছে করে তখন থেকে যায় এলির জন্যে। তারা শহরে ঘুরে বেড়ায়, রাতে স্বামীস্ত্রী হিসেবে মোটেলে থাকে, দুজনের বেডের মাঝখানে পিটার কম্বল দিয়ে দেয়াল দিয়ে রাখে। পিটারের ব্যবহারে অবাক হয় এলি, পিটারের ব্যবহার একটু রুক্ষ, পেশাদার, কিন্তু দায়িত্বশীল।

পরে আবার বাসে চড়ে তারা, বাসে এলিকে এক লোক চিনতে পারায় তাকে জানের ভয় দেখিয়ে তাড়ায় পিটার, কিন্তু বাসে আর চড়ে না। এদিকে পথে বাপ মরা এক ছেলেকে মায়ের চিকিৎসার জন্য পিটার তার পকেটের সব টাকা দিয়ে দেয়ায় তাদের হাতে টাকা ছিল না, তাই বাস ছেড়ে দেয়ায় তাদেরকে রাত কাটাতে হয় গোয়াল ঘরের মত জায়গায়। পরদিন রাস্তায় এলি তার পা দেখিয়ে এক গাড়িতে লিফট নেয়, পরে ওই গাড়ির মালিক তাদের মালামাল চুরি করতে চাইলে পিটার গালিওয়ালাকে মেরে গালি নিয়ে নেয়। এরমধ্যে এলির বাপ ঘোষনা করে এলি ফিরে আসলে এলির সাথে ওয়েসলির বিয়ে মেনে নেবে। সেদিন আরেক রাত কাটায় এলি আর পিটার একটা মোটেলে কম্বল দিয়ে দেয়াল তৈরি করে দু বেডের মাঝে।

এলি পিটারকে প্রোপোজ করে, বলে তাকে ছেড়ে সে থাকতে পারবে না, কিন্তু পিটারের ব্যবহার তখন থাকে প্রায় নির্লিপ্ত। সেদিন ভোররাতে পিটার তার সম্পাদকের কাছ থেকে তার প্রেমকাহিনীর বিনিময়ে ১০০০ ডলার নিয়েআসতে যায় যাতে সে এলিকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তু ওদিকে মোটেল মালিক ভেবে বসে এলিকে ছেড়ে পিটার চলে গেছে আর এলি ভাড়া দিতে পারবে না, তাই তারা এলিকে তাড়িয়ে দেয়। পিটার টাকা নিয়ে মোটেলের পথে আসতে থাকে, কিন্তু এলি পিটার তাকে ফেলে চলে গেছে ভেবে বাবাকে ফোন করে দেয়। পিটার শেষপর্যন্ত দেখতে পায় এলি বাবার কাছে চলে গেছে, সেও ভুল বোঝে যে এলি ওয়েসলিকে বিয়ে করতেই গেছে। এলির সাথে ওয়েসলির বিয়ের আয়োজন শুরু হয়।

এলির বাপ এলির মাঝে পরিবর্তন দেখতে পেয়ে তাকে জিগ্গেস করে সে কাউকে ভালবাসে কিনা। এলি পিটারের কথা বলে। এলিব বাপ পিটারের নাম শুনে চমকে যায়, কেননা পিটার এলির বাপকে টেলিগ্রাম করেছে তার মেয়ের ব্যাপারে টাকা পয়সা বিষয়ক আলাপ করার জন্যে। এলি সেই টেলিগ্রাম বাপের পকেট থেকে কেড়ে নিয়ে পড়ে ফেলে। সে ভাবে পিটার তার বাপের ঘোষনা করা মেয়ের খবর দিতে পারলে ১০,০০০ ডলার পাবার লোভেই এমন করেছে।

সে দুখী হয়। এদিকে পিটার যখন এলির বাবার সাথে দেখা করতে আসে তখন সে এলির বাবার কাছে শুধুই তার ৩৯ ডলার ৬০ সেন্টস ফেরত চায় যা সে এলির জন্যে পেট্রোল কিনতে খরচ করেছে। এলির বাবা অবাক হয় আর বুঝতে পারে পিটারই এলির জন্য বেশী ভাল। এলির বাপ বিয়ের সময়ের আগে এলিকে সব বলে, ওয়েসলীর চেয়ে পিটার ভাল সেটা বলে। বিয়ের ঠিক আগে যখন কনে কবুল বলবে তখন এলি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়ে ড্রাইভওয়েতে আগে থেকে রাখা গাড়িতে করে চলে যায়।

এলির বাবা ওয়েসলিকে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে দেয় এলি যেহেতু তাকে বিয়ে করেনি, কিন্তু সে খুব খুশি হয়। এলি পিটারে বিয়ে করে ফেলে। মুভিটি দেখা না থাকলেও কাহিনী পরিচিত মনে হচ্ছে? সেটা হওয়াই স্বাভাবিক, কেননা এই মুভিটি দিয়ে পরে হলিউডে, বলিউলে, কলকাতায়, বাংলাদেশে কত যে মুভি তৈরি হয়েছে তার শেষ নেই প্রায়। পুরো মুভিটিই কপি করে বানানো হয়েছে হিন্দীতে রাজকাপুরের 'চোরিচোরি', আমিরখান পুজা ভাটের বিখ্যাত জনপ্রিয় মুভি ' দিলহ্যায় কি মানতা নেহি', বাংলায় উত্তম কুমারের 'চাওয়া পাওয়া'। এছাড়া এই মুভির কিছু দৃশ্য তো হিন্দী বাংলা মুভির এককালের কমন দৃশ্য।

যেমন গরুর খড়ের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে নায়ক নায়িকার রাত কাটানো। এমন দৃশ্য এই মুভিতেই সেই ৩৪ সালে প্রথম দেখানো হয়েছিল, পরে এটি তো যেকোন মুভির অবশ্যযুক্ত দৃশ্য হয়ে যায়। এই মুভির আরেকটি জনপ্রিয় ও সমালোচকদের আলোচনার দৃশ্য হল , যখন রাস্তায় পিটার আর এলি লিফট নেবার জন্যে গাড়ি থামাতে যায়। পিটার নানা কৌশন করেও পারে না, সেক্ষেত্রে এলি প্রথমবারেই তার স্কার্টটা উরুর উপর তুলে ধরে সহজেই গাড়ি থামিয়ে ফেলে। এই দৃশ্যটিও বেশ কমন দৃশ্য হয় পরে মুভি ইতিহাসে।

কতবার কত মুভিতে এই দৃশ্য দেখেছেন মনে পড়ে? মুভি দেখতে দেখতে মজা পাওয়া যায় ওই সময়কার আমেরিকা দেখে। নিউইয়র্কগামী দুরপাল্লার বাস দেখে। আজকের গ্রেহাউন্ডের পুর্বসুরীকে দেখতে খারাপ লাগে না। মুভিটি দেখার সময় এটির মেকিং কেমন সেদিকে তাকালে অন্যায় হবে, কেননা ভাবতে হবে এটি কখন তৈরি। তখন প্রযুক্তির অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল।

অনেক দৃশ্যও নেয়া হত খুব সাধারন ভাবে। যেমন এলিপিটার যখন গাড়িতে করে যাচ্ছে তখন তাদের পেছনের ফেলে আসা রাস্তার দৃশ্য একেবারেই এম্যাচার লাগে। কেননা তখন সরাসরি গাড়ি চালানোর দৃশ্য শ্যুট করা হত না। স্থীর গাড়িতে চরিত্র স্টিয়ারিং নাড়াত, গাড়িকে একটু নাড়াচাড়া করা হত, পেছনে পর্দায় আগে থেকে শ্যুট করা চলন্ত রাস্তার দৃশ্য জুড়ে দেয়া হত। হিন্দী মুভি 'ওম শান্তি ওম' দেখে থাকলে একটি গানের দৃশ্যে দেখেছেন নিশ্চই ব্যাপারটা কেমন।

সেকালে এই মুভিটি ছিল অনেক উন্নতমানের ছবি। এখনও মানুষের পছন্দের তালিকায় এ মুভিটার অবস্থান অনেক উপরে। মুভিটি ৫ টা অস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে ৫ টিই জিতেছিল। ফ্র্যাংক ক্যাপরা পেয়েছিলেন, অস্কার পেয়েছিলেন পিটার চরিত্রে অভিণয় করা ক্লার্ক গ্যাবল, এলি চরিত্রে অভিনয় করা ক্লডিয়া কোলবার্ট। একটা মিষ্টি সহজ সরল রোমান্টিক মুভি দেখতে হলে ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট আসলেই ভাল লাগার মত একটা মুভি, দেখতে দেখতে মনে হবে কাহিনী জানা, কিন্তু তবুও ভাল লাগবে।

পুরনো মুভিগুলোর মজাই মনে হয় এমন। মুভিটি দেখতে চাইলে এখানে লিংক দিয়ে দিলাম। Click This Link লিংকটা ইউকো'র। অত বেশী ভাল প্রিন্ট না। ওত আগের মুভি কতই বা ভাল হবে।

তবে টরেন্ট থেকে আমি খুবই ভাল একটা প্রিন্ট ডাউনলোড করেছিলাম। কিন্তু কোন টরেন্ট লিংক এখন খুজে পাচ্ছি না।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।