আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথে প্রান্তরে গান গেয়ে যাদের জিবিকা নির্বাহ ঃ এম সাইদুর রহমান তালুকদার

thanks all over

পথে প্রান্তরে গান গেয়ে জিবিকা নির্বাহ করে এমন মানুষের সংখ্যা দেশে খুব বেশী না হলেও সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসবে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। চলার পথে বাসে অথবা ট্রেনে উঠলে মাঝে মাঝে দেখা যায় কাধে দোতরা অথবা হাতে ধবকা নিয়ে হেরে গলা ছেড়ে গান গেয়ে যাত্রীদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে কোন যুবক বা পৌঢ়। কয়েকটি গান গাওয়া পরে যাত্রীদের কাছে হাত পাতে সাহায্যের জন্য। ভিক্ষে নয় গান গেয়ে আনন্দ দেওয়ার বিনিময়ে সামান্য আর্থিক সাহায্য। অসহায় অখ্যাত কন্ঠশিল্পীর গান শুনে অনেকেই মুগ্ধ হয়।

নিজের পকেট থেকে ৫ বা ১০ টাকার নোট দিয়ে ওই শিল্পীকে সাহায্য করে। প্রশিক্ষন নেই অথচ মধুর কন্ঠে ্ওসব অখ্যাত শিল্পীদের গান গেয়ে জীবন জিবিকা চলে। তাছাড়া হাট বাজারেও এমনি মজমা করে গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় কোন কোন অখ্যাত গায়ক। এমনি এক গায়ক লায়েছ মিয়া। জন্মস্থান বি বাড়িয়া জেলার সরাইল থানায়।

গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়া লায়েছ শিশু কালে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। অর্থাভাবে ভাল চিকিৎসা করাতে পারেনি তার বাবা মা। অবশেষে লায়েছ বেঁচে গেলেও চিরদিনের জন্য হারাতে হয় তার মুল্যবান ২টি চোখ। অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে লায়েছ বড় হতে থাকে। বিভিন্ন মানুষের কন্ঠে গান শুনে আর নিজেই চর্চা করে।

এভাবে লায়েছ ধবকা কিনে গান গায়। অনেকে তাকে উৎসাহ দেয়। লায়েছ এখন পিতৃহারা, মাতৃহারা। বয়স ৩৫ বছর। নিজের জন্মস্থান ছেড়ে চলে আসে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায়।

এখানেই সে বিয়ে করে। কিন্তু তার সংসার চালাবে কিভাবে? অবশেষে লায়েছ তার প্রতিবেশী এক তরুন ছেলের সাহায্য নিয়ে হাতে ধবকা নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। ঘুরে বেড়ায় হাটে মাঠে, গাড়িতে। গান গায় আর মানুষের সাহায্য নিয়ে চলে তার জীবন জিবিকা। লায়েছ মিয়া সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করে।

মজমা করে গান গাওয়ার পর কেউ ২ টাকা আবার কেউ ১০ টাকাও দেয় তাকে। সামনে বস্তা বিছিয়ে রাখে। ভিক্ষে না হলেও অনেকে ছুড়ে দেয় একটি আধুলি অথবা নোট। লায়েছ মিয়ার সাথে কথা হয় শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডে। এখানে গানের মজমা জমিয়েছে।

শিশু কিশোর যুবকরা চারদিকে ঘিরে আছে। আর লায়েছ তার কন্ঠে গান গেয়ে চলেছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় অন্ধ জীবনে আর কি করতে পারে। জীবন বাচাঁতে গান গাইছে। প্রতিদিন গান গেয়ে ২ শ টাকা থেকে আড়াই শ টাকা রোজগার করে।

কোনভাবে চলে তার সংসার। কন্ঠ ভাল অথচ অন্ধত্বের কারনে সে নিরুপায়। ভিক্ষে করা ভাল কাজ নয় সে জানে। তাই গান গায় আর মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে চালায় তার জিীবন জিবিকা। অন্ধ লায়েছকে প্রশিক্ষন দিলে হতো একজন ভাল কন্ঠ শিল্পী।

কিন্তু কোন সংগঠন বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ দৃষ্টি দেয়নি। হয়তো এভাবেই লায়েছ জীবন কাটাবে। তবে তার জীবনের পরিবর্তন আসতে পারে কোন সংগঠন কিংবা সরকারী কোন সংস্থা এগিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ালে। লায়েছ মিয়ার মত আরও অনেক অখ্যাত গায়ক রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।