আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলো আঁধারী নগরে তারা যেমন আছেন

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ...

দৃশ্যপট-১ গতকাল ফার্মগেইট দিয়ে বিআরটিসির ডাবল ডেকারে কলেজগেইট আসছিলাম। উপরতলায় জানালার পাশে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছি। জ্যামে পড়ে বাস কচ্ছপের চেয়েও ধীরগতিতে এগুচ্ছে। সেজান পয়েন্টের কাছে এসে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে বাসটা টার্ন করার সময় পার্কের ভিতরে চোখ চলে যায়। শুক্রবার পার্কের মধ্যে প্রচুর ভীড়।

ছোট্ট পার্কটাতেও কেউ স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে এসেছে, এসেছে নবদম্পতি। ভার্সিটির তরুন তরুনীরা সদ্য চাকরিতে যোগদান করা বন্ধু বান্ধবীরা খুনসুটি করে আড্ডা দিচ্ছে। দেখতে ভালোই লাগছে। মানুষকে সুখী দেখলেই বুকের ভেতর এয়ার কন্ডিশনের মত সুখ সুখ অনুভূতি কাজ করে। বাস জ্যামে আটকে আছে।

আরো একটু সামনের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় একজোড়া কিশোরির দিকে। বয়স মাত্র ১৩ থেকে ১৪ হবে। দুইজন পার্কের ঝাউগোছের এক কোনায় বসে সুখী মানুষগুলোকে দেখছে। দেখছে ভবিষ্যতের মানুষদের। এদের একজনকে চিনতে পারি।

ঈদের আগেরদিন রাতে একটা ছোট প্রতিবেদন তৈরি করতে এসে আনন্দ সিনেমার সামনের আইল্যান্ডে দাড়িয়ে কথা হয়েছিল। তারা পরস্পরের শরীরে হেলান দিয়ে অভ্যাগত ভবিষ্যত দেখছিল, দেখছিল না তাদের ভবিষ্যত। তাদের ভবিষ্যত শুধু আলো আঁধারীতে, সস্তা প্রসাধনে ল্যাম্পপোস্ট কিংবা আনন্দ'র সামনের আইল্যান্ডে দাড়িয়ে থাকায়। শরত্‍ এর আকাশে হঠাত্‍ নিকষ কালো মেঘের তান্ডবের মতই মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। আমি মানবধিকার কর্মি নই, আমি যদি কারো অধিকার নিয়ে চিত্‍কার করি তাহলে মানুষ শুনবে কেন! বলার কিছু নেই পুরোটা পথ বিষন্ন থেকেছি।

দৃশ্যপট-২ জাতীয় যাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পেছনের সারিতে বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনছিলাম। ছায়ানটের শিক্ষিকা গাইছেন। গায়িকার দিকে তাকিয়ে এতটাই বিমোহিত হয়ে শুনছিলাম যে গানের প্রতিটা কলির শেষে মনে হৃদয়ে চরম ভাবে আঘাত করছিল। হঠাত্‍ করে আবিষ্কার করলাম গান এত বেশী জীবন্ত হয়ে উঠছে এর নেপথ্যে আরেকজন নেপথ্য কারিগরের কারনে। ভায়োলিন বাদক গানের সাথে নিজের সমস্ত সৃষ্টিশীলতা আবেগসহকারে মিশিয়ে দিচ্ছিলেন।

ভায়োলিনের করুন সুর গায়িকার কণ্ঠের সাথে মিশে গোটা মিলনায়তনে বিষাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। একটা গানকে এতটা জীবন্ত করতে যিনি নিজের জীবনের সমস্ত অর্জিত শিক্ষা বিলিয়ে দিচ্ছিলেন তার দিকেই তাকিয়ে ব্যাথিত হই। পোশাক আশাকে স্পষ্টতই দারিদ্রতার ছাপ। জীবনের সবসময়টুকুই সঙ্গীতের পেছনে ব্যয় করেছেন। অনেক গায়ক গায়িকাকে উপরে তুলে দিতে আজীবন সহায়তা করেছেন, কিন্তু নিজে থেকে গেছেন সেই নিচের স্তরেই।

সুকান্তর সিঁড়ি কবিতাই শুধু মাথায় ঘুরঘুর করছিলো 'তোমরা আমাদের মাড়িয়ে উপরে চলে যাও'.. যান্ত্রিক নগরে তার এমনই জীবন টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। উপরের দুটো দৃশ্যপট ভিন্ন হলেও এর পেছনের দৃশ্য কোথাও যেন একই স্রোতে মিলিত হয়েছে। আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি না বটে। তবে 'আমরা' হয়ে কি তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না!!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।