আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীতি-কৌশল, অর্থনীতি: কাজের কিংবা অকাজের প্যাচাল

রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থার জন্য আর্ন্তজাতিক অর্থলগ্নীকারী সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া নীতি কৌশলকে দায়ী করে অনেক সেমিনার, আলোচনা করেছে দেশের সিভিল সোসাইটি (!) সংস্থাগুলো। বর্তমানে সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচলকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, আয় বৈষম্য হ্রাস করার মতো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহন করেছে, যা দেশের তথাকথিত সিভিল সোসাইটি (??)গুলো দাবী করে আসছিল। এসব করতে গিয়ে কৃষিতে ভর্তুকি, টিসিবিকে সচলকরণ, পিআরপিএসপি'র পরিবর্তে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহন, রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার মতো নীতি-কৌশল গ্রহন করার প্রক্রিয়া চলছে। এসব দাবী যে জনগণের তা প্রমাণ করতে সারাদেশে সেমিনার, আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক, এফজিডি, গবেষণা - কত কি যে করা হয়েছে, আর কত টাকা খরচ করা হয়েছে, তার হিসাব মেলানো কঠিন। কিন্তু সেসব দাবী যখন বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন নীতি-কৌশল গ্রহন করা হচ্ছে, তখন দাবীদাররা নিশ্চুপ (!!!!!???)।

যাহোক, সেই দাবীদারদের পক্ষে থেকে আমিও ছিলাম সোচ্চার। এই মূহুর্তে তেমন কিছু করার না থাকায় এই ব্লগে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বলা হয়েছে, আর কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হবে না, বরং বন্ধ কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার এমন বক্তব্য দেয়ার পর বিরাষ্ট্রীকরণের আলোচনা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। বিরাষ্ট্রীকরণের পক্ষে দূর্নীতিকে দায়ী করা হয়, যে দূর্নীতির কারণে কারখানাগুলো প্রতিবছর লোকসান দেয় কোটি কোটি টাকা।

সুতরাং এগুলো ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। ১৯৯৩ সালের প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর হতে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে? একটি দিনের জন্য কি সেগুলি চালূ হয়েছে? যতদুর জানি, প্রায় সবগুলিই বন্ধ হয়ে আছে? তাহলে বেসরকারীকরণ করার উদ্দেশ্য কি? কলকারখানা বন্ধ রাখা? কর্মক্ষেত্রের সংকোচন সৃষ্টি করা? অথচ বলা হয়, বেসরকারীকরণ শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফল দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরী হয়ে দেশের দারিদ্র হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলকারখানায় দূর্নীতির কারণে লোকসান হলে এর জন্য দায়ী কি সাধারণ শ্রমিক? নাকি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও সরকারী কামলা কর্মকর্তা ও আমলাবৃন্দ এবং দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী রাজনীবিদরা? সরকারী উদ্যোগে দূর্নীতি বন্ধ করা যেতো, কিন্তু সেদিকে না গিয়ে আমরা তা ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছি। ফলাফলে কলকারখানাগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। কমসংস্থানের ক্ষেত্র হয়েছে সংকোচিত।

বেকারত্ব বেড়েছে, দারিদ্রও সেই সঙ্গে। তারপরও কেন বেসরকারীকরণের জন্য আর্ন্তজাতিক অর্থলগ্নীকারী সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠী এর জন্য ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে? কারণটা বিশ্বায়ন ও বিশ্বায়নের তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি, যার মাধ্যমে ধনী বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানীগুলো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার একচ্ছত্র করতে চায়। সেজন্য তারা প্রথমে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকেজো ও অনুপাৎদনশীল খাতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহন করে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তথাকথিত নেতৃবৃন্দকে দূর্নীতিবাজ হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে। এসব কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন পরাক্রমশালী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, যাদের একমাত্র লক্ষ্য নিজেদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করা।

তারপর রাজনীতিবিদ ও সচিব, অর্থের জোরে ও জ্ঞানের দুবর্লতা এবং অনভিজ্ঞতার কারণে তারাও যে নীতি-কৌশল গ্রহন করে, তাও কারখানাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। ফলে লাভজনক কারখানা পরিণত হয় অলাভজনক লোকসান দেয়া কারখানায়। আগ্রহীগণ, আদমজী, চট্রগ্রাম স্ট্রীল মিলস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নতুন গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন। সত্যতা পাবেন, যা কখনো প্রমান করা হয়নি। কারণ গবেষকগণও পরিচালিত হন তাদেরই অর্থে।

আর এসব গবেষণা পরিচালনা করার জন্য কোন অর্থও কেউ দেবে না কোনদিন। যার ফলে সত্য প্রকাশও হয়নি, হবেও না হয়তো কোনদিন। তারপর লোকসান দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারীকরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, লোকসানের ওপর গবেষণা ও প্রচারণা, নীতি-কৌশল পরিবর্তনের চাপ দেয়া শুরু হয় দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ হতে। লোকসান দেয়া প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা বিনিয়োগ হোক, সেটা সাধারণ জনগন কখনোই চাইবে না। এটার জন্যই তারা প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে লোকসান দেয়া খাতে পরিণত করে, পরে এটি বিরাষ্ট্রীকরণের চাপ প্রদান করে।

ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো অচল হয়ে বন্ধ হয়ে যায় পরবর্তীতে। কিন্তু পণ্যের চাহিদা থেকে যায়। সরকার এসব পণ্য প্রথমদিকে আমদানী করে জাতীয় চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ গ্রহন করবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই চাহিদাকে মেটানোর জন্য পরবর্তীতে বহুজাতিক কোম্পনীগুলো তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে এদেশে। যার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‌গ্যাটসের আওতায় তারা ন্যাশনাল ট্রিটমেন্টের কথা বলে।

এভাবে দেশের সকল ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। বিরাষ্ট্রীকরনের পক্ষে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো একদিন সম্পাদকীয় লিখেছিল, সেটা দেখে খুব আহত হয়েছিলাম। অবশ্য বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর পাতি-গ্রুপ ট্রান্সকম গ্রুপের একটি পত্রিকা এটাই করবেন, সেটাই হযত স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান সম্পর্কে আমরা যতদুর জানি, তাতে তিনি এসব ষড়যন্ত্রের বাইরে থেকে জনগণের পক্ষে থাকবেন, সেটাই আশা করি আমরা সবাই। তাই আহত হয়েছিলাম এবং পরদিনই একটি অপ-ইড লিখে পাঠাই এই বিষয়ে, কিন্তু ছাপানো হয়নি।

তাই নতুন করে সেই লেখাটাকে সাজাচ্ছি, অন্য আর একটি পত্রিকায় দেব। গতকাল বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক দাতাগোষ্ঠীর সংস্থা এলসিজি গ্রুপ সরকারের সাথে বসেছিল বিরাষ্ট্রীকরণ, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা (চাপ প্রয়োগ) করতে। আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিরাষ্ট্রীকরণ বন্ধের নীতি বর্তমান সরকারের নীতি নয়, এটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতি। পিআরএসপি'র পরিবর্তে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহন করা হলেও উন্নয়নের মূলনীতির পরিবর্তন হবেনা বলে অর্থমন্ত্রী দাতাগোষ্ঠীকে আশস্ত করেছেন। আসলে বিদেশী সাহায্যনির্ভর জাতি হিসাবে দাতাদের একেবারে ক্ষেপিয়ে তোলা যায় না।

তাই আবোল-তাবোল বকে যাওয়া। কিন্তু ওরা কি অর্বাচীন? নিশ্চয়ই নয়। তাই সত্য কথা নিশংঙ্ক চিত্তে প্রকাশ করতে হবে। সেজন্য মেরুদন্ড সোজা হওয়া চাই। এই অর্থমন্ত্রীই একইদিনে আরেকটি সভায় বলেছেন, এবারের বাজেটে কলকারখানা বন্ধ করার জন্য কোন বাজেট রাখা হবে না।

অর্থাৎ এটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। আসলে অবস্থাটা এমন, রাম রাখি না শ্যাম রাখি। সরকারের এই অবস্থায় জনগণকে পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কি দেখছি আমরা? কালো টাকার মালিকরা আবার টাকা সাদা করার সুযোগ চাচ্ছেন! যে দেশের মানুষ না খেয়ে মরে যায়, সেই দেশে কেউ কেউ কালো টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন! আবার দাবীও করা হয়, অন্যায়কে যেন প্রশ্রয় দেয়া হয়। আসলে এরা গণশক্র।

এদের সরাসরি শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। এদের পক্ষে যারা কথা বলবে, তাদেরও। যদিও সিপিডি নানা যুক্তি দেখিয়েছে ইতিপূর্বে, এবারও দেখাচ্ছে; এটাও একপ্রকার জ্ঞানপাপীর কাজ। এসব কর্মকান্ডকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে দেখতে হবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।