আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৫ ফেব্রুয়ারির পৈশাচিকতা ও কয়কেটি প্রশ্ন

বসে আছি পথ চেয়ে....

পৈশাচিকতা, রক্তপাত আর হিংসা কিছুতেই আমাদের পিছু ছাড়ছে না। গত ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় যে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক ঘটনা ঘটে গেল তা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছে। একটি স্বাধীন ও স্বভাবিক দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা দল বেধে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের অফিসারদের দল ধরে খুন করবে, তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাবে, তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করবে, এমনকি লাশগুলোকে পর্যন্ত মাটিচাপা দিয়ে, স্যুয়ারেজ লাইনে ফেলে দিয়ে এমনকি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাবে তা কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। এমন নারকীয় উৎসব যারা চালিয়েছে, তারা আমাদের দেশেরই সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, এমন অসভ্য-বর্বররা আমাদেরই স্বদেশের মানুষ, আমাদেরই স্বজাতিÑ একথা ভাবতে সত্যিই লজ্জা হয়, মাথা হেঁট হয়ে আসে। কোনোমতেই এটাকে মেনে নেয়া যাচ্ছে না।

কোনোকিছুতেই এ ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা বা সান্ত্বনা মিলছে না। কেন এমন হলো? সহসাই কী এমন ঘটেছিল যে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ‘সুশৃঙ্খল’ পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন উচ্ছৃঙ্খল, হিংস্র উঠল? পশু বনে গেল? এটা কী এটা কী একটি-দুটি সমস্যা নিয়ে সংঘটিত একদিন দুদিনের ব্যাপার, নাকি মাসের পর মাস, বছরের বছর ধরে চলে আসা অসংখ্য কার্যকারণের চরম বিস্ফোরণ? আসলেই কি এটা স্বতঃফূর্ত বিদ্রোহ ছিল? না এটা ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? বর্তমানে অনেকেই মনে করছেন যে, এটা ছিল সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। এর পিছনে শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। তাদের সক্রিয় সাহায্যে ও ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তা না হলে বিডিআর জোয়ানরা এতটা বুনো আচরণ কীকরে করতে পারে? বিবেক, মানবিকতা, মূল্যবোধÑ সব কিছু একযোগে কী লোপ পেতে পারে? একথা ঠিক যে তাদের মধ্যে বঞ্চনা ছিল, না পাওয়ার বেদনা ছিল, ছিল শোষণ, বৈষম্য; ঊর্ধ্বতনদের ক্ষমতার দাপট, অবহেলা, দুর্ববহার এসবও; কিন্তু তার পরিণামে কী কেউ কখনো এমন উন্মত্ত পশুতে পরিণত হয়? অপ্রাপ্তি-বঞ্চনা থেকে ক্ষোভের জন্ম হয়, ক্ষোভ থেকে রোষ, কিন্তু পিলখানায় যা ঘটে গেল, তাতো শুধু ক্ষোভ কিংবা রোষের বহিঃপ্রকাশ নয়, তা অসভ্য বর্বরতা, হিংস্র পাশবিক আচরণ! কোনো সভ্য মানুষের কাছে এমন আচরণ কেউ কখনো কল্পনা করতে পারে না।

পিলখানার বিডিআরের কিছু উশৃঙ্খল সদস্য যে ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিন্দা করার কোনো ভাষা নেই। এখন সময় এসেছে কেন এমন হলোÑ তা খুঁজে বের করার। ঘটনার আড়ালের সব ঘটনা উদঘাটন করার। তাৎক্ষণিক আবেগের বশবর্তী হয়ে একচোখা হরিণীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নয়, ঘটনার পূর্ব-পশ্চাৎ সব লব-কুশের ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে অখণ্ড দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে প্রধান কর্তব্য। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করা এবং উপযুক্ত শাস্তি দেয়া।

আমাদের দেশের এ এক আজব নীতি। এখানে আড়াল থেকে যারা কল কাঠি নারেন, তারা আড়ালেই থেকে যান। সামনে থেকে ধরা খান স্বল্পবুদ্ধির হরিদাস পালেরা। তারা পরিণতি না ভেবেই লাফিয়ে সামনে চলে যায়। তারপর ফাঁদে পড়ে।

এতে করে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুই-ই হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন। ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্রের কথা জোরোশোরে তোলা হয়েছে। বতর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসা, বিএনপি-জামায়াতের আমলে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখিয়ে দেয়ার মনোভাব, জঙ্গি-মৌলবাদী গোষ্ঠীর রোষ ইত্যাদি অনেক ফ্যাক্টরকেই ষড়যন্ত্রের উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবী মহল, বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারাও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখছেন। এখন দেখার পালা এই ঘটনার সঙ্গে কোনো ষড়যন্ত্রকারীদের যোগসাজশ আদৌ খুঁজে বের করা সম্ভব হয় কিনা।

এখানে একটা কথা বলো প্রয়োজন, আমাদের দেশে যে কোনো ঘটনা ঘটলেই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ কথা বলা হয়। অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কামান দাগানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনার পেছনের মহানায়ক বা মহামহিম ষড়যন্ত্রকারীদের অস্তিত্ব খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এবারও যেন তেমনটি না হয়। মনে রাখা দরকার, যড়যন্ত্রকারীরা তাদের হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্য নানা খেলা খেলবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কেন তাদের ক্রীড়নক হব? কেন তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেব? যদি কোনো যড়যন্ত্রকারী আমার পরিবারের সদস্যদের হাত করে আমার পুরো পরিবারকেই ধ্বংস করে তাহলে এর দায় ষড়যন্ত্রকারীর চেয়ে আমার পরিবারের অভিভাবক ও সিনিয়র সদস্যদের ওপরই বেশি বর্তায় নাকি? তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যদি এমন সর্বনাশের বীজ বপন করা সম্ভব হয় তাহলে তারা কী করেছেন? কেন আমরা প্রথমে তাদের কৈফিয়ত নেব না? ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বাইরে থেকে এসে একা একাই খেল খতম করে চলে যায় না। তাদের সহযোগী প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আবার যেন-তেন সহযোগী হলে চলে না। ‘শক্তিশালী’ সহযোগী লাগে। রামচন্দ্র বেছে বের করেছিলেন রাবন-সহোদর সুগ্রিবকে।

লর্ড ক্লাইভ মীরজাফরকে। পঁচাত্তরের খুনিরা পেয়েছিল মোস্তাককে। তেমনি পিলখানার ঘটনার সঙ্গেও নিশ্চয়ই শক্তিমান কেউ আছেন। স্বল্প শিক্ষিত সেপাইদের কে নাচালোÑ সেটা বের করা কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সে কাজটা করা হবে কিনা এখন সেটাই প্রশ্ন।

এতবড়ো বিয়োগান্ত ঘটনার আগাম সংবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনো ভূমিকা ছিল কি না, থাকলে কেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, না থাকলে কেন তারা ব্যর্থ হয়েছে এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞরা অনেক কথাই বলেছেন। গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকারিতা ও ভূমিকা নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে। গত এক দশক ধরে চলা আমাদের দেশে ধারাবাহিক জঙ্গি-বোমা হামলার ঘটনার পূর্বাভাষ দিতে ব্যর্থ গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে অতীতেও অবশ্য অনেক কথা হয়েছে, তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু নয়। তবে এখনকথা জোর দিয়ে বলার সময় এসেছে যে, রাষ্ট্রীয় অর্থের আর অপচয় না করে অনতিবিলম্বে এই সংস্থাগুলোকে বন্ধ করে দেয়া দরকার। যদি কোনো উপকারেই না লাগে তাহলে আর সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় এ ধরনের দাঁতহীন হাতী পোষার মানে কী? জাতি হিসেবে আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে চরম পৈশাচিকতা ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই পৈশাচিকতা ও রক্তপাত আমাদের ছায়ার মতো অনুসরণ করে চলেছে।

বার বার ফিরে আসছে। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাটসহ চালিয়েছিল নৃশংস বর্বরতা। বর্বরতার সেই ধারাবাহিকতা আর থামছে না। স্বাধীনতার পাঁচ বছর যেতে না যেতেই ঘটে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বর্বরতা।

নিরাপত্তাবাহিনীর একদল সদস্য পঁচাত্তরে অত্যন্ত নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। জেলখানায় ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। এরপর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনানিবাসে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কুকুরের মতো গুলি করে হত্যা করা হয় অসংখ্য সৈনিককে। সে সময় নিমর্মমভাবে খুন করা হয় রাশেদ মোশাররফসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা সৈনিককে।

আরো কিছুদিন পরে বিদ্রোহ দমনের নামে প্রহসনের বিচারে কর্ণেল তাহেরসহ অগণিত মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে নিষ্ঠুরভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতেই নির্মমভাবে খুন হন সেনাশাসক জিয়াউর রহমান। ব্রাশ ফায়ারে তার দেহ ঝাঁঝড়া করে দেয়া হয়। সে সময় মেজর জেনারেল মঞ্জুরসহ আরো অনেকেই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ’৭৫ থেকে ’৮৩ পর্যন্ত আমাদের দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যে নিজেদের মধ্যে যে নারকীয় হিংসা চালিয়েছে, যে রক্তপাত ঘটিয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং যথাযথ বিচারের কথা কেউ কখনো উচ্চারণ করেনি।

যা হোক, স্বৈরশাসক এরশাদের আমলেও আন্দোলন দমন করতে ছাত্র মিছিলে ট্রাক তুলে দিয়ে নির্মমভাবে ছাত্রদের হত্যা করা হয়। পেশাদার খুনিদের দিয়ে হত্যা করা হয় প্রতিবাদী নেতা-ছাত্র-যুবদের। গোয়েন্দাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে জাতীয় নেতাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। অনেক রক্ত আর ত্যাগের পর ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারপরও রক্তপাত ও হিংস্রতা কমেনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বার বার রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। তাদের পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে নিরীহ দেশবাসী। দিনাজপুরের ইয়সমিন তারই একটি দৃষ্টান্ত। তবে নব্বইয়ের দশকে ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৈশাচিকতাকে ম্লান করে মঞ্চে আবির্ভূত হয় জঙ্গি সন্ত্রাসীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে বোমা-গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অত্যন্ত বীভৎসভাবে মানুষ হত্যা করে নারকীয়তার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

সর্বশেষ আমরা পিলখানায় যে পৈশাচিকতা দেখলাম দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার নায়কও দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যখন পাশবিক কোনো আচরণ করে তখন আমরা নানাভাবে নিজেদের বুঝ দিই। ওরা অশিক্ষিত, দরিদ্র, ধর্মান্ধ, বিপথগামী, নষ্ট মতবাদের শিকার, আন্তর্জাতিক মৌলবাদী চক্রের ইন্ধনে না বুঝে তারা এমন অপকর্ম করছেÑ ইত্যাদি নানা কথা বলে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, মোটামুটি শিক্ষার আলো আছে, নিয়মিত যাদের প্রশিক্ষণ হয়, এ প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ দেয়া হয়, দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষা দেয়া হয়, তারা কী করে হিংস্র জানোয়ারে পরিণত হয়? এর ব্যাখ্যা কী? মনঃস্তত্বই বা কী? বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার অনেক কিছুই করছে। আরো অনেক কিছুই হয়তো করবে।

তবে অতীত বৈশিষ্ট্যের আলোকে ভবিষ্যতের জন্য আনসার-পুলিশ-বিডিআর-সেনাসহ আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের মানবিক শিক্ষাটা আরো কী করে বাড়ানো যায় সে চিন্তাটাও গভীরভাবে করা দরকার। তারা দক্ষ হোক, চৌকস হোকÑ তা আমরা অবশ্যই চাই। তারা মানবিক ভূমিকায় স্থিত থাকুকÑ সেটা আরো বেশি করে চাই। পেশাগত কারণেই হয়তো তাদের কঠিন-কঠোর হতে হয়। তাই বলে তারা কঠোর হতে হতে পশুবৎ হিংস্র হয়ে উঠবে তা কী কাম্য হতে পারে? না তাই হওয়া উচিত? বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

তা না হলে ভবিষ্যতে আরো কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে। আরেকটি কথা। অনেকেই অনবধানতা বশে পিলখানার ঘটনাটিকে বিডিআর-সেনা দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপিত করছেন। সেনাদের মধ্যেও এমন বিভ্রান্তি রয়েছে। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

পিলখানায় যা ঘটেছে তা বিডিআর নামক প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা। নানা সমস্যা ও সংকটের পাশাপাশি বিডিআরের ‘চেইন অব কমান্ড ব্যাহত’ হয়েছে। যে কারণেই হোক, বিডিআরের কিছু সদস্য অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের অফিসারদের খুন করেছে। কিন্তু স্ট্রাকচারাল কারণে সেই অফিসাররা সবাই সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত। সমস্যাটিকে সেভাবেই দেখা দরকার।

সমস্যাটি মোটেও আর্মি বনাম বিডিআর নয়। ঘটনার তদন্তও সেভাবেই হওয়া উচিত। যে ঘটনাটি ঘটে গেল এমন ট্রাজিক ঘটনা আমাদের দেশে যেন আর না ঘটে এখন সেটাই হওয়া উচিত আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার। এ জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, হিংসা হিংসার জন্ম দেয়।

কাজেই প্রতিশোধ নয়, যৌক্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সাথে সাথে আরো কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এধরনের স্পর্শকাতর বাহিনীর সদস্যরা যেন কোনো স্তরেই বড়ো বেশি বঞ্চনা ও শোষণের শিকার না হয়। তাদের ক্ষোভ যেন উন্মত্ত ক্রোধে পরিণত হওয়ার সুযোগ না পায়। তার আগেই তা প্রশমনের উদ্যোগ নিতে হবে।

আর কঠোর অনুশাসন, ঊর্ধ্বতনদের প্রভুসুলভ আচরণ পরিহার করা, অধস্তনদের ন্যায্য পাওনা যথা সময়ে পরিশোধ করা, যৌক্তিক দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া, সুখ-দুঃখের কথা শোনার ব্যবস্থা রাখা, ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে অধস্তনের বৈষম্য যথাসম্ভব কমিয়ে আনা ইত্যাদি বিষয়েও সচেতন হতে হবে। শুধু নিয়ম আর শক্তি দিয়ে সব কিছুকে বশে রাখার চেষ্টার ফল কখনো ভালো হবে না। আরেকটি কথা, ‘জাতিসংঘ বাহিনী’ নামক মূলোর ভাগ সবার জন্যই সমানভাবে রাখা দরকার। কেউ খাবে, কেউ পস্তাবে, এই নীতি কোথাও থাকা উচিত নয়। সুযোগ সবার জন্যই উন্নুক্ত ও সমান থাকতে হবে।

আমরা তো আর রামপ্রসাদ নই যে গাইবো, আমি চাই না মাগো রাজা হতে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।