আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরি নোটিশবোর্ড, আপনাদের সব কথা মানতে পারলাম না

যা তুমি আগামিকাল করতে পার, তা কখনো আজ করতে গিয়ে ভজঘট পাকাবে না...

এই লেখাটি স্টিকি হওয়া নোটিশ বোর্ডের দেয়া সাফাইয়ে কমেন্ট আকারে দেয়া যেত। কিন্তু গুরুত্ব বিচারে এটি আলাদা পোস্ট আকারে দেয়া দরকার মনে করলাম। প্রথমেই বলে নেই, আমি ব্লগের নীতিমালা পুরোটা পড়ার পক্ষপাতি নই। ব্লগে যে নীতিমালা দেয়া আছে সেটি আমার বিশ্বাস, ব্যাক্তি জীবনে আর দশটা লোকের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার বেলায় যে নীতিমালা আমি সচেতন বা অবচেতনভাবে মনে চলি, তাই যথেষ্ট হবার কথা, বা হওয়া উচিৎ। কখনো যদি দেখা যায় আমার নীতিমালার সঙ্গে ব্লগের নীতিমালার ঠোক্কর খাচ্ছে, তখন অবধারিতভাবে ধরে নিতে হবে- হয় আমি আর দশটা মানুষের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না, অথবা ব্লগের নীতিমালা আর দশটা লোকের সামাজিক আচরণের সঙ্গে মিলছে না।

এ দুটোর যে কোনো একটি ঘটনা ঘটলে আমি ব্লগ ছেড়ে দেয়ার বা আমার দিক থেকে ব্লগকে মুক্তি দেয়ার দরকার বলে মনে করি। কারণ, আরোপিত নীতিমালার লোহার খাঁচায় আর যাই হোক, সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি, সামহয়্যার ইন ব্লগ সহজ ভাষায় বাংলা ভাষী লোকজনের মত প্রকাশের জায়গা, পাশাপাশি আন্তর্জালিক বা ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরির জায়গাও বটে। সে ভার্চুয়াল সম্পর্ক নেটের আওতা ছাড়িয়ে আমাদের ব্যক্তি জীবনেও চলে আসছে। এটি একটি নতুন দিগন্তও তৈরি করছে ক্রমশ।

ব্লগ আশ্রয়ী অনেক সামাজিক আয়োজন-আন্দোলনও তৈরি হচ্ছে, সাহায্যের অনেক হাত পাওয়া যাচ্ছে, এমনকি ভ্যালেরি টেইলার ইস্যুর মতো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও রুখে দেয়ার কথা আজ বুক ফুলিয়ে বলতে পারে সামহয়্যার ইন ব্লগ। সামহ্যার ইন ব্লগের আজকের যে সফলতা সেটি আমি দেখি দুই পক্ষের লোকজনের আন্তরিকতার ফল। এক হচ্ছে সামহয়্যার ইন ব্লগের কারিগরি লোকজন এবং উদ্যোক্তা এবং দ্বিতীয় গ্রুপ হচ্ছে এর অনলাইন সদস্য ব্লগারবৃন্দ। বাংলাদেশে সচেতন অনেক লোক আছেন, তাদের অনেক মতামতও আছে দেশের জন্য, সমাজের জন্য। অথচ তারা তাদের বক্তব্য জায়গামতো বলতে পারছেন না কেবল তাদের সামহয়্যারের মতো একটি প্লাটফরম নেই বলে।

আবার সামহয়্যার-এর পর তৈরি হওয়া আরো দু-একটি ব্লগ অনেক বড় মিডিয়ার সাপোর্ট নিয়েও তেলশুন্য প্রদীপের মতো ধুকে ধুকে জ্বলছে, কারণ সামহয়্যারে যে উচ্চকণ্ঠ, সচেতন এবং স্বাধীনচেতা ব্লগার আছেন, তাদের সেটি নেই। কেবল জ্বী হুজুর মার্কা লোকজন দিয়ে একমুখী তথ্য প্রবাহ চালানো হয়তো যায়, তাতে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং সহজ ও কার্যকর ওপিনিয়ন ফ্লো তৈরি হয় না। সমস্যা হলো, সামহয়্যারের যেটি দ্বিতীয় সম্পদ (আমার আলোচনায়) অর্থাৎ উচ্চকণ্ঠ, সচেতন এবং স্বাধীনচেতা ব্লগার, সেটিই কখনো কখনো এর জন্য অস্বস্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটি হয়েছে গত কয়েক দিন যাবত। আমার এ পোস্টে গত কয়েকদিনের ঘটনায় কে দোষী, কার শাস্তি বেশি বা কম হয়েছে সেটি আলোচনা করতে চাই না।

সেটি নিয়ে আলোচনার আগে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে বলেই এই সন্ধ্যায় কি বোর্ড নিয়ে বসেছি। সেটি হচ্ছে ব্লগের মডারেশন প্রসেস। আমার চোখে গত কয়েক দিনে এবং আজকের নোটিশবোর্ডের সাফাইয়ে যে বিষয়গুলো মনে হয়েছে তা হলো- ১. ব্লগে একজন ব্যক্তির আচরণ নিয়ে বিভ্রান্তি, ভুল বোঝাবুঝি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি বা নোংরামী যাই বলুন না কেন, হয়েছে। ক্রমাগত এ নিয়ে মতামত বা অভিযোগ এসেছে। সামহয়্যার কতৃপক্ষ বলেছেন কোনো বিশেষ বাটন টিপে এটি জানাতে এবং তারা এ বিষয়ে পোস্ট চান না।

কারণ তারা এভাবেই নীতিমালা তৈরি করেছেন। তাদের চোখে "আদর্শ" বলে যে ব্লগ চরিত্র তারা চান, তার সঙ্গে এ ধরণের বিষয়ে প্রথম পাতার পোস্ট মানানসই হয় না। এখানে দুটি বিষয় আসে। অনেক ব্লগার অভিযোগ করেছেন, বিশেষ ওই বাটন টিপেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। আরেকটি কারণও এখানে থাকতে পারে, সেটি হলো ব্লগাররা বাটনের তুলনায় সরাসরি পোস্টকে অধিক কার্যকর হিসেবে দেখেছেন ও পছন্দ করছেন।

যখন প্রচলিত সিস্টেমে কাজ হয় না, বা ভালভাবে হয় না, প্রকৃতির নিয়মই হলো তখন এর বিকল্প পথ তৈরি করে নেয়া। সেটিই করেছেন ব্লগাররা। এটি দুই পয়সার ব্লগার হাসান বিপুলের থিওরি না। আজ থেকে ১৫০ বছর আগে ডারউইন সাহেব এটি বলে গেছেন। এর জন্যই বিবর্তন ঘটে।

সামহয়্যার কর্তৃপক্ষ যদি সে প্রয়োজনের প্রতি সম্মান না দেখান, ডারউইন সাহেব এবং অতিকায় তথাপি বিলুপ্ত ডাইনোসরের উদাহরণ তাদের সামনেই আছে। কাজেই নীতিমালায় আছে বলেই কেবল অনাদিকাল থেকেই বাটন টেপা নীতি চলতে থাকবে, সেটি আশা করলে সামহয়্যার কর্তৃপক্ষ ভুল করবেন। আর তারা যদি বাটনেই থাকতে চান, তবে এমন কার্যপ্রণালী ও উদাহরণ তৈরি করুন যাতে ব্লগাররা বাটনকেই সবচেয়ে ভাল অপশন হিসেবে দেখেন। তাহলে আর এমন কৈফিয়ৎ মার্কা পোস্ট আপনাদের দিতে হবে না। আরেকটি বিষয় আমার আলোচনায় আনতে চাই।

আমার ধারণা যদি ভুল না হয়, সাম্প্রতিকতম নোটিশটি আমার কাছে অনেকটা ওহী নাজিলের মতো বিষয় বলে মনে হয়েছে। যেন এইটিই সিস্টেম, এর বাইরে যাওয়া চলবে না। প্লিজ, এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। মতামতটি দ্বিপাক্ষিক হোক। ব্লগাররা একের পর এক পোস্ট দিয়ে মত প্রকাশ করলেন-প্রতিবাদ জানালেন, এর পরপরই ক্রমাগত জেনারেল বানিয়ে লোকজনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হল এবং তারপর একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হল।

এটি আজ থেকে শত বছর আগে উপনিবেশগুলোতে চলত। ২১ শতকে এ সিস্টেম চলবে না। মনে রাখবেন, সামহয়্যারইন ব্লগ যতখানি এর উদ্যোক্তার, ঠিক ততোখানিই এর সদস্য ব্লগারদের। সামহ্যয়ার জনপ্রিয় করার জন্য ব্লগারদের যে শ্রমঘণ্টা খরচ হয়েছে, সেটি হিসেব করতে গেলে মালিকানার পাল্লা ব্লগারদের দিকেই অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবুও ছোট হোক বড় হোক, কামাই করুক বা না করুক, একটি পরিবারে যেমন সব সদস্যদেরই সমান অধিকার থাকে কথা বলার, তেমনি সামহয়্যারইন পরিবারটি কিভাবে চলবে তা বলার সমান হিস্যা এর ব্লগারগন দাবী করুন আর নাই করুন, আপনারা সে সম্মানটি চাওয়ার আগেই ব্লগারদের দেবেন বলে আশা করি।

গদাই লষ্করি চালে অপেক্ষা করার পর গন জেনারেল করণ এবং এর পর দায়সারা একটি সাফাই গোছের নোটিশ দিলে ব্লগারদের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়। সে অন্যায়টি করে ফেলার পর নিজেদের অপরাধ আপনারা প্রকাশ্যে স্বীকার করুন আর নাই করুন। শুভ ব্লগিং। ডিসক্লেইমার : আমি বিনীতভাবে বলছি সামহয়্যার কর্তৃপক্ষকে আমি প্রতিপক্ষ মনে করছি না। একজন ব্লগার হিসেবে, এর অসংখ্য মালিকের একজন হিসেবে আমি আমার মত প্রকাশ করলাম আমাদের এ পরিবারের শুভ ভবিষ্যতের জন্য।

এ পোস্টে যদি আবেগের বাড়াবাড়ি প্রকাশিত হয়ে থাকে, তবে (আপনারা দাবী করার আগেই) আমি করজোড়ে দুঃখ প্রকাশ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।