ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ১ম পর্ব
Click This Link
-------------------------------------------------------------------------
ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ২য় পর্ব
Click This Link
--------------------------------------------------------------------------
ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ৩য় পর্ব
Click This Link
---------------------------------------------------------------------------
দেহের সাথে আগুনের একটা সম্পর্ক আছে। দেহ ও উত্তাপ ছড়ায়। আগুন ও উত্তাপ ছড়ায়। পার্থক্য এই দেহসত্তা টুকরো টুকরো হয়। আগুন হয় না।
আগুন নিভে যায়। নেভানো যায়। মনের উত্তাপ থেকে যায় তুষানলের মতো। আমি কবিতাকে আগুনের চেয়েও শক্তিশালী মনে করি।
বপনে ও বিনয়ে একটা কবিতা প্রধানত: মনসমগ্রের রূপান্তর ঘটায়।
অনেক বিষয় আছে , হাত তা ছুঁতে পারে না। কিন্তু কবিতা পারে। ব্লগের
কবি তনুজা এর কবিতার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক ।
যখন সোনালী ধানে উড়ে এলো সিঁদুরে বাতাস
এমন মাটির গন্ধ
এমন বরণ
এমন সোহাগী মেঘ..
এই মাঠ মানে এক মানুষীর মনে ওঠা ঢেউ
আর তো ডাকে নি কেউ।
প্রকৃতি পুরুষ সূত্র বোঝেনি এমন
এমন বয়ান তার এমন নয়ন..
কখন সে বুনোহাঁস ভরা গাঙে
কখন সে ঝিঙে ফুল হয়ে ওঠে দুহাতের লতানো মাচায়
এমন সরল দুটো চোখে
আমার ধ্রূপদী আমি ভেঙে যায়
কলাবেণী ...
নাকছাবি ...
'দুলি' হয়ে ওঠে
( রূপান্তর / তনুজা )
এই মাঠ মানে এক মানুষীর মনে ওঠা ঢেউ - এখানে প্রতীক হয়েছে মানুষী ।
আর ঢেউলাগা প্রান্তর হয়েছে কবির বিস্তীর্ণ ক্যানভাস।
সামগ্রিক সফলতা নিয়ে কবি হয়ে উঠেছেন ব্যাপকতার মুখপাত্র।
জীবন থেকে পালানোরও একটা কৌশল লাগে। সেই বিদ্যা রপ্ত করতে
পারে না সবাই। কেউ কেউ পারে।
আর এরাই কবি। সোমেশ্বর অলি
লিটলম্যাগ প্রাংগনের বেশ প্রিয় মুখ। তার কবিতায় যে দ্যোতনা দেখা যায়,
এর চৈতন্যময়তা আমাদেরকে নিয়ে যায় অনেক দূরে। আমরা যাই , ফিরে আসি, আবার যাই ।
পালাতে পারছো, তাই যাচ্ছ
আমি চাঁদের খোঁপায় ফুল গুঁজে,
সেই কবে ছেড়েছি গ্রামের বায়ু; তবে
এখানে বসেই খবর রাখছি: কিশোরের হাত ধরে
ঘর পালানো রমণী- দুধের সন্তান তার কাঁদছে কাঁদছে-
স্বামী তার হতভাগা- গলা দিয়ে নামছে না ভাত...
পলাতক কিশোরের কী খবর? কমলালেবু, আপেল তাকে
কতভাবে ডেকেছিল।
গুহাবাসী হয়ে সেই স্বাদ পেতে পেতে তবে একঘেয়ে লাগে?
ঘর পালানো রমনী খোঁজে প্রিয় গৃহের ব্যঞ্জনা, কিন্তু
খুলে যাওয়া খোঁপার সৌজন্যে আমাকে ডাকছে না সেই চাঁদ
আমি কিশোরের মতো পালিয়ে বেড়িয়ে বাঁচি-
চাঁদ কিংবা মোহন রমণী
কেবল একবারই পালাতে সাহায্য করে?
রমণী কবজা করে রাখে কিশোরের অগোছালো চুল,
চাঁদের খোঁপাটি বেঁধে দিতে
আমি ফের পালাতে পারি না নদীতীরে...
(পলায়নপর / সোমেশ্বর অলি )
এই কবিতাটিতে প্রথম বাক্যগুলোই বুকে লাগে। কানে বাজে।
পালাতে পারছো , তাই যাচ্ছ - এই প্রতিধ্বনিকে বহু ভাবে বলা যায়। না গেলে হয় না , কেন যাবে , থেকে যাও না ........ আরো কতোভাবে। কিন্তু কবি এমনভাবে গেঁথে দিয়েছেন, যা আমাদের পিছু ছাড়ে
না।
লেগে থাকে মননে ও মনীষায়। এই বিশিষ্টতাই কবির।
৬
ব্লগ সাহিত্যটা আমার কাছে অনেক সময় মনে হয় নিছক আড্ডাই নয় ,সুপ্ত
মেধা অন্বেষনের প্লাটফর্ম ও বটে। আমি ব্লগবাসী হবার পর অনেক নতুন
মেধাবী মুখের ঝলক দেখেছি, যারা পরিপক্কতার উজ্জ্বলতায় ব্লগবাড়িকে
আলোকিত করছেন বিভিন্নভাবে। একজন কবি - দূরের পাখি।
তার কবিতা পড়ে আমি শুধু তন্ময়ই হইনি , স্পর্শ করতে চেয়েছি কালের
নোঙর ।
জলপতনের শব্দ শুনি , ভাঙে মন, ভাঙে তার বেয়াড়া ইতিহাস ।
প্রপাতে একা যেতে নেই ; তোমার সাবধানী বাঁধা, আশংকার উচ্চারণ ।
প্রপাতে আমি বিষ ধুই , দুঃখ ধুই জলে ; বাতাসে উড়াই অতৃপ্তি ।
নদীর নোঙর নাই , নৌকাতে আছে, নদী নয় নৌকাকে ভালোবাসতে বল তুমি ;
ভূমিতে জল বড় অসহায়, তার তলে রৌদ্রকিরণ , বড় হাঁসফাঁস , বড় যন্ত্রণা ।
কাদায় নোঙর রাখিনা কন্যা ; জলেও নয় । নোঙর ধরে বসে থাকো তো তুমিই ।
(নোঙর / দূরের পাখি )
কবির জলপতনের শব্দশোনার সাথে সাথে ভেঙে যায় অনেক কিছুই। দাঁড়ের পাঁজর এসে মিলিত হয় প্রেমের পাঁজরে। যেজন নোঙর ধরে বসে
আছে সে তো আমারই প্রিয়তমার মুখ।
কামজ আগুন লাগা প্রতিবেশী
ভোর। কবিতার অন্যনাম শাদাশাড়ি। শান্তির প্রতীক। বৈধব্যের প্রতীক।
যারা জীবন সাথে থাকার যে অংগীকার প্রেম মানুষকে দেয়, সেই ছায়াও
সরে যায় কাছ থেকে।
কেবল মমিরা আলো থেকে সংগ্রহ করে বাঁচার রসদ। আর কবিতা হয়ে ওঠে তারই প্রধান নিয়ামক শক্তি ।
....................( ক্রমশ : / আগামী পর্বে সমাপ্য )
ছবি - নাদিয়া নিকাশিনা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।