আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লাহ আমারে মফিজ বানায়া দাও

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

ছেলেটা প্রথম যেদিন ঢাকায় আসল। হাতে একটা চটের ব্যাগ। পাটের বলা চলে। যে ব্যাগ দিয়ে কর্তারা বাজার সদাই করে।

অথবা গেরামের যে নতুন বউটা কাপড় ভর্তি করে শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রথম বাপের বাড়ি আসে। ঠিক সেই রকমের একটা ব্যাগ ভর্তি কলেজ আর স্কুলে পাঠ চুকানো বই নিয়ে। বইয়ের ভিড়ে প্রয়োজনীয় জামা-কাপড়ের ঠাঁই হয়নি যে ব্যাগে। কুলিরা যেভাবে বস্তা কাঁধে নেয়, ঠিক সেই ভাবে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে সোজা ফকিরাপুল। পরবর্তি গন্তব্য জিগাতলা, ধানমন্ডি।

জিগাতলা হাজি আব্দুল হাই রোড। এর মধ্যে ‘এইখানে দেশ-বিদেশে ফোন করা যায়’ দোকান থেকে পূর্ব পরিচিত বড় ভাইকে ফোন করে কীভাবে যেতে হবে তার ফিরিস্তি নেওয়া হয়ে গেছে। মেসে পৌঁছানোর পর ছেলেটাকে দ্যাখে মেসের সবাই কোন এক ইংরেজি সিনেমায় দেখা এক সামুদ্রিক আজব প্রাণী যার চেহারা অনেকটা ঘোড়ার মতন বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ভারতীয় সিনেমা অভিনেতা ঋতিক রোশনের (নিশ্চয় শ্রদ্ধা রেখেই এই তুলনাটা দেয়া হল) চেহারার মতন প্রাণীটা দ্যাখে যেভাবে অভিনেতারা তার সাথে তাবৎ দর্শকেরা চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে ছিল, সেই দৃশ্যটাই সেদিন ছেলেটা দ্যাখে ছিল। তাতে অবশ্য ছেলেটার সেদিন কিছুই আসে যায়নি। গেরামের ছেলে।

মফিজ। মফিজ মার্কা চেহারা। মফিজি হাব-ভাব। মেসের বড় ভায়ের বন্ধুঃ ইস ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া তো মাইরি বিপদের। আজব।

কইত্থে আসে এইসব চেংরা। এরে মানুষ করা লাগব। তা না হলে তো মান-সম্মানের চাকা পাঙ্কচার হয়া যাবে। তালিম-১ঃ বাইরে গেলে উঁচা উঁচা ফ্ল্যাট দেইখা হা করে তাকায়ে থাকবা না। রাস্তা পার হবার সময় নিঃশ্বাস বন্ধ করে দৌড় মারবা না।

সবক-২ঃ স্মার্ট মেয়ে মানুষ (আসলে নগ্ন) দেইখা ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকায়ে থাকবা না। রাস্তায় বুড়ো মানুষ দ্যাখলে যেমনে কইরা সালাম দাও, অমনে সালাম দিবা না। মেসে ফিরে এসে। টিচিং নং-৩ঃ মেসে যত বড় ভাই আছে এরা তোমার সিনিয়র। এদের সালাম দিবা।

ভদ্রভাবে কথা বলবা। আর শোন। যেমনে কইরা আসসালামু আলাইকুম দেও, অমনে না মিয়া। একটু স্মার্ট হও। স্লামালাইকুম বলবা।

বুঝছ? জ্বী ভাইজান। আরে শালার আজব তো। কত্তবার কইছি, ভাইজান বলবা না। ভাইয়া বলবা। আর অই যে আমাদের বাবা আসলে যেমনে চাচা কও, অইসব বলবা না।

বাবা ভাববে কোন আজব চিড়িয়া আনস্মার্ট পোলাপাইনের লগে থাহি। আঙ্কেল বলবা। কিছুদিন পর। গেরামের ছেলেটা। হেই ব্রু।

কী অবস্থা? কেমন চলছে ম্যান? চলেন চা-সিগ্রেট খাইয়া আসি। চল্‌। খাওয়া শেষ। এই মামা বিল পরে দিমু। লিইখা রাইখো।

ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ডটা...... কোনডার কথা কস। নর্দানেরটা। কী অইছে? উনি ভাই হেব্বি। তাই? হ। থাঙ্কু।

হাই, নিশি। দোস্ত তোকে আজ খুব সেক্সি লাগছে। অ ডার্লিং ইউ নো আম সবসময় লাইক দ্যাট। থ্যাঙ্কু বেবি। বাবাকে ফোনেঃ বাবা, আমার একটা টি-স্কেল কিনতে হবে।

তুমি আট হাজার টাকা পাঠিও তো আজই। এখন রাখি, আমি বিজি। ক্লাস আছে। বাবাঃ বাবা, তোমার কী রাতেও ক্লাস হয়? কী স্কেল না কইলি। অইটা কী জিনিস বাবা? খুব দরকার কী? তোমার মা’র কানের দুলডা বিক্রি করে পাডান লাগব।

বাবা, তুমি বুঝবা না। ইউ টক মাচ। তুমি যেমনে পারো পাঠাও তো। খুব দরকার। চার বছর পর।

কী হইল জীবনে? হায়। ইস। গেরামের সেই মফিজ ছেলেটাই তো ভাল আছিল। আমি মফিজ হইয়া যাইতে চাই। আল্লাহ আমারে মফিজ বানায়া দাও।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.