আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক যন্ত্রনা- ১০(জুম্মা নামাজ)

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

নাগরিক যন্ত্রনা- ১০(জুম্মা নামাজ) জুম্মা নামাজ বাসায় পড়া যায়না, মসজিদেই পড়তে হবে। জুম্মা নামাজের ফজিলত নিয়ে অনেক কথা আছে-আমি এখানে জুম্মা নামাজ কিম্বা অন্য কোন নামাজের ফিজিলত বর্ণনা করবোনা-সেযোগ্যতাও আমার নেই। আমি জুম্মা নামাজে নিজ অভিজ্ঞতায় কতিপয় মুছুল্লিদের(যারা জুম্মা নামাজ আদায় করেন)নিয়ে কিছু বিড়ম্বনার কথা উল্ল্যেখ করবো। ধর্ম বিশ্বাস, ঐতিয্য এবং উত্তরাধিকার ভিত্তিতেই বেশীর ভাগ ছেলে বুড়ো মুসলমানেরা জুম্মা নামাজ আদায় করতে শুক্রবার মসজিদে হাজির হন। আমিও জুম্মা নামাজ আদায় করি।

অনেক বছর পুর্বে আমার মনে ইচ্ছে হলো-আমি ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদের জুম্মা নামাজ আদায় করবো। ১৯৮৮ সনে শুরু হলো আমার এক এক শুক্রবার এক এক মহল্লায় গিয়ে জুম্মা নামাজ আদায় করার প্রজেক্ট। নর্মালী এরিয়া ধরে আমি জুম্মা আদায় করতে শুরু করি। তবে কখনো পেশাগত কাজের জন্য নির্দিট এলাকার বাইরে থাকলেই আমার সিরিয়াল মেন্টেইনের ব্যতয় হতো। আমি প্রতিটি মসজিদেই নতুন নতুন অভজ্ঞতা অর্জন করি।

আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও বেশ কয়েকবার নামাজ আদায় করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে ওখানে যতবার নামাজ পড়েছি হয়তবা কখনো আমার স্যান্ডাল চুরি হয়েছে, কখনোবা মানিব্যাগ চুরি হয়েছে। জুতা-স্যান্ডাল চুরি অবশ্য মসজিদে হর-হামেশাই হয়ে থাকে। তবে বায়তুল মোকাররমের পকেটমারেরা মানিব্যগ হাতাতেও সিদ্ধহস্ত। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট ঘেষে যেসব মুছুল্লীগন বসে তারা প্রায় সবাই জামাতে ইসলামী, হিজবুত তাহরীত কিম্বা অন্য কোন ইসলামীক রাজনৈতিক দলের ক্যাডার/ সদস্য।

এরা নামাজ শেষ হবার সাথে সাথে বিভিন্ন দাবী দাওয়া সম্বলিত বক্তৃতা দিতে শুরু করে। যা বলছিলাম-বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়ে একটা কমন অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে-তা হলো মোবাইল কালচার। সব মসজিদেই নোটিশ লাগানো আছে-"মসজিদে আপনার মোবাইল বন্ধ করে রাখুন"- কিন্তু সেকথায় কেউ কান দিচ্ছেনা। বিশেষ করে যারা তুলনামুলক দামী মোবাইল সেট ইউজ করেন। যারা একটু দামী মোবাইল সেট ইউজ করে-তারা তাদের মোবাইল সেট কতক্ষন হাতে নাড়াচাড়া করে, আবার সামনে যেখানে নামাজের সেজদা দেয়-সেখানে রাখে।

মাঝে মধ্যে সে সব মোবাইলে কল আসে...... এই কিছিমের মানুষগুলো আসলে বেশীর ভাগই বেকার, বাবার হোটেলের অন্ন ধংশকারী। এই টাইপের "শুক্কুরবাইররা" মুছিল্লারা অনেক সময় ২/৩ টা পর্যন্ত মোবাইল সেট হাতে নিয়ে মসজিদে আসে একটা চ্যারিটি সংগঠনের কাজে প্রতি শুক্রবার আমাকে মিরপুর এলাকায় যেতে হয়। গত শুক্রবার আমি নামাজ আদায় করতে যাই-স্থানীয় সাংসদ(এমপি) সাহেবের বাড়ীর কাছের একটা মসজিদে। মসজিদে ঢুকে দেখি-ইমাম সাহেবের পিছনের লাইনে অনেকজন মুছুল্লীদের নামাজ পড়ার যায়গা খালি। আমি খালি যায়গায় যখনি নামাজের জন্য দাড়িয়েছি-তখন ইমাম সাহেব সহ বেশ কজন তেড়ে এসে বললেন-এখানে বসবেননা, এখানে বসবেননা।

আমি প্রশ্ন করি-কেনো বসবোনা? উত্তর-“ওখানে এম্পি(এমপি) সাব বসবেন”। আমি ৩য় লাইনে গিয়ে ফাঁকা যায়গায় বসলাম। নামাজ শুরুর পুর্ব মুহুর্তে দশাসই চেহারার এম্পি সাব এলেন প্রায় ২০ জন সাংগপাংগ নিয়ে। এমপি সাব সবার সাথে হাত মেলালেন, কারো সাথে কোলাকুলি করে ইমাম সাহেবের পিছনে বসলেন। তার সাংগপাংগরা তাঁর পাশে বসলেন।

এমপি সাহেবের হাতে ৩ টা মোবাইল ফোন তার সামনে রাখলেন। কোমড় থেকে রিভলবার বের করে সামনে রাখলেন। তাঁর সাথে থাকা একজন আবার একটু কাত হয়ে থাকা রিভলবার সোজা করে রাখলেন। এমপি সাবের সাথে থাকা সবার হাতেই একাধিক মোবাইল-যা সব সামনে রাখা আছে। সবারই মোবাইল রিঙ্গার অন করা।

অনবরত ফোন আসছে এবং সবাই ফোনে কথা বলছেন। এমপি সাহেবও মোবাইলে কখনো উচু গলায়, কখনো নীচু গলায়। কাউকে ধমকিয়ে, কাউকে অফিসে দেখা করতে বলেন। উত্তোরাধিকার সুত্রে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক এমপি সাহেব যখনি মসজিদে ঢূকেছেন-তখন কড়া পারফিউমের গন্ধে বিরাট মসজিদ মৌ মৌ সুবাসে ভরে যায়। সমস্ত পরিবেশটাই একটা রাজকীয়রুপ ধারন করে! আমি শুধু অবাক হয়ে এমপি সাহেবকে দেখি।

দেখতে অনেকটা পুরনো ঢাকার নান্নু নিয়া বাবুর্চীর মত লাগে। একটা কল এলো-এমপি ফোন রিসিভ করে খুব উত্তেজিত গলায় বললেন-"তোরা কি আমারে জুম্মা নামাজটা পরয্যন্ত পড়তে দিবিনা?নামাজের পর কল করিস"। আসলেই এমপি সাহেব খুব ব্যস্ত। নামাজের সময়ও জনসেবা করেই যাচ্ছেন! অন্য একধরনের মুছুল্লী আছে-যারা শুধু মাত্র জুম্মার ২ রাকাত ফরজ নামাজই আদায় করেন। এই ধরনের মুছুল্লীরা খুব ভয়ংকর টাইপের।

মহল্লার পাতি মস্তান। এরা মসজিদের আসে জুম্মার খুতবা দেবার মাত্র কয়েক মিনিট পুর্বে। তখন মসজিদ মুছুল্লীতে কানায় কানায় ভর্তি। এরা মসজিদে ঢুকেই অন্য সব মুছুল্লীদের ডিংগিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাবে প্রায় সামনের কাতারে। আগে এসে বসা শারিরিক দুর্বল, ভদ্র মুছুল্লীদের সরিয়ে দিয়ে নিজে বসবে সামনের কাতারে।

ফরজ নামাযে সালাম ফেরানোর সাথে সাথে এরা আবার একই ভঙ্গিমায় মসজিদ থেকে বেড়িয়েই সিগারেট ফুঁকতে থাকবে। শুনেছি বর্তমান এমপি সাহেবও কয়েক বছর পুর্ব পর্যন্ত এইগ্রুপের সদস্য ছিলেন। জুম্মার দিন সব থেকে বড় বিড়ম্বনা হলো সদর রাস্তা বন্ধ করে জুম্মা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। ঐ দিন মুছুল্লীদের ভীড়ে মসজিদে যায়গা হয়না। তাই রাস্তায় চট/খবরের কাগজ বিছিয়ে রাস্তা বন্ধ করে নামাজ পড়তে শুরু করেন।

ঐসময় অন্যান্য যান বাহন, পথচারী এমনকি মুমুর্ষ রোগী নিয়ে এম্বুলেন্স পর্যন্ত অন্তত ত্রিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়! এবিশয়ে বেশী কিছু লিখতে গেলেই একশ্রেনীর পাঠকের রোষানলে পড়তে হবে।


আরো পড়ুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.