আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবোল-তাবোল-২ : এই নববর্ষে (ভালো লাগলে ভালো, না লাগলে নাই!)

সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।

অষ্টপ্রহরের যাপিত জীবনের গল্প! আবোল-তাবোল-১ বছর ঘুরে আবার এসেছে বৈশাখ। কাল পয়লা বৈশাখ, বাংলা ১৪১৬ সাল। আবার আমরা সুযোগ পেয়ে গেলাম বাঙ্গালীপনা জাহির করার। ন্যাকামি-আদিখ্যেতার জাতীয় প্রতিযোগিতা শুরু হলো বলে! এ এক আজব মচ্ছব! গত কয়েকদিন ধরে মাছের বাজারে যাওয়াই যায় না! চারিদিকে ইলিশ-ইলিশ হাহাকার! যেন ইলিশ ছাড়া নববর্ষই জমে না! ঐ দিন শুনলাম, বাজারে আধা কেজী ওজনের একটা ইলিশের জন্য তের-চৌদ্দজন ক্রেতার লাইন; দোকানদার পরে বাধ্য হলো মাছটাকে নিলামে তুলতে! শেষে মাছটা কততে বিকিয়ে ছিলো খবর নিইনি- রুচি হয় নি।

হাজার দুয়েকের কমে নিশ্চয়ই নয়! আরেক উপদ্রব পান্তা ভাত। সারাবছর খবর নাই; একদিনে পান্তাখোর হয়ে যাওয়া- এটি নাকি আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ! আর বাবা, গ্রামের কৃষক যারা সকালে পান্তা খেয়ে মাঠে যেত কিংবা এখনো যায়, ওরা কি সুখে পান্তা খায় নাকি সংস্কৃতির তাগিদে খায়? ওরা খায় পেটের জ্বালায়; অন্য ভালো খাবারের সংস্থানে অক্ষম বলে! আর , আমরা কী করি? পয়লা বৈশাখের সকালে মাটির থালায় (শানকি) ভয়াবহ ঝাল দেয়া পান্তা-ইলিশ খাই- চোখে পানি এসে যায়, তবু মুখে তৃপ্তির হাসি- যাক, সংস্কৃতিবান হয়ে উঠছি! নিজের দেশের গরীব মানুষগুলোকে অপমান করবার এত নির্মম অস্ত্র আমার আর জানা নেই। আমাদের দেশে এখন একটা নতুন প্রবনতা (trend)- পয়লা বৈশাখে পুরো পরিবার নিয়ে মেলায় যাওয়া। সন্দেহ নেই, পয়লা বৈশাখ আমাদের প্রানের উৎসব। রমনা বটমূলকে ঘিরে সে এক বিরাট যজ্ঞ; বিশাল লোক সমাগম; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই আসেন এখানে।

পান্তা-ইলিশ খান; আড্ডা দেন। বিগত কয়েক বছরে এই হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আশার কথা। পুরো পরিবার একসাথে আনন্দ করবে; সেইসাথে একটি শিশু নিজের ভাষা-সংস্কৃতিকে চিনবে-জানবে; এর চাইতে উত্তম আর কী হতে পারে? কিন্তু, একটু উলটো পিঠটা দেখি? সেদিন ঐ এলাকাতে কী হয়? ভয়াবহ ভীড়; ধুলোবালি; অসহ্য গরম; মোবাইলের নেটওয়ার্ক জ্যাম। এরি মাঝে পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা যে কীনা বাবা- মায়ের হাত ধরে প্রথম এসেছে মেলায়, তার মনস্তত্ব একটু বিশ্লেষণ করুন।

দুপুরের গরমে অনভ্যস্ত পেটে এক বেলা পান্তা-ইলিশ খেয়ে অসুস্থ করিয়ে তোলা আর প্রচন্ড ভীড়ে চিঁড়ে-চেপ্টা হয়ে একটা একতারা কিনে দেয়া ছাড়া আমরা তাকে আর কী সংস্কৃতি শেখাতে পারছি? তাকে আমি কোনদিন শিখিয়েছি বাংলা মাসগুলোর নাম? বৈশাখ ছাড়া আর ক’টা মাসের নাম সে জানে? 'ঐ দেখা যায় তালগাছ' শেখানোর আগেই তো ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েছি ইংরেজী রাইমের (rhyme) বই (Twinkle twinkle little star)। স্মার্ট হতে হবে না! সবশেষে, তরুণ-তরুণীদের কথায় আসি। পয়লা বৈশাখের ঐ প্রানের মেলায় যতজনের উপস্থিতি তার সিংহভাগই তরুণ-তরুণী। খুবই স্বাভাবিক। এতো তারুণ্যেরই মিলনমেলা।

সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী আর লালপাড় সাদাশাড়ি পড়া তরুণ-তরুণীদের দেখতে ভালই লাগে! মেজাজটা খারাপ হয় যখন বাঙালীপনা জাহির করতে গিয়ে ওরা নিজের শরীরেই আঁকাআঁকি শুরু করে! তিলক-সিঁদুর আরো কত কি! দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না! হিন্দুয়ানী চিহ্ন কিংবা অন্য কোন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ হতে আমি এটা বলছি না! আমি বলছি আমাদের শতাব্দীপ্রাচীন হীনমন্যতার কথা! তিলক-সিঁদুর যদি বাঙালীপনার স্মারকচিহ্ন হয় তবে, ঘোমটা-টুপি ও আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ! তাহলে, ওটাকে কেন প্রগতির অন্তরায় বলে ভাবা হবে? সত্যি কথা বলতে কি, বৃটিশ ভারতের কোলকাতা কেন্দ্রিক বাবু সমাজ তাদের নবজাগরনের ঠেলায় সেই যে বাঙ্গালী মুসলমানদের দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন আর তা থেকে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত ও অধঃপতিত মুসলমান সমাজের মাঝে যে হীনমন্যতা তৈরী হয়েছিল তা বোধহয় আজো কেটে ওঠে নি। অন্ততঃ তিলক-সিঁদুরের ছড়াছড়ি দেখে আমার তাই মনে হয়! এখন তো দেখি আবার আরেক ঢং (style) চালু হয়েছে। স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে বাহুতে নানান রকমের আলপনা আঁকা। এখানে সংস্কৃতিটা কোথায়! ঊঠতি যুবকের হৃদয়ে সুড়সুড়ি দেয়া ছাড়া এর কাজটা কী? আমরা কি এটাকে অপসংস্কৃতি বলতে পারি না! অবশ্য এটা ও ঠিক যে, ৩৬৪ দিনের ডিজুস আর আর.জে কালচারের নষ্টবীজ একদিনে উপড়ানো যায় না। রবীন্দ্রনাথ এদের দেখে কী বলতেন? "এসো হে (কাল)বৈশাখ!, এসো এসো"? আমরা কি পারি না, সকল ন্যাকামি, ভন্ডামি, হীনমন্যতা বাদ দিয়ে সত্যিকারের বাঙ্গালী প্রানসত্ত্বাটাকে আঁকড়ে ধরতে? পাশ্চাত্যের অন্ধ-অনুকরণের উদ্দামতায় নিজেদের না ভাসিয়ে দিয়ে, একটু সহজ-সরলভাবে আপন মৃত্তিকার ঘ্রানটুকু বুক পেতে নিতে কি খুব বেশি গাঁইয়া-খেত (!) হয়ে যেতে হয়? আমাদের সন্তানদের ইতিহাস-সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব।

একে এতটা দায়সারাভাবে নাইবা নিলাম! সবাইকে আগাম .................................................শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ '১৪১৬ বঙ্গাব্দ। সত্য ও সুন্দরের অবগাহনে শুদ্ধ হয়ে উঠি আমরা সবাই। ভালো থাকুন।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।