আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরন্তর দুর্যোগ

...

মানুষের ব্যর্থতার কারণেই দুর্যোগ বাড়ছে, প্রকৃতির কারণে নয়। সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে মানুষের জানমালের সুরক্ষা দিতে পারে। প্রথাগতভাবে দুর্যোগের জন্য প্রকৃতিকে চিরকাল দায়ী করা হয়। কিন্তু মানুষের ব্যর্থতাই ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক আঘাত মানবিক দুর্যোগে পরিণত করে। অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের একদল বিজ্ঞানী দুর্যোগ পুনর্ভাবনা নিয়ে এমনটাই গবেষণা করেছেন।

অক্সফ্যামের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক আশবিন দয়ালের মতে, যে ভূমিকম্পে ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ৭৫ হাজার মানুষের জীবনহানি হয়েছিল, ঠিক একই ধরনের ভূমিকম্পে ১৯৯৫ সালে জাপানে যে পরিমাণ লোক মারা গিয়েছিল কাশ্মীরে তা হয়েছে ১২ গুণ বেশি। এই বেশি হওয়ার কারণ কি? ব্যাখ্যা দেয়া হয়Ñ দুটি ভূমিকম্পই ছিল সমমাত্রার। ভূমিকম্পটির নাম ‘গ্রেট হানসিন’। দারিদ্র্য, অসাম্য, অনুপযোগী নীতিমালা, রাজনৈতিক অকার্যকারিতা, দুর্বল সিদ্ধান্ত, ব্যর্থ ব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য লাখ লাখ মানুষকে দুর্যোগের মতো মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগে মানবিক এবং আর্থিক দুটি ক্ষতিই প্রচুর।

২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সুনামি, ২০০৫ সালে কাশ্মীরের ভূমিকম্পে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০০৭ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বাংলাদেশে প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু একই রকম ঘূর্ণিঝড়ে ১৯৯১ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার ও ১৯৭০ সালে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতির কারণে বাংলাদেশে গত ৪০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে গেছে। কারণ মানুষ যে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারে এ থেকে তাই প্রতীয়মাণ হয়।

অক্সফ্যামের বাংলাদেশের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক হিদার ব্ল্যাক অয়েলের মতে, ‘যথার্থ নীতিমালা এবং পূর্ব প্রস্তুতি জীবন ও অর্থ বাঁচায়। তাই দুর্যোগপূর্ব পরিস্থিতিতে যে খরচ হয় তা দুর্যোগ-উত্তর মোট ব্যয়ের খানিকটা অংশ মাত্র। ’ ব্ল্যাক অয়েলের ভাষ্য হচ্ছে, প্রতিটি নতুন দুর্যোগ দরিদ্র মানুষকে আরো গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। উন্নয়নকে ক্রমেই বাধাগ্রস্ত করে। বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের চেয়ে ২০০৭ সালে সিডরে লোক কম মারা গেছে।

ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও আর্থিক ক্ষতি বাঁচানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকার ও দাতাগোষ্ঠীগুলোকে আরো আন্তরিক হতে হবে। অক্সফ্যামের গবেষণা মতে, ২০০৭ সালে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সরকার ও দাতা সংস্থা যা যা প্রতিশ্রুতির বান ভাসিয়েছিল তা রক্ষা করা হয়নি সামান্যও। এ ব্যর্থতার কারণে প্রকৃতি নয়Ñ মানুষের ব্যর্থতাই যে দুর্যোগের মহাকারণ তা দিবালোকের মতো সমুজ্জ্বল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।