আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল-খানসা: সপ্তম শতকের এক আরব কবি

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

আল-খানসার কাল্পনিক ছবি। আজ আমরা আরব দেশগুলিতে নারীর স্থান নিয়ে যাই বলি না কেন-সেই সপ্তম শতকেই কিন্তু এক প্রতিভাবান নারী কাব্য লিখে সমগ্র আরব উপদ্বীপের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি আল-খানসা।

আল-খানসার কবিতায় মরুভূমির সমস্ত উপাদান রয়েছে। যেমন: বৃষ্টি, তরবারী, উট, ধূলা, পাহাড়-যে পাহাড়ের চূড়ায় জ্বলে আগুন। আল-খানসা তাঁর জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছিলেন। শুধু তাই নয় - ইসলাম গ্রহন করেছিলেন কবি। আমৃত্যু মদিনায় ছিলেন।

যেখানে ইসলামের নবী বাস করতেন। আল-খানসার পুরো নাম তুমাদির বিন্ত আমর ইব আল হারিথ ইবন আল শারিদ। সময়কাল : ৫৭৫-৬৪৬ খ্রিস্টাব্দ। মক্কা না মদিনা- আল-খানসা কোথায় জন্মেছেন-তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে অবশ্য বির্তক আছে। শোকগাথা রচনা করার জন্য আল-খানসা আরবি সাহিত্যে অমর হয়ে রয়েছেন।

আমরা জানি, কেউ মারা গেলে লাশ ঘিরে উচ্চস্বরে বিলাপ করার প্রথা রয়েছে আরবদেশে। কখনও কখনও সে শোকার্ত ঘটনা নিয়ে বিলাপকাব্য রচনা করা হয়। বিলাপকাব্য রচনার ক্ষেত্রে আল-খানসা ছিলেন অদ্বিতীয়। মধ্যযুগের আরবে গোত্রপরিচয় ছিল প্রধান। আল-খানসা ছিলেন সুলাইম গোত্রের।

সেই সুলাইম গোত্রের কোন যোদ্ধা নিহত হলে তার উদ্দেশে আল-খানসা শোকগাথা রচনা করতেন। আল খানসার দুইজন ভাই ছিল। তাদের নাম: শাকর ও মুকুইযা। এরা যুদ্ধে মারা গেলে আল-খানসা শোকগাথা রচনা করেন। ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের সাসানিয় সম্রাটের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সমর অভিযান পরিচালিত হয় ।

আল-কাদিসিয়ার যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হয়। আল-কাদিসিয়ার যুদ্ধে আল-খানসার চার ছেলে মারা গিয়েছিল। আরবি বিলাপসংগীতে বারংবার আক্ষেপ করা হয়-সেই সঙ্গে মৃতব্যাক্তির বীরত্বের প্রশংসা করা হয়। মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহনের কথাও বলা হয়। আল-খানসার বিলাপকাব্যেও এইসব বৈশিষ্টই বিদ্যমান।

আরবিতে কবিতা সঙ্কলনকে বলে: ‘দিউয়ান’। আমাদের সৌভাগ্য এই-আল-খানসার দিউয়ান কালের যাত্রায় টিকে গিয়েছে। আজ আমরা আল-খানসার লেখা দুটি কবিতা পাঠ করব। শাকর-এর জন্য শোকগাথা শাকরের জন্য চিৎকার করে কাঁদো দেখ, উপত্যকায় একটি পাখিও শোকার্ত। যখন যোদ্ধারা হালকা অস্ত্রে হয় সজ্জিত যখন তরবারীর রঙ স্বচ্চ নুনের মতন যখন ধনুকের টঙ্কার করে আর্তনাদ যখন বাঁকানো বর্শাগুলো সব ভিজে সাহসী, দূর্বল নয়- বরং অরণ্যে শিকারী সিংহের ন্যায় সাহসী যে যুদ্ধ করেছে তার বন্ধুদের জন্য আত্মীয়বর্গের জন্য-তারাও সিংহের ন্যায় সাহসী।

ঝড়ঝঞ্ছা থেকে সে তার গোত্রকে বাঁচিয়েছে বাঁচিয়েছে মরুভূমির একাকী পথিককে বাতাসের গর্জন করে উঠলে তার মানুষেরা সুখি যখন জমাট মেঘের নিচে উড়বে বাতাসের ধূলা। ঘুম নেই আমার দুচোখে ঘুম নেই সারারাত আমি জেগে ছিলাম যেন আমার দুচোখ থেকে বেরুচ্ছে থকথকে পুঁজ! আমার চোখ ছিল নক্ষত্রপুঞ্জে আমি যদিও ওদের মেষপালক নই ছেঁড়া কাপড়ে শরীর ঢেকে নিই আমি দুঃসংবাদ শুনেছি দূত বলল: ‘শাকর এখন পাথর ও জঙ্গলের মাঝখানের মাটির উপর শায়িত। ’ যাও! আল্লাহ্ তোমার সহায় হোন, পুরুষের মতন প্রতিশোধ নাও। তোমার হৃদয় মুক্ত শক্ত তোমার হৃদয়ের শিকড়। মেষপালকের মতো তুমি রাত্রিকে উজ্জ্বলতা দান কর শক্ত, দৃঢ়-মুক্ত মানবের সন্তান।

আমি আমার গোত্রের বীরের জন্য বিলাপ করি, মৃত্যু তোমাকে ও অন্যদের ছিনিয়ে নিয়েছে। যতক্ষণ পাখিটি কাঁদবে-আমি তোমার জন্য শোক করব যেভাবে মধ্যরাত্রির পথিককে আলো দেয় নক্ষত্র। শক্রদের সঙ্গে স্থাপন করব না শান্তি তাদের পালিত পশুরা সব বিবর্ণ হয়ে যাক তারা তোমার থেকে তাদের লজ্জ্বা ধুয়ে নেবে বিশুদ্ধ হবে তোমার পতিত রক্তঘাম আর যুদ্ধ তো খালিপিঠে কুঁজোর পিঠে চড়া! হে যুদ্ধের প্রতিপালক। তুমি বর্শাধারীর চুল ও নখ উপড়ে নাও! সহস্র চোখ দেখছে তোমাকে যারা ভয়ে অন্ধ। তারা বিস্মিত তোমার উদর নাভীর উপরে ছিন্নভিন্ন তোমার হৃদয়ের রক্তের ফেনা তোমার হৃদয়ের রক্তের ফেনা তোমার হৃদয়ের রক্তের ফেনা সূত্র: Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।