আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ বিকেলের আলোয় ... (২)

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
শেষ বিকেলের আলোয় ... (১) আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে আমার হাতে চায়ের কাপ তুলে দেয় ভুট্টো। আমার সাবধনী চোখ ওর নকল হাসিটার পেছনে লুকিয়ে থাকা ভয়টাকেও দেখতে পায়। কখনও কখনও মানুষের চোখের ভাষা পড়তে সাইকোলজিস্ট না হলেও চলে। চাপা একটা অস্বস্তি ঘিরে ধরে আমাকে। টি-স্টলটার আশে পাশে অনেকটা জায়গা ফাঁকা, কেউ আকাশ থেকে উদয় না হলে দেখতে পাবো নিশ্চিত।

আর আমাকে হিট করতে হলে ওরা নিশ্চই দু'একজন আসবেনা। আমার এখানে আসার খবর এতক্ষনে ওদের জানা হয়ে যাবার কথা। চমকে যাবে নিশ্চই, আর আমিও সেটাই চাই। আজকে শো ডাউনটা করতে না পারলে কালকে আর ওদের সেই জোস থাকবেনা। "ভূট্টো, কামালরা কই রে? ওদের দেখিনা ক্যান" - খুব নিস্পৃহ ভাবে জিগেস করি।

এটা আসলে ভাওতা, ভাবটা এমন, যেন ওরা পাত্তা দেয়ার মত কেউ না। এতে আর যাই হোক না কেন, ওদের ভয়টা আরেকটু বাড়বে। ভুট্টোর দায়সারা গোছের উত্তরটা শোনার অপেক্ষা না করেই বাইকে চেপে বসি। এলাকাতে একটা চক্কর দিয়ে ফিরে যাব কলেজে। যদি আমার ধারনা ভুল না হয়, ওরা শো ডাউন করবেনা আজকে আর, আমি কেন এসেছিলাম, কি করেছি, না জেনে ওরা এক পা-ও দেবেনা কলেজের দিকে।

কামালকে আমি অনেকদিন থেকেই চিনি। বাইকটা স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় ওঠার সাথে সাথেই বাইকের গা ঘেঁসে ঘ্যাচ করে শব্দ করে এসে দাঁড়ায় সাদা মাইক্রোটা, সামলে নেবার আগেই টেনে হিঁচড়ে আমাকে মাইক্রোর ভেতর তুলে নেয় শক্তিশালী কয়েকটা হাত, বাইকটা পরে থাকে ভুট্টোর দোকানের সামনে। মাইক্রোর ভেতর আলো আধারিতে আমাকে চেপে ধরে থাকা হাতগুলোর মালিকদের একজনকেও চিনতে পারিনা, তবে ওদের কঠিন মুখগুলোই বলে দেয় যে ওরা ভালভাবেই জানে ওদেরকে কি করতে হবে। মুহুর্তে ভুট্টোর চোখে ভয়ের ছায়ার রহস্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমার কাছে, আর তখনই মাথায় শক্ত কিছুর আঘাতে পৃথিবীটা দুলে ওঠে আমার। কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম জানিনা।

চোখ খুলতেই মাথার পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভব করি। হাত নড়াতে গিয়ে টের পাই হাত দু'টো পেছনমোড়া করে বাঁধা, পায়েও তাই। বালির মধ্যে শুয়ে আছি আমি, চারপাশের ঘন শনের ঝোপ বলে দিচ্ছে নদীর চরে নিয়ে আসা হয়েছে আমাকে। আশে পাশে কারও উপস্থিতি টের পাচ্ছিনা। তার মানে দিনের আলো থাকা পর্যন্ত আমাকে এখানেই রাখবে ওরা, রাত নামার পর এই অবস্থাতেই পানিতে ভাসিয়ে দেবে।

আমাকে খুন করার কোন চিহ্নই থাকবেনা। একটু নড়ে উঠতেই আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি কোমড়ে গোঁজা ছোট্ট রিভলবারটার আস্তিত্ব। হয়তো এটা কেড়ে নিতে ভুলে গেছে ওরা, অথবা ইচ্ছে করেই নেয়নি - পরে নেবে বলে। জানে হাত পা বাঁধা অবস্থায় কিছুই করতে পারবোনা আমি এটা কাছে থাকলেও। ওদের প্লানটা বুঝতে পারছি এখন আমি।

কামালরা বুঝেই গেছিলো যে আমি থাকা অবস্থায় কলেজে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা বৃথা। কিন্তু ওদের পক্ষে আমাকে সরিয়ে দেয়া অসম্ভব। কাজেই বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনেছে, সম্ভবত প্রফেশনাল খুনি এরা। সেদিন শো ডাউনের কথা থাকলেও আসলে কলেজে যেত না কামালরা। সবার কাছে অচেনা এই গ্রুপটাকে দিয়েই আমাকে তুলে আনতো যে কোন ভাবে।

ওদের পাড়ায় গিয়ে আমি ওদের জন্য কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছি। আত্মবিশ্বাসের চরম সীমায় পৌছে গেছিলাম আমি, আগে পরের কিছুই না ভেবে পা দিয়েছি ওদেরই পাতা ফাঁদে। তার চাইতেও বড় বোকামি করেছি কাউকে বলে না এসে। কেউ জানবেনা আমি কোথায় গেছি, আর কেউ ভুল করেও খুঁজতে যাবেনা আমাকে ওদের পাড়ায় অথবা এই চরের মধ্যে। কথাটা মনে হতেই অনেক দিন পর ঘাড় থেকে শীতল একটা স্রোত নেমে যাবার অনুভূতি টের পেলাম।

ক্রমশ ... শেষ বিকেলের আলোয় ... (৩)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।