সাম হ্যোয়ার ইন ব্লগে যেদিন থেকে প্রথম লেখা শুরু করি , সেদিন থেকেই কবিতা ছিল এখানে আমার অন্যতম পাঠ্য বিষয়। অনেকের কবিতাই এখানে পড়েছি। ভালো লেগেছে। মন্তব্য করেছি। ভালো না লাগার হলে, নীরব থেকেছি।
কবিতা সব সময়ই আমার কাছে আরাধ্য বিষয়। অনুধাবন-অনুরণন এর মূর্ছনা।
এই লেখায় আমি সাম হ্যোয়ার ইন ব্লগের সতেরো জন কবির কবিতা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও জানাতে
চাই আমার দৃষ্টির আলোতে প্রবাহ ঝলকের কথা । এই লেখাটি ধারাবাহিকের ১ম পর্ব।
কয়েকটি পর্বে তা শেষ করার আশা রাখছি।
যাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করছি, এরা কেউ লিখেন স্বনামে। কেউ ছদ্মনামে। কেউ কেউ পাবলিশড পোয়েট । সবাইকে যে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি তাও নয়।
লেখার দায় থেকেই লেখা।
আমি জানি কোন সমালোচনা করার কাজটি খুবই কঠিন। আছে শত্রু সৃষ্টির
ভয় ও । তারপরও বলতে হয়। মনের কথা জানাতে হয়।
আমি এটাও জানি সকল অগ্রজ কবি , অন্য কবিকে সহজে স্বীকৃতি দিতে
চান না। সেই কাজটি আমার ধাতে নাই।
আমার কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ '' কবিতার বিভাসূত্র'' ( বইমেলা ২০০৯,
ভাষাচিত্র / ঢাকা) -
তে আমি এই প্রজন্মের অপেক্ষাকৃত তরুণ কবিদেরকেই আলোচনায় এনেছি, সেই দায়িত্ববোধ থেকেই। তাদের কবিতা চয়ন করেছি , উদ্বৃতি হিসেবে।
১
নাজনীন খলিল দীর্ঘদিন থেকে লিখছেন।
তাঁর কাব্যগ্রন্থ আছে। এই কবির
কবিতায় সমাজ নির্মাণের যে প্রত্যয় লক্ষ্য করি , তা যে কোনো মানবমনকে
নাড়া দেয় খুব সহজে।
যেভাবে সন্ধ্যারতিতে গীর্জার ঘন্টাগুলো বেজে ওঠে
তেমনি আমার ভেতরেও বেজে ওঠে এক সতর্ক নিনাদ
আড়মোড়া ভাঙ্গে অগ্নিমান ক্রোধের দানব
তোমার উদগ্র লুব্ধতাটুকু নিমেষেই ভস্ম করে দিতে পারে;
কঠিন নিগড়ে বন্দী করে রাখি।
( যেভাবে ঘন্টাগুলো বাজে / নাজনীন খলিল )
এক নীরব শক্তি আমাদেরকে যোগান দেয় যে আমিষ , তা কবিতা ছাড়া
আর কি হতে পারে !
শহীদুল ইসলাম মুকুলের বই বেরিয়েছে ২০০৯ এর বইমেলায়। মুকুল
এই ব্লগেরই কবি।
তিনি ''জালছেঁড়া নদী '' গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে জানান
দিয়েছেন ব্লগই হতে পারে একজন কবির অন্যতম লেখামিডিয়া।
মুকুলের কবিতায় একটি ঋজুতা লক্ষ্যনীয়। তিনি বার বার ফিরেন নিজের কাছে। প্রেমে - দ্রোহে - মিলনে - বেদনায়।
একটি চুম্বনের জন্য অবলিলায়
শত মাইল পাড়ি দিয়েছি গত শীতে;
বিনিময়ে পেয়েছি ঠোঁট ফাটার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি।
এখন তোমার আমার ব্যবধান হাজার আলোকবর্ষ।
তাই এই শীতে আমার আবার ঠোঁট ফেটেছে।
( আগামী শীতে / শহীদুল ইসলাম মুকুল )
হাঁ কবিতা ফেরায়। আমরা ঘরে ফিরি প্রতিদিন একেকটা কবিতার টানে।
২
নির্ঝর নৈ:শব্দ্য - এটা একজন কবির নিকনাম।
তার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি শক্তিশালী সত্তা । এই কবির চিরায়ত বিচরণ আমাকে নদীর
বাঁকের মতোই মুগ্ধ করে।
পড়ুন তার কটি পংক্তি ....
২৮০৩০৯
এবং অনতিদূরে কোথাও তখনও বেহাগ বাজে
রাত ভেঙে জেগে উঠে যেমন দেহের ভাঙন
বিবাগীভাঙন জানে বাঁশিটার পরিণত নাম
নামের রূপের ভিতর যেনো বা অচিন দালান
দালানের ভাঁজে ভাঁজে লোহার হাড়েরা জাগে
জেগে জেগে ভিজে যায় বয়েসী মাঘে
এইশীত কোনোদিন জমেছিলো শিরার ভিতর
(আমাকে ডেকে নেয় দূরতম মাঠ -নির্ঝর নৈ:শব্দ্য )
কবি কি শুধু বিবাগীভাঙন ই দেখেন ? যে অচিন দালান , নিজের মানবদেহটা বহন করেন তিনি প্রতিদিন- তার মাঝেও জন্ম নেয় বার বার
বয়েসী মাঘ। বসন্ত আসে - বর্ষা যায়। কবির নির্মাণস্তম্ভ হয়ে উঠে গোটা
মানব সমাজের চাওয়া পাওয়ার লেখপত্র।
কবিতায় সৃজনের ভাঙনকে আমি সব সময়ই স্বাগত জানাই । যারা কবিতাকে ভাঙচুরের মাঠে দাঁড় করাতে পারেন , তাদের কৃতিত্বকে আমি
দেখি আকাশে জেগে থাকা অষ্টাদশী চাঁদের মতোই।
শূন্য আরণ্যক - নিকনামে যে কবি প্রতিকাব্য এর পসরা সাজিয়েছেন , আমার কাছে তা বেশ পরিশুদ্ধ নিরীক্ষণ ই মনে হয়েছে।
''কাব্য - প্রতিকাব্য '' - শব্দগুলো শুনলেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় মন । এই যে
দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা সেটাই একজন কবিকে এগিয়ে নেয় ।
নিতে পারে।
ঝাপসা করিডোরে দাড়িয়ে আমি
উপরে যাবো
অনেক উপরে
যান্ত্রিক খাচার দরজা খোলে ;অস্ফুট আয় আয়
টইটুম্বুর অন্ধকার
দোটানা
কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে
পায়ে পায়ে ঢুকে পড়ি
পিছনে নরোম জিব চাটে কেউ
এরপর অন্ধকার হাত বুলায় আমার শরীরে
খাপছাড়া ভয়টা শেকলছিড়ে
পিঠ ভেদ করে হৃদপিন্ডের আকার মাপে
ধুকপুক
একটা লাল বোতাম স্পষ্ট হয়
গোল আলোর বৃত্ত
যান্ত্রিক খাচা নিচে নামে
নামতেই থাকে
উন্মত্তের মতো সাদা কালো নীল সব বোতাম চাপি
বোবা লিফটটা আমাকে নিয়ে নেমে যায়
অস্তিত্বের গহীন কদাকার অন্ধকারে
.......... ( প্রতিকাব্য : লিফটের লাল বোতাম / শূন্য আরণ্যক )
আঁধার হচ্ছে সাধনার অন্যতম কোটর। যেখানে সত্তা শুধুই কিছু দ্যুতির
দেখা পায়। কবি সেই দ্যুতিতেই খুঁজেন উজ্জ্বলতার বিবিধ মুখ ।
........................... ( ক্রমশ : )
ছবি - রবার্টো এরকলিনো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।