আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও! বিপ্লবী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোল। নির্মাণ কর নতুন সংস্কৃতি!

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

স্বাধীনতা ও জনগণের পতাকা হাতে তুলে নাও, উচুতে ওড়াও! ক্ষেতে কলে ক্লাসে কিংবা বাজারে; মুক্তিকামী সন্তানের রক্তধোয়া পবিত্র এ মাটিতে কেমন আছি আমরা? প্রাত্যাহিক ঘটনা-দুর্ঘটনা-প্রবঞ্চনার জের আপনাকে বলতেই হবে, 'ছায়া সমেত তলিয়ে যাচ্ছি'। তাকিয়ে দেখছি, রাষ্ট্রীয় জীবনের হাজারো সংকট আমাদের অন্ধকারের অতলে টেনে নামাচ্ছে। কিন্তু এই সব সর্বব্যাপী সংকটের কোথায় শেকড়; বিষ বৃক্ষের মর্মমূল? "আমাদের চোখ যত খোলে মুঠো তত শক্ত হয়" চিন্তার মরচে ঘষে উত্তর খুঁজি; একটি জাতির স্বাধীনতা যেখানে অধরা, জনগণের গণতন্ত্র যেখানে চির নির্বাসিত; বলুন সেখানে ভিন্ন কোন পরিণতি কি আদৌ সম্ভব! আগেও আমরা পরাধীন ছিলাম। উপনিবেশিক শক্তি ও তাদের তাঁবেদাররা নিয়ন্ত্রণ করেছে আমাদের জাতীয়-রাষ্ট্রীয়-জীবন; আমাদের অর্থনীতি-রাজনীতি-সংস্কৃতি। আমাদের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ঘটেছে ওদের সমৃদ্ধি।

আর আমরা বারবার সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াতে চেয়েছি। আপনিও জানেন, এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধা করেনি কখনো! বিদেশী শোষণ-নিয়ন্ত্রণমুক্ত সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণ করব বলে পরাধীন আমরা চেয়েছিলাম জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। চেয়েছিলাম আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি; জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার। নিপীড়নকারী পুরনো উপনিবেশিক-সামন্তীয়-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি চুরমান করে নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জমিন; যেখানে এদেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি-মধ্যবিত্ত, ছাত্র, যুব, নারী, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত সংখ্যালঘুরা হবে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মালিক, সর্বময় নীতি নির্ধারক-বাস্তবায়নকারী; যেখানে ঘৃণ্য বিদেশী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের থাকবেনা প্রতিণিধিত্বের কোন অধিকার; যেখানে কেবল সংকট নিরসনই নয়, অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে খোদ জনগন! অনেক আগুন ও রক্তের বিনিময়ে পূর্ববাংলা হতে উৎখাত হল বৃটিশ এবং পরে পাকিস্তানি উপনিবেশিক দস্যুরা। কিন্তু, আমরা দু'বারই প্রতারিত হলাম।

মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ আমাদের স্বাধীনতা হরণ করল; নতুন করে শৃঙ্খলিত হল জাতি। তাদের তাঁবেদার প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী কুক্ষিগত করল ক্ষমতা। শাসকশ্রেণীর একদলীয়, সামরিক, সংসদীয় কত বাহারী 'গণতন্ত্র', এলোগেল, জনগণের গণতন্ত্র রইল শুধু 'মুক্তির মন্ত্র' হয়ে। বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছে বারবার। তাই জাতীয় মুক্তি ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম শেষ করতে পারিনি।

অনেক দাম দিয়ে বুঝেছি,লক্ষ্য যদি সুনির্দিষ্ট না হয়, বন্ধু বেশী-শত্রুর বিভ্রান্তি লক্ষ্যচ্যুত করে সহজে। "এসো নিচু হয়ে ভরি শুকনো বারুদ আশার নতুন খোলে, বীরের হৃদয় যেন লক্ষ্য না ভোলে"এ জাতি ও জনগনের শত শত বছরের স্বপ্নটিকে আমরা পুনর্বার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চাই। উচ্চতম কন্ঠে ঘোষণা করতে চাই, "স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হল সেই যাদুর চাবি যা সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিটি দ্বার দেবে একে একে খুলে! নিশানাটা ঠিক কর, গোটা জাতি এক হও, লড়াই কর!" কিন্তু, দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর শিক্ষা ব্যবস্থা, দালাল বুদ্ধিজীবী আর গণমাধ্যমগুলো- এ সত্যকে হাজারও উপায়ে আড়াল করে চলেছে। তারা উপনিবেশবাদকে 'উন্নয়ন সহযোগিতা', শাসক শ্রেণীর লুন্ঠনের ভাগাভাগাকিকে 'গণতন্ত্র' আর তা নিয়ে কামড়াকামড়িকে 'গণতন্ত্রের সংকট' বলে চালাচ্ছে। তাদের মিথ্য আশ্বাস, প্রতারণা ও বিভ্রান্তির জাল ছিঁড়ে সত্য উপলব্ধি করা হয়ে পড়েছে দুঃসাধ্য।

আমরা দেখছি, শাসকগোষ্ঠীর সংকটের বোঝা জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে, জনগণের টুঁটি চেপে ধরে বিদেশীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে দেশ, সাম্রাজ্যবাদের কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে 'দুর্নীতিমুক্ত', 'সুশাসন' ও 'দক্ষতা'র সাথে। সংকটের সুযোগ নিচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি। অন্যদিকে,খাদের কিনারা থেকে ঘুড়র দাঁড়াচ্ছে মানুষ। খালিশপুরে, গার্মেন্টস আন্দোলনে, কানসাট ও ফুলবাড়িতে মানুষ অস্তিত্বের সংগ্রামে জীবন বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেনা। অথচ, সংগ্রামগুলো মাঝপথে দিকভ্রান্ত; স্বতঃষ্ফুর্ত-অস্থায়ী; বেড়ে ওঠার পথ পাচ্ছে না, আসছে না কাঙ্খিত ফল।

জনগন আজ অসংগঠিত, দিশাহীন। "চষা মাটির মতো এবড়ো থেবড়ো সময়; চলতে কষ্ট হলেও জানি, তার গর্ভে ছড়ানো আছে বীজ" এই দুঃসময়ে আমরা চাইছ, জনগণের প্রতিটি সমস্যার ব্যবচ্ছেদ করে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে। জনগণের সামনে আশু ও চূড়ান্ত বাধাটি কী, তা তুলে ধরতে। চাইছি, সেই বাধা উপড়ে ফেলার জন্য জনগণকে সংগঠিতক হতে ও সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগাতে, যেন তারা সংগ্রামের দিশা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিশানায় চির অবিচল থাকে। আজ বিরাট সংখ্যক তরুন ছাত্র-সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের সৃজনশীল কর্মোদ্যমকে জাতি ও জনগণের সেবায় নিয়োগ করতে উদগ্রীব।

তাই এখনই উৎকৃষ্ট সময়, এদেশ ও জাতির পুত্র-কন্যাদের বিপুল সৃজনশীল শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি-মধ্যব্তি জনগণের অপরাজেয় শক্তিকে জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক অবিচল সংগ্রামে জাগরিত, সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করার, যাতে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। "সাহসে বুক বেঁধে এখন আমাদের লড়াই" চাই সচেতন সংগঠিত নিপুন আন্দোলন প্রপদ সমাজের আমূল রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতি ও জনগণের চেতনার রূপান্তরে প্রয়াসী। চেতনার জগত আমাদের লড়াইয়ের মাঠ। সংগ্রামী বৃদ্ধিবৃত্তিক ও শিল্প সংস্কৃতির অনুশীলন আমাদের লড়াইয়ের ধরন। আলোচনা, প্রকাশনা, গান, নাটক, প্রতিরোধ, সহযোগিতা ইত্যাদি সবকিছুই আমাদের যুদ্ধ জয়ের হাতিয়ার।

উক্ত লক্ষ্য ব্যপক গণভিত্তিক আন্দোলন পরিচালনার দাবী করে। স্বল্প সংখ্যক বুদ্ধিজীবীর আলোচনার টেবিলে তা সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা প্রপদকে দেশব্যাপী বিস্তৃত একটি গণ সংগঠনে রূপান্তরে প্রয়োজন অনুভব করছি। এ উদ্দেশ্যে, আমরা এক বছরের একটি সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আগামী জুলাই মাসে গঠন করা হবে একটি জাতীয় সাংগঠনিক কমিটি।

তা পরবর্তী নয় মাসের মধ্যে বৃহত্তর বাইশটি জেলায় জেলা কমিটি গঠন করবে। তারপর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। প্রিয় শুভাকাঙ্খী, এ আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমরা দু'হাত প্রসারিত করছি আপনাদের দিকে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এক পা-ও এগুতে পারব না। এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনার সহযোগিতা।

প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ঃ ঢাকসু ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোবাইলঃ ০১৭১২৬৭০১০৯, ০১৯১৬৩৩৩৭৯৬

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।