আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

*** .... অনন্ত প্রতীক্ষায় দাড়িয়ে... সুমি .... ***

এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

মধ্যবিত্ত পরিবারে একমাত্র ছোট ভাই আর বাবা মা কে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলো কলেজ পড়ুয়া সুমি ... খুব মেধাবী না হলেও নিজের রেজাল্ট নিয়ে বাবা মা এর মত সে নিজেও সন্তুষ্ট ... খুব বেশি চাহিদা তার কখনোই ছিল না, এখনো নাই ... এ কারনেই জীবনের প্রতি পদক্ষেপে অন্য উচ্চাকাংখী বান্ধবীদের মতো তাকে কখনো কষ্ট পেতে হয়না ... বাবার চাকুরীর বদলীর কারনে নিজের প্রিয় শহর ছেড়ে কিছুদিন আগে এসেছে ওরা এই শহরে ... নতুন বাসা, নতুন শহর, নতুন কলেজ এখনো ঠিক আপন করে নিতে না পারায় নিজেকে মাঝে মাঝে বেশ অসহায় মনে হয়, বিশেষ করে সেই দিনের পর থেকে যেদিন কলেজ থেকে ফেরত আসার সময় এলাকার কয়েকটা ছেলে ওর পিছু পিছু হেটে এসেছিল ওদের বাসা পর্যন্ত ... বাবা, মা এবং সে নিজে সবরকম ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চায় বলেই কোনোদিন কাউকে কিছু বলেনি ... শুধু অস্বস্হিকর অসহায়ত্ব মনের মাঝে রেখেই বাইরে চলাফেরা করতে থাকে ... কিন্তু সেখানেই শেষ নয় ... পাড়ার মোড়ের দোকানে একদিন নিজের ফোনটা ফ্লেক্সি করার পর থেকেই অজানা সব নম্বর থেকে তার কাছে দিন রাত ফোন / ম্যাসেজ আসতে থাকে ... এ কারনে সেই অসহায়ত্বটা আজকাল ভয়ে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে ... একদিন কলেজ থেকে রিক্সায় ফেরার পথে হঠাৎ ফোন এলো , নাম না জানা কেউ একজন বললো --- ঠিক যেখানে আছ সেখানেই রিক্সা থামাতে বল ... আর একটু সামনে গিয়েছ কি তোমার ******* ..... আমরা আসছি, জরুরী কথা আছে তোমার সাথে ... ভয়ে থর থর কম্পমান সুমি রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলে চাপা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ... ওদিকে রিক্সাওয়ালাও কিছু না বুঝে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো ওর দিকে ... কিছুক্ষন পরে রাস্তার এক দিক দিয়ে কয়েকজনকে দেখা গেল , এরা তো সেই সব ছেলে যারা সবসময় তার পিছু নেয় ... ওরা যতই কাছে আসছে সুমীর যেন ততই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ... আকষ্মাৎ দেখলো ওরা আস সামনে আসছে না ... একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে নিজেদের মাঝে কি জানি কথা বলছে .... এমন সময় একটি খুব সাধারন ছেলে ওর রিক্সার পাশ দিয়ে যেতে যেতে ওর ভয়ার্ত কান্না দেখে জিজ্ঞেস করলো -- কি হয়েছে আপনার ... আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি ? কথা বলার মত শক্তি তখন সুমির নাই, রিক্সাওয়ালা যতটুকু বুঝেছে তাই ছেলেটিকে বলতেই সে বললো -- আচ্ছা আপনি আপনার বাসায় যান আমি এখানেই থাকি ওদের সাথে আমি কথা বলছি ... এ কথা শুনে রিক্সাওয়ালা চালানো শুরু করতেই সুমির আতংক যেন আরো কয়েক গুন বেড়ে গেল ... বাকি পথটুকু চোখ বন্ধ করে পার করে বাসার সামনে এসে যখন রিক্সাওয়ালা বললো -- আপা আপনার বাসায় এইখানে ? ... তখন চোখ খুলে কোন রকমে ভাড়াটা দিয়েই ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো ... এর পর থেকে বেশ কয়েকদিন সে ঘরের বাইরে যাওয়া তো দুরের কথা, জানালা দিয়ে পর্যন্ত বাইরে দেখেনি .... কিছুদিন পরে, কলেজের পরীক্ষা এগিয়ে আসার কারনে নিরুপায় সুমীকে আবার বেরুতেই হলো ... তবে সে লক্ষ্য করলো রাস্তার মোড়ের ছেলেগুলো তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আগের মতো কিছু বলছে না ... আর আরো অবাক কান্ড হলো এ কয়দিনে অজানা নম্বরের ফোন গুলো আসা বেশ কমে গিয়েছে ... এর পর থেকে সুমী আগের চেয়ে বেশ সাচ্ছন্দ্যে সব যায়গাতে চলাফেরা করতে লাগলো, মাঝে মাঝে মনে হতো, সেই ছেলেটা কে যার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সে এমন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে ... অন্তঃত একবার তাকে ধন্যবাদ দেয়া প্রয়োজন ... কিন্তু বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেলেও তার কোন দেখা সে পেল না ... মা কে নিয়ে একদিন শপিং এ গিয়ে কিছু কেনাকাটার মাঝে দেখা হয়ে গেল সেই ছেলেটির সাথে ... মা কে ডেকে বললো -- মা দেখ এই সেই ছেলে যার সাথে আমার সেদিন দেখা হয়েছিল ... বলেই ও তাকে ডাকলো -- এই যে একটু শুনেন ... ছেলেটি কাছে এল , নিজের পরিচয় দিলো ... জানালো এই এলাকায় সে জন্মেছে , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে ... ওরা তার পরিচিত , তাই নিষেধ করে দেয়ায় তারা সুমীকে আর ডিস্টার্ব করবে না বলেছে .... সাথে সাথে এটাও বললো -- এর পরে ও যদি ওরা বা অন্য কেউ কখনো সমস্যা করে তাহলে যেন ওকে বলা হয় ... সুমী বললো -- কিন্তু আপনাকে শুধু ধন্যবাদ দেয়ার জন্য এতদিন লেগেছে খুজে পেতে , সমস্যার পড়লে আপনাকে কোথায় পাবো ... ছেলেটি তার ফোন নং দিয়ে বললো এটা হিমেল নামে সেভ করে রাখতে ... পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদেরকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায়, হিমেল তাদের ই একজন বলে মনে হয় সুমীর ... প্রথম দিনের সহযোগীতা আর পরের দিনের অমায়িক ব্যবহারের কারনে হিমেল কে একজন উপকারী বন্ধু হিসেবে ভাবতে শুরু করে সে ... তার মাও মাঝে মাঝে ঘরে কোন ভাল রান্না হলে বলে -- ছেলেটিকে একবার ডাক, খাইয়ে দেই ... ও আমাদের অনেক উপকার করেছে ... অথচ সে কখনোই সুমীদের বাসায় কোন না কোন বাহানা করে আসেনি, এমনকি কয়েকবার সুমি ওকে বন্ধু হওয়ার আমন্ত্রন জানালেও কখনো সাড়া দেয়নি বরং মুচকি হেসে বলেছে -- আমার কাছে আসার চেষ্টা কোরোনা সুমী, আমি তোমার মত ভালো মেয়ের বন্ধু হওয়ার যোগ্য না .... তার পরে সুমি মুখে না বললেও মনে মনে হিমেল কে বন্ধু হিসেবে পেতে চায়, এর মাঝেই কোন এক সময় নিজের অজান্তে হিমেলের প্রতি ভাল লাগা কোনসময় ভালবাসায় পরিনত হয়েছে সে নিজেও জানে না ... যখন সে উপলব্ধি করলো তখন থেকেই যেন হিমেল ছাড়া আর কোন কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না ... একদিন আর না পেরে হিমেলকে ফোন করে বলেই বসলো , তার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে কলেজের সামনে যেন হিমেল তার সাথে দেখা করে ... সুমির গলার স্বরের কম্পনে যা বোঝার বুঝে নিয়ে হিমেল নির্লিপ্ত ভাবে একটুকরো হাসি দিয়ে বললো -- আমার মনে হয় তুমি ভুল করছো সুমি ... আমি আসতাম তবে আমার একটু জরুরী কাজ আছে, এজন্য আমি আসতে পারবো না সর‌্যি .... প্রচন্ড রাগ আর অভিমানে সেদিন সুমি কিছুই খায়নি , খালি ভাবতে লাগলো কিভাবে হিমেলের সাথে দেখা করা যায়, বলা যায় তার মনের কথা ... চোখে চোখ রেখে , সামনা সামনি ... এমন সময় একটি উপায় যেন ঝিলিক মেরে গেল ওর মাথায় ... ঠোটের কোনে মুচকি হাসি নিয়ে অন্যরকম এক স্বপ্নের ঘোরে ও বাকি রাতটা কাটিয়ে দিলো.... এর পরে সকালে ; কলেজ ছুটির পরে সামনের ফুলের দোকান থেকে কয়েকটি রজনীগন্ধা আর একটি লাল গোলাপ কিনে হঠাৎ ফোন করে বসলো হিমেল কে ... কান্না কান্না কন্ঠে বললো --- আমি ভয়ংকর বিপদে পড়েছি কলেজে, হিমেলের পক্ষে এক্ষুনি আসা সম্ভব কি না ... হিমেল বললো --- তুমি একটা রিক্সা নিয়ে শুধু ঐ এলাকা ছেড়ে বাইরে আসো এর পরে বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি ... অভিমানী সুমি বললো - সে না আসা পর্যন্ত সুমী কলেজের সামনে থেকে এক পা ও কোথাও যাবে না .... এমন করে একসময় সুমি হিমেলকে বুঝাতে সক্ষম হলো সে আসলেই বিপদে পড়েছে ... আর হিমেল ও যখন বললো সে আসছে তখন থেকে প্রতিটি সেকেন্ড যেন সুমির কাছে এক একটি যুগের মতো মনে হচ্ছে ... কিছুক্ষন পরে হিমেলের কল এলো--- তুমি এখনো ঠিক আছো তো সুমি, আমি মটরসাইকেল নিয়ে আসছি, তোমাকে নিয়েই ওখান থেকে চলে আসবো, ঠিকাছে ? কলেজ গেইটে সুমি অপেক্ষা করছে ... হঠাৎ দেখলো ১০ - ১৫ জন ছেলে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছুটে যাচ্ছে এক দিকে ... আর এর মাঝে একজন বলছে --- আজকে নিজেদের এলাকায় পেয়েছি ওরে, কোনোমতেই বেচে যেন না যেতে পারে , দেখিস ... কিছুক্ষন পরে ওদিক থেকেই বিকট আর্তনাদের সাথে বেশ কিছু গুলির আওয়াজ আসতে থাকে ... পর পর বেশ কয়েকটা ... এর পরে থেমে থেমে আরো কয়েকটি ... এর পরে চারিদিকে নেমে এলো শুনশান নিস্তব্ধতা ... এসবের মাঝেই নিঃসঙ্গ সুমি তখনো কলেজ গেটে দাড়িয়ে রয়েছে হিমেলের প্রতীক্ষায় ....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।