আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশে বিদেশে - সৈয়দ মুজতবা আলী



"খবর পেলুম, ব্রিটিশ রাজদূত স্যার ফ্রান্সিস হামফ্রিসের মতে কাবুল আর বিদেশীদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই তিনি আমানউল্লার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের এদেশ থেকে সরিয়ে ফেলবার বন্দোবস্ত করছেন। আমানউল্লা সহজেই সম্মতি দিয়েছেন। কারণ তিনিও চাননি যে, বিদেশীরা আফগানিস্তানের এই ঘরোয়া ব্যাপারে অনর্থক প্রাণ দেয়। কাবুল বাকী পৃথিবী থেকে তখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলে অ্যারোপ্লেনের বন্দোসস্ত করা হয়েছে।

অ্যারোপ্লেন এল। প্রথম মেয়েদের পালা। ফরাসী গেল, জর্মন গেল, ইতালিয় গেল, পোল গেল – এককথায় দুনিয়ার অনেক জাতের অনেক স্ত্রীলোক গেল। শুধু ভারতীয় মেয়েদের কথা কেউ শুধালো না। অ্যারোপ্লেনগুলো ভারতীয় অর্থে কেনা, পাইলটরা ভারতীয় তনখা খায়।

অথচ সবচেয়ে বিপন্ন ভারতীয় মেয়েরাই - অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা আপন আপন লিগেশনের আশ্রয়ে ছিল। কিন্তু ভারতীয়দের দেখে কে ? প্রফেসর, দোকানদার, ড্রাইভারের বউকে ব্রিটিশ লিগেশনে স্থান দিয়ে স্যার ফ্রান্সি্স বিদেশী সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে ? বামুনের জাত গেলে প্রায়শ্চিত আছে, আর মুসলমানদের তো জাত যায় না। কিন্তু ইংরেজের জাতিভেদ বড় ভয়ঙ্কর জিনিস। তার দেশের যেরকম কাগজে কলমে লেখা, আইনে বাঁধা কন্সটিটুশন সেই - ঠিক তেমনি তার জাতিভেদপ্রথা কোনো বাইবেল - প্রেয়ার বুকে আপ্তবাক্য কহসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। অথচ সে জাতিভেদ রবীন্দ্রনাথের ভূতের কানমলার মত - 'সে কানমলা না যায় ছড়ানো, তার থেকে না যায় পালানো, তার বিরুদ্ধে না চলে নালিশ, তার সম্বন্ধে না আছে বিচার'।

দর্শন, অঙ্কশাস্ত্রে সুপন্ডিত হোন, মাকসিজমের দিগ্বিজয়ী কৌটিল্যই হোন, অথবা কয়লার খনির মজুরই হোন, এই কানমলা স্বীকার করে করে হৌস অব লর্ডসে না পৌঁছানো পর্যন্ত দর্শন মিথ্যা, মার্কসিজম ভূল, শ্রমিকসঙ্গের দেওয়া সম্মান ভন্ডুল। যে এই কানমলা স্বীকার করে না ইংরেজের কাছে সে আধপাগল। তার নাম বার্নাড শ। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.