আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কখন কখন নোয়াখালী ভাষা বলি............

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!

ছোটবেলা থেকে নোয়াখালীর মাইজদী শহরে বড় হয়েছি, সেখানকার স্কুল-কলেজই পড়েছি। তারপর ঢাবি.........। যাই হোক আসল কথায় আসি। তো, স্বাভাবিকভাবেই নোয়াখালী ভাষা মোটামুটি ভালই আয়ত্তে। ব্লগে ইদানীং নোয়াখালী ভাষা নিয়ে বেশ তোড়-জোড় দেখে আমারো একটু বলতে ইচ্ছা করলঃ চিত্র ১ঃ ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী বিলাস চেয়ারকোচ পুরান বাসস্ট্যান্ডে থামলো।

নেমে পড়লাম, বক্স থেকে ব্যাগ নামালাম। -- ভাই যাবেন ... জায়গায়? -- হ, বাঁড়া কিন্তু ১০ টেঁয়া। -- কি? আঁম্নে কি আঁরে নতুন হাঁইছেন্নি? ডাকাত তুন আইছি দেই নতুন মনে কইচ্ছেন? ছোডবেলাত তুন ইয়ানে আছি, ইয়ান তুন বাসাত আঁডিই যান যায়, খালি লগে ব্যাগ আছে দেই আঁন্নেগরে ডাকি। হাঁচ টেঁয়া দি গেলে চলেন, নইলে সামনের তুন হরেন!!! আরেকখান ডাকি। -- আফা রাগ করেন কিল্লাই? আম্নেরা ২/৪ টেঁয়া বেশী না দিলে কে দিব? আইচছা, ৬ টেঁয়া দিয়েন, উডেন।

চিত্র ২ঃ অনেকদিন পর নোয়াখালীতেই কোন স্কুল জীবনের (কলেজ জীবন আর আলাদা করে বললাম না, একই বান্ধবীরা) বান্ধবীর সাথে দেখাঃ -- অরিইইইইই !!!! তুই নি???? কেরুম আছত? কতদিন হর দেআ। -- হরে, আছি একরকম। কি বালা লাগের তোরে দে-ইই। তুই কেরুম আছত? এরিন্না মোডা অই গেছত কা? কি খাছ? ভুঁসি নি? -- হ, আঁই তো গরু। হেল্লাই আঁর জামাই আঁর লাই ভুঁসি কিনি আনে।

নইলে রাজাইল চাইলের বাত খাবায়। তোর জামাইর মতো কি আর বাসমতি চাইলের বাত খাবাইবনি? -- আহা!! আঁর জামাই আঁরে বাসমতি চাইলের বাত খাবায়, ক্যান্‌? তোরে কইছে। সরকারী চা--রী করি এতো টেঁয়া কামাআআয়, টেঁয়া খালি গরে ডাইল্যে বাআরে হড়ে, খরচ করি কুলাই না। তোর লাগলে কইছ্‌। তোরে দিমু।

-- এরে, তোর জামাই যে কলেজে চা--রী করে, চাইছ্‌ আবার কোন সুন্দরী মাইয়া আবার হিঁছে লাগি যায়নি? তোর জামাইর তইলে মাতা খারাফ অই যাইব। হেরফর আইন-দুয়ারও যাইবো, বাইন-দুয়ারও যাইবো। -- হ, এত্তো সোজা, আর যদি এরুম অয়ও, তই এরুম্না জামাইর কোয়ালে হিঁছার বাড়ি। গরের তুন বাইর করি দিমু। -- উমম্‌, অন বড় বড় কতা কও আরি, হেসম-তে জামাইর হাঁ (পা) দরি কাঁন্দি কূল হাইতা ন।

হেল্লাই আগে দরি সাবদান অও। -- হ!! চুপ কর !! চিত্র ৩ঃ এটা একেবারে যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখনকার। বাসায় আমরা শুদ্ধ-নোয়াখালী মিলিয়ে বলি। শীতকালে নোয়াখালীতে প্রচুর শীত পড়ে। ২/৩টা সোয়েটার পরে লেপের নীচে থাকার পরও অনেক শীত লাগতো আমার।

[ এখন যে ক্যামনে মাইনাস ডিগ্রীও পার করলাম আল্লাহ্‌ গফুর রহীম জানে !!!] সাত-সকালে শুরু হইছে আম্মার ডাকাডাকিঃ -- কি রে ! এখনো বিছানার থেকে নামছ না? বাতরুমে হেই কোনসম গরম পানি দিছি। এতক্ষণে তো ঠান্ডা অই গেল, তাড়াতাড়ি যা। ৩/৪ দিন ধরি কোন গোছল নাই । আমার অফিসের টাইম হইয়া গেল। আর পানি গরম দিতে হাইত্তাম ন।

-- ধ্যুত্‌, আম্নেরে কি আমি কইছি নি গরম পানি দিতেন? হাইত্তান্ন গোসল কইত্তাম। আমার শীত লাগে। -- শিগগির আয়!!! হেত্তনি কোনাইগার? তিন- চাইর দিন অই গেছে, গোসল করার কোন নাম নাই? গাত তুন গন্দ বাইর অয়। -- [গজগজ] সাথে সাথে আব্বা শুরু করলোঃ -- আব্বা, উঠ উঠ। ছি ছি!! মানুষ এতোদিন গোসল না করে থাকে? চুল্কানি হবে, বিচি-পাঁচড়া হবে।

দেখবে কষ্ট করে একটু গোসল করলে আর শীত লাগবে না। দরকার হলে তুমি বাইরে রোদে গিয়ে বোস। -- [মনে মনে গজগজ].........এই সব আব্বাদের নিয়ে হইছে যত যন্ত্রণা!!! এমন আদর আদর করে কথা বলবে যে না পারা যায় চিল্লানি দেয়া, না পারা যায় কথা না শুনে । যত্তসব!!!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।