আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লস প্রজেক্ট



লস প্রজেক্ট তাহসিন আহমেদ প্রতিদিনকার মত সেদিনও সন্ধ্যায় মহল্লায় বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে গালিবের ফোন বেজে ওঠে... হ্যালো! মেরাজ ! ওপাশ থেকে মেরাজ বলল ও বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সাথে রাজু কাকা আছে। অতঃপর গালিব, মেরাজ এবং রাজু কাকা যথারীতি সন্ধ্যাকালীন আড্ডায় ১২/এ এর শাহ আলমের চা’র দোকানের সামনে জড়ো হয়। চা-বিড়ি পর্ব শেষে ধানমন্ডি লেক-এর দিকে যেতে যেতে তাদের তিনজনের মধ্যে নানান বিষয়ে কথা হয়। তিনজনের মধ্যে গালিব একটু ভিন্ন।

ভিন্ন কেননা তার অন্যতম প্রিয় শখ যা, তাকে ইন্টারনেটের ভাষায় বলা হয় “হ্যাকিং”। এ বিষয়ে দলের অন্য দু’জনের অতি উৎসাহ বা অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাদের এ ব্যাপারে কিঞ্চিৎ আগ্রহ ছিল, আর তাই হয়তো সেদিনের আড্ডায় গালিব যখন মোবাইল চ্যাটিং সফট্ওয়্যার “mig33” নিয়ে কথা বলছিল, সবার মনে হয়তো তখন নানান রকম দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করে। এমনকি গালিব নিজেও সবার কাছে প্রস্তাব করে এবার সে একটা বড় রকমের খেলা খেলতে চায়। এভাবে নানান কথায় কিংবা ফন্দি-ফিকিরে সেদিনকার মত সন্ধ্যাকালীন আড্ডার সমাপ্তি হয়। এমন আরেক সন্ধ্যায়, প্রতিদিনের মত সেদিনও মহল্লায় বিদ্যুৎ চলে গেলে গালিবের ফোন বেজে ওঠে।

রাত খুব একটা হয় নি তবে আকাশে মেঘ ছিল তাই চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আসছিলো। সেদিন আর মেরাজ, গালিব কিংবা রাজু কাকা শাহ আলমের দোকানে না গিয়ে তিনজন মিলে গালিবদের বাসার ছাদে গিয়ে বসে। সময়টা ছিল ২০০৪ সাল। মেরাজ সে বার বুয়েটে চান্স পেয়েছে। তার এক রোল সামনে ১৯০তম স্থান পাওয়া মেয়েটির নাম ‘সেতা’।

তাকে দেখলেই ছেলেপেলেদের নাকি প্রেমে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। প্রেমের প্রসঙ্গ আসতেই গালিব বলে তার এক কাজিন আছে। সে নাকি মোবাইলে উদ্দেশ্যহীনভাবে অপরিচিত ছেলেদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে। গালিব কিংবা মেরাজ কারও-ই তখন পর্যন্ত প্রেম ছিল না। তাই হয়তো গালিব ব্যাপারটা একদম মেনে নিতে চায় না।

হঠাৎ করেই যেন সবার মাথায় ভূত চাপে। গালিবের ফুপাতো বোনের নাম ফারাহ। সে ভূতের গলির ৫ নম্বর রোডে থাকে। তিনজনের সবাই মিলে ঠিক করে যে ফারাহকে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বড়সড় একটা ঝাড়ি দেয়া হবে। যেমন কথা তেমন কাজ, রাজু কাকার মোবাইল থেকে ফোন করা হলে ওপার থেকে ফারাহ-র কন্ঠ বলে ওঠে ‘হ্যালো!’।

ফারাহ খুব সম্ভবত ভার্সিটির কোনো জরুরী কাজ করছিল, তাই সেদিন খুব একটা কথা বলা হয় না। কিন্তু দ্বিতীয়দিন কাকাকে দিয়ে ফোন দেয়া হলে সে তার স্বভাবগত কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, কাকার সাথে খুব স্বাভাবসুলভ ভঙ্গিতেই কথা বলে; যেন তার কতদিনের পরিচিত বন্ধু!! এভাবে বিষ্ময়ে হতবাক অবস্থায় তিনজনের কিছুদিন কেটে যায়। কাকাকে এখন আর নিজে থেকে ফোন দেয়া লাগে না, সময়-অসময়ে ফারাহ-ই কাকাকে ফোন করে কথা বলতে চায়। এমনকি রাজু কাকা তার পরিচয় গোপন করতে চাইলে ফারাহ তার প্রিয় বান্ধবী নিতুকে দিয়ে তাকে ফোন করাতো। এভাবে প্রায়ই নিতু রাজু কাকার কাছে ফোন করে তার সম্পর্কে জানতে চাইতো।

বিষয়টা কাকা এক সন্ধ্যাকালীন আড্ডায় জানালে সবাই ফারাহ নামক মেয়েটির সম্পর্কে দ্বিধায় পড়ে যায়, কেননা সবার মনে প্রশ্ন জাগে, কোন্ কারণেই বা মেয়েটি অপরিচিত এই ছেলেটির ব্যাপারে এতোটা আগ্রহ দেখাচ্ছে?? মানুষ তার পরিবেশের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখে। ফারাহ কিংবা তার মত মেয়েরা কি বন্ধ জানালা বিশিষ্ট কোন ভুবনের বাসিন্দা? তারা কি ভাল-মন্দের প্রভেদ বুঝে না, এমন কিন্তু না। প্রকৃতপক্ষে তারা কেবল ভোগের নেশায় মত্ত থাকে। প্রকৃতির সৃষ্টিশীল আহব্বানে সাড়া দেয়ার মত ধৈর্য কিংবা সাহস কোনোটাই তাদের থাকে না। তারা কেবল পারে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কোমর দুলিয়ে নাচতে।

তাদের কর্ম অন্যের মুল্যবান সময় হরণ করা। বেলা শেষে সবাই যখন সুখের নিদ্রায় যায়, তাদের তখন ভোর হয়, শুরু হয় কথার উৎসব। যতটুকু জানি, ফারাহ-র এই অভ্যাস শুরু হয় ভার্সিটিতে ভর্তির পর থেকে। তার ছিল কিংবা এখনো আছে গুটিকয়েক উচ্ছৃঙ্খল বান্ধবী, যারা প্রতিনিয়ত ছেলেদেরকে নিয়ে কথায় মত্ত থাকে; যাদের রয়েছে বিশ-পচিঁশেক সিম কার্ড। থাক আর নাই বা বলি।

কিন্তু ফারাহ সম্পূর্ণ তার পরিবারের আদর্শের বিপরীতে গিয়ে গড়ে তোলে এক শখের রাজ্য। প্রেম, ডেটিং, প্রেমালাপ ইত্যাদি ছিল তার শখ। আর এই শখের কারণেই তার যত ভুল সবকিছুকে তার কাছে খুব স্বাভাবিক ও রীতিসিদ্ধ বলে মনে হতে লাগলো। কোন এক রবিবার বিকালে গালিবের ফোন আসে। রাজু কাকা মেরাজকে সাথে নিয়ে ধানমন্ডি লেক-এ চলে আসতে বলে।

অতঃপর তিনজন জাহাজ-বাড়ির সামনে ব্রিজের উপর পা তুলে হাতলে বসে পা দুলায়। রাজু কাকা বলে ফারাহ নাকি তাকে বন্ধুত্বের অফার দিয়েছে এবং সে নাকি তার সাথে দেখা করতে চায়। গালিব ও মেরাজ রাজু কাকাকে দেখা করতে রাজি হতে বলে। রাজু কাকাও তাদের কথা ফেলতে পারে না। তাই হয়তো মঙ্গল কিংবা বুধবার সকালে সায়েন্স ল্যাব-এর ‘নিউ উইম্পি’ ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে ফারাহ তাকে দেখা করতে আসতে বলে।

সৌভাগ্যক্রমে জায়গাটির ঠিক একটু সামনেই ছিল একটা ওভারব্রিজ। দেখা করার দিন রাজু কাকা, মেরাজ এবং গালিব একই রিক্সা করে সিটি কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাজু কাকাকে সেখানেই দাড়ঁ করিয়ে মেরাজ এবং গালিব ওভারব্রিজের উপর চলে যায়। এর কিছুক্ষণের মাঝেই ফারাহ চলে আসে। গালিব আর মেরাজ ব্রিজ থেকে সব কিছু দেখে।

যেহেতু ফারাহ এর বাসা ছিল খুব কাছে তাই সে রাজু কাকাকে বাসায় চা খাবার অফার করে, কেননা মা ছোট বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাওয়ায় বাসায় তখন কেবল তাদের মেঝ বোন অবস্থান করছিল। রাজু কাকা প্রথম দেখাতেই বাসায় চা’এর অফার পেয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। সে ফোনে গালিবকে কথাটা জানায়। গালিব তাকে বাসায় যেতে রাজি হতে বলে। গালিব কিংবা মেরাজ কেউ ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারে না।

তারা কোনভাবেই বুঝে না কিভাবে একটা মেয়ে ছোটবোন বাসায় থাকার পরও অপরিচিত এক ছেলেকে চা বানিয়ে খাওয়ানোর প্রস্তাব করে। সে যাই হোক, রাজু কাকা ফারাহদের বাসায় যায়। এর কিছুক্ষণ পরে গালিব ও মেরাজ সেই বাসায় হাজির হয়। গালিব ছিল ফারাহ-এর কাজিন এবং মেরাজ সম্পর্কে ছিল তার মামা। তারা ড্রয়িং রুম-এর পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখতে পায় ফারাহ রাজু কাকা সাথে গল্প করছে।

ওদেরকে দেখতে পেয়ে ফারাহ খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই রাজু কাকার সাথে তার মামাতো ভাই গালিব এবং বছর দু’এক বড় মেরাজ মামাকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং বলে রাজু তার বন্ধু!!! গালিব এবং মেরাজও বিশিষ্ট অভিনেতাদের মত খানিকটা অভিনয় করেই রাজু কাকার সাথে পরিচয় পর্ব শেষে পাশের কোনো রুমে গিয়ে বসে। অল্প কিছুক্ষণ পর আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যায়। গালিব বলে তার নাকি নীলক্ষেতে কি এক কাজ আছে। তাই মেরাজ ও গালিব সে বেলা চলে আসে এবং রাজু কাকার জন্য বসুন্ধরা গলিতে অপেক্ষা করে। একসময় রাজু কাকাও সেখানে আসে এবং সে জানায় ফারাহ-র নাকি তাকে পছন্দ হয়েছে।

যেহেতু রাজু কাকার আগে থেকেই প্রেমিকা ছিল তাই সে এই ব্যাপারে আর কোনো বারাবারি করার পক্ষে ছিল না। সে সহ বাকিরাও সিদ্ধান্ত নেয় তারা এই ব্যাপারে আর কোন পদক্ষেপ নেবে না। কিন্তু কিছুদিন পার না হতেই একদিন ফারাহ রাজু কাকাকে ফোন করে। ঘটনাক্রমে গালিব এবং মেরাজও তার সাথেই ছিল। ফারাহ বলে সে তার নানু বাসায় বেড়াতে এসেছে, যদি সম্ভব হয় সে যেন তার নানু বাসার ছাদে এসে দেখা করে যায়।

রাজু কাকা তখন ধানমন্ডি লেক-এ আড্ডা দিচ্ছিল আর যেহেতু গালিবদের বাসা অর্থাৎ ফারাহ-এর নানু বাসা ধানমন্ডিতেই তাই গালিব ও মেরাজের অনুরোধে সে আর একবার দেখা করতে রাজি হয়। তখন প্রায় রাত ৭টার উপরে বাজে। গালিব এবং মেরাজ-এর অনুরোধে এবারো রাজু কাকা তাদের কথা ফেলতে পারে না। তিনজন মিলে গালিবদের বাসার ছাদে যায়। কি বিধির কি বিধান, যে ছাদে বসে তারা ফারাহ-কে ধমক দেয়ার জন্য ফোন করেছিল, সপ্তাহ দুই-এক বাদে সেই ছাদেই দেখা করিয়ে দেবার জন্য ফারাহ গালিবকে অনুরোধ করে।

গালিব ও হয়তো এর শেষ দেখতে চেয়েছিল। তাই সে আর মেরাজ, ফারাহ-র অনুরোধে আগে থেকে ছাদের তালা খুলে গিয়ে বসে থাকে। মিনিট পাচেঁক পর ফারাহ রাজু কাকাকে সাথে নিয়ে ছাদে উঠে। যেহেতু সেদিন বাসায় রাজু কাকার সাথে সে গালিব বা মেরাজ-এর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তাই ওদিন ছাদে তাদের সামনেই রাজু নামের অপরিচিত ছেলেটির সাথে অন্ধকারে হেঁটে হেটেঁ কথা বলায় সে মোটেও বিব্রত হয় নি। এমন করে সেদিনও বিষ্ময়ে হতবাক অবস্থায় গালিব কিংবা মেরাজের দিনটা কেটে যায় কিংবা হয়তো কাটতে চায় না।

গালিব বলি, মেরাজ বলি বা রাজু কাকার কথাই বলি না কেন; কেউ কোনদিন ভুলক্রমেও ভাবতে পারে নাই তাদের সামান্য দুষ্টমি করা থেকে এতো কিছু হয়ে যাবে। ফারাহ নামের মেয়েটি পরিচয় না জানার পরও একটি ছেলের সাথে এতোটা স্বাভাবিক আচরণ করে কিভাবে তা কারও মাথায় ঢুকে না। অতঃপর কারও আর বুঝতে বাকি থাকে না ফারাহ রাজু কাকার প্রেমে পড়ে গিয়েছে। একদিন রাজু কাকাও বলে সে ওই মেয়ের সাথে আর কোন প্রকার কথাই বলতে চাচ্ছে না। তার মতে, “মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান”।

তাই সে তার কাজের ফল কোন অশুভ ফল হোক এ আতংক থেকেই হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক এই মিছে প্রেম-প্রেম খেলা থেকে নিজেকে সড়িয়ে নেয়। অন্যদেরও বুঝতে বাকি থাকে না ফারাহ কতটা নিচে নেমে গেছে। রাজু কাকা তার কথা মত ফারাহ-কে একদিন ফোনে জানায় যে, সে তার একান্ত প্রিয় এক বন্ধুর জন্য এই কয়দিন তার সাথে মিশেছে কেবলমাত্র তার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে যা তার বন্ধুই তাকে করতে বলেছিল। তার বন্ধুর অনুরোধে সে যদি কাজটা করে কোন অপরাধ করে তবে তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়; কথাটি বলে সে ফোনটি রেখে দেয়। বাকি দুইজনও আর এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায় না।

ফারাহ-র ও হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। মাঝে একদিন গালিব তার ফুফুর বাসায় (ফারাহদের বাসায়) যায়। ঘটনাক্রমে ফারাহ তার কাছে সেদিন মাসুম ভাই-এর ফোন নম্বর চায়। মাসুম ভাই মেরাজদের বাসার ভাড়াটিয়া। ঢাকা কলেজে ইংরেজি ১ম বর্ষের ছাত্র।

মেরাজের বড় ভাই-এর বিয়েতে নাকি মাসুম ভাই অতিরিক্ত মুড দেখিয়ে চলেছে, তাই ছেলেটাকে একটু শায়েস্তা করতে চায় সে। এদিকে ফারাহ-এর এক বান্ধবী বৃষ্টি নাকি এ ব্যাপারে ওস্তাদ... তাই গালিবের কাছে সেদিন নম্বর আদায় করতে না পারলেও একদিন অনেক জোড়াজোড়ি করার পর গালিব তাকে নম্বরটা দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই মাসুম ভাই-এর কাছে জানতে পারা যায় তার নাকি ইদানিং একটা মেয়ের সাথে কথা হয়, মেসেজ চালাচালি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। মাসুম ভাইও মাঝে মাঝে গালিবদের সাথে আড্ডায় শামিল হত। একদিন সে জানায়, তার সাথে ফোনে কথা বলা মেয়েটির নাকি দেখা হয়েছে।

যেহেতু মাসুম ভাই পড়তো ঢাকা কলেজ আর বৃষ্টি বা ফারাহ ছিল সিটি কলেজের ছাত্রী; তাই একদিন বৃষ্টি ও তার বান্ধবীরা স্যারের বাসা থেকে পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে গ্লোব মার্কেটে মাসুম ভাই-কে দেখা করার জন্য আসতে অনুরোধ করে। মাসুম ভাই জানায় যে বৃষ্টি মেয়েটাকে তার ভালো লেগেছে এবং মেরাজ, রাজু কাকা ও গালিব জানতে পারে দেখা করার সময় আরো ৪/৫ জন বান্ধবীও এসেছিল এমনকি ফারাহও এসেছিল। অতঃপর গালিব স্পষ্ট বুঝতে পারে যে মাসুম ভাই-এর বিপদ আসন্ন, তাই সে তাকে শুরু থেকে সবকিছুই জানায়। অনুমতি ছাড়া তার মোবাইল নম্বর দেয়ার জন্যও সে ক্ষমা চায়। সবকিছু জেনে কিছুসময় মাসুম ভাই মন খারাপ করে বসে থাকে।

সে কথার উত্তর দেয় না। এবার আর রাজু কাকা চুপ করে থাকতে পারে না। চারজন মিলে ঠিক করে বৃষ্টি ও ফারাহকে এবার একটা উচিৎ শিক্ষা দিবে। চারজনের মধ্যে গালিব প্রস্তাব করে সেদিন থেকে তারা একটা ক্লাব গঠন করবে এবং ক্লাবের নাম হবে “নাড়ানি ক্লাব”। ক্লাবের অন্যতম কাজ হচ্ছে “শিষ্টের রক্ষা, দুষ্টের দমন”।

সেদিন সন্ধ্যায় পরিকল্পনা হয় খুব শীঘ্রই উচ্ছৃঙ্খল মেয়েগুলোকে বড় রকমের ধরা খাওয়ানো হবে। তাই মাসুম ভাই বৃষ্টির সাথে মেসেজ আদান-প্রদান আর বন্ধ না করে যোগাযোগ রেখে যায়। রাজু কাকাও ফারাহ-কে একদিন দেখা করার কথা জানায়। ফারাহ হয়তো মন থেকেই এমন কিছু আশা করে বসেছিল তাই সে মুহুর্তেই রাজি হয়ে যায়। এভাবে একদিন ধানমন্ডি ২ নম্বর, সিটি কলেজের পাশে “নিউ উইম্পি” ফাস্ট ফুডের সামনে ফারাহ এবং বৃষ্টির সাথে দেখা করার জন্য মেরাজ, মাসুম ভাই, গালিব এবং রাজু কাকা রওনা হয়।

প্রথম অবস্থায় রাজু কাকাকে নিচে দাড় করিয়ে বাকি তিনজন ওভারব্রিজের উপর গিয়ে দাঁড়ায়। ফারাহ এবং বৃষ্টি দু’জনেরই সেদিন স্যারের বাসায় পড়া ছিল এবং স্যারের বাসা খুব কাছে হওয়ায় তারা ছুটি হলে একসাথে হেটেঁ বাসায় রওনা দেয়। ফারাহ হয়তো চেয়েছিল তার কল্পিত বয়-ফ্রেন্ডকে বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে তাই তার কিছু বান্ধবীদের নিয়ে রাজু কাকার কাছাকাছি উইম্পি’র সামনে যায়। রাজু কাকাও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওভারব্রিজের সিড়িঁর একদম খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। ফারাহ যখন কেবলমাত্র তার বান্ধবীদের সাথে রাজু কাকার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, ঠিক এই সময় গালিব, মেরাজ এবং মাসুম ভাই সিড়িঁ বেয়ে ব্রিজ থেকে নামে।

একদিকে বৃষ্টি মাসুম ভাইকে সে অবস্থায় দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠে, অন্যদিকে ফারাহ কেবলমাত্র তখন পুরোপুরি বুঝে ফেলে তাদের আজকের এই দেখা করানো না সবকিছুই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হয়ে আসছে, যা সে এক মূহুর্তের জন্য কোনদিন ভেবে দেখে নি। অতঃপর সে তার মামা কিংবা কাজিনের কাছে ধরা পড়ে যায়। নিজের আত্মসম্মান অনেকদিন পর ফিরে পেয়ে হয়তো সেদিন তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে নোনা অশ্রু বেয়ে পড়ে। আর এক মুহুর্তও সেখানে না থেকে সে বাড়ির পথে প্রায় ছুটে পালায়। তার বান্ধবীরাও তার পথ অনুসরণ করে।

রাজু কাকা, গালিব, মেরাজ কিংবা মাসুম ভাইও কি সেদিন অপরাধবোধে ব্যাথিত হয় কিনা তা আর জানা যায় না... গল্পের এখানেই সমাপ্তি ঘটে। তা স্বত্তেও কারও কারও মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। কেউ কেউ ভাবতে পারেন ফারাহ এর চরিত্র বুঝি খারাপ কিংবা ভাবতে পারেন গালিব বা তার সহচরদের কি খেয়ে-দেয়ে কোন কাজ ছিল না যে তারা অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামায়?? কিংবা সচেতন পাঠক হয়তো ভেবেই বসবেন মেরাজ তো সম্পর্কে তার মামা ছিল সে কিভাবে এই কাজটা করতে পারলো? এসব প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর কারও জানা নেই। এর উত্তরের সন্ধান করতে হলে কারও না কারও পক্ষপাতিত্ব করা হয়ে যেতেও পারে। তাই উত্তরের অনাবশ্যক অনুসন্ধানে না থেকে বরং এই মতে উপনিত হওয়া যেতে পারে যে, উপরের ঘটনা বা দুর্ঘটনা যেটাই ধরা হোক না কেন তার পুরোটাই ছিল একটা লস প্রজেক্ট।

tahsiN // 03-04-09 DhaNmonDi


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।