বন্ধকীকৃত সম্পদ আত্তীকরণের লোভ এবং কল্পিত ঝুঁকি বাণিজ্যের খেসারত দিচ্ছে বিশ্ব। বিশ্বব্যপী মন্দার সূচনা হয়েছিলো এই ঝুঁকি বাণিজ্যের কারণেই। অবশ্য ঝুঁকিবাণিজ্য বলা যায় কি না বিষয়টাকে এটা নিয়ে আমার নিজের দ্বিধা না থাকলেও যারা অর্থনীতির ছাত্র, তারা বিষয়টার কোনো গালভরা নাম নিয়ে উপস্থিত হতে পারে।
"ক" এমন একজন মানুষ, যার স্বচ্ছলতা আছে, তবে নিয়মিত উপার্জনের শেষ সীমায় গিয়ে সে একটা বাসা কিনলো। বাসা কেনা জন্য যে ব্যাংক থেকে দেনা করলো, এবং ব্যাংকে তার বাসার কাগজ জমা।
সে নিয়মিত ভাড়াটের মতো ব্যাংকে মাসিক বীমার টাকা দেয়, ৩০ বছরের চুক্তি কিংবা ২৫ বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ সে।
ব্যাংক এটা নিয়ম নির্ধারণ করেছে। "ক" প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিবে, যদি কোনো কারণে সে পরপর ৩ মাস নির্ধারিত অর্থ জমা দিতে না পরে, তার জরিমাণা হবে অবশিষ্ট দেনার উপরে নির্ধারিত হারে।
এটার একটা ঝুঁকি আছে। ব্যাংক হিসেব করে দেখলো যে পরিমাণ বসতভিটা তার কাছে বন্ধক দেওয়া আছে ,তার ভেতরে ৩০ শতাংশ বাসার মালিকই চুক্তির শর্ত পূরণ করতে পারবে না।
সুতরাং নিয়মিত মাসিক আয়ের পরেও তার একটা সম্ভবনা আছে আগামী কয়েক বছরের ভেতরে সম্পত্তির সম্পূর্ণ অধিকার বুঝে পাওয়ার। সে এই ৩০ শতাংশ সত ভিটার বন্ধকী কাগজ আলাদা করে বললো, আমার কাছে এই পরিমাণ সম্পদ জমা আছে যা আগামী ৫ বছরের ভেতরে আমার হবে।
সুতরাং ব্যাংকের প্রকৃত সম্পদ যাই হোক না কেনো, নিজের বন্ধকী সম্পদকেও নিজের সম্পদ দাবি করবার মাধ্যমে তার নিজের একটা বাড়তি অর্থের জোগান হলো।
এই কাগজের উপরে নিলাম হলো, সেটা আরেকদল কিনে নিলো এই ভরসায় যে তারা এই সম্পত্তির মালিক হবে। এই চক্র তৃতীয় হাত ঘুরে যখন বাজারে আসলে তখন ফুলে ফেঁপে এমন অবস্থা হলো, যে সম্পদ প্রাথমিক ভাবে "ক"য়ের নামে নিবন্ধিত, সেটার মালিকানা "খ" এর হাত ঘুরে "গ" এর কাছে চলে গেছে এবং "গ" এটাকে নিজের সম্পদ দাবি করে বাজারে ব্যবসা করছে।
এই বায়বীয় মূলধনের বিকিকিনিতে জড়িয়ে পড়া সকল সংগঠনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অবশ্য এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত তেমন শিক্ষা নিলো না বলেই পুনরায় এই বিষয়ে কথা বলা। এশিয়ার ব্যংকিং অনেক বেশী ঝুঁকিমুক্ত, একটা জমির কাগজ শুধুমাত্র একটা ব্যাংকেই বন্ধক রাখা যায়, এবং এই ব্যাংক জমির অধিকার হাতছাড়া না করা পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যাংক এটাতে মাথা ঘামায় না। কিন্তু বর্তমানে দি সিটি ব্যাংক পুনরায় এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তারা ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বন্ধকী জমি কিনছে, এবং সেই বন্ধকি জমি যদি ব্যাবসার কারণে বন্ধক রাখা থাকে, এবং সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি রুগ্ন হয় তবে সেটাকে সচল করতে আরও বেশী ঋণ দিচ্ছে।
প্রক্রিয়াটা বিশ্বমন্দা শুরু হওয়ার আগের কথাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
সেবার এমন প্রতিযোগিতার ভেতরেই ধ্বংসের বীজ রোপিত হয়েছিলো। বিশ্বের ব্যাংকগুলো যখন কনজারভেটিভ ব্যাংকিংকে প্রাধান্য দিচ্ছে, বায়বীয় সম্পদের তুলনায় স্থায়ী সম্পদের উপরে গুরুত্ব আরোপ করছে, ঠিক সেই সময়ে এই প্রকল্প কেনো গৃহীত হলো সেটা বুঝতে পারলাম না। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বেশী নিয়ন্ত্রন করে ব্যংকগুলোকে, প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে এই বিষয়ে তেমন প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।