আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পোলাপাইন আমলের কিছু সৃতি। (চার)

আমি একটা কান্ড জ্ঞানহীন, মূর্খ, অশিক্ষিত, আনস্মার্ট, আনকালচার্ড, অভদ্র, বোকা, বলদ, গাধা, আহাম্মক, বদের হাড্ডি।
আমার পোলাপাইন আমলের কিছু সৃতি। (এক) (দুই) (তিন) আজকের এই লিখার বিষয় আমার এবাদত বন্দেগী। ছোট বেলায় আমি খুব ভালো ভদ্র বদের হাড্ডি আছিলাম। সারাদিন বান্দরামী দুষ্টামী যাই করিনা কেন নামাজটা ঠিক মত মসজিদে গিয়ে পড়তাম।

এর একটা কারন ছিলো। যেই মসজিদে নামাজ পড়তাম সেখানে একটা মাজার ছিলো। আর মাজার থাকার কারনে অনেক এই অনেক কিছু মানত করতো। আছরের সময় মাগরিবের সময় প্রায় সময় মিলাদ হইতো। মিলাদের শেষে তবারক দিতো জিলাপি বাতাশা কোন কোন সময় বিস্কুটও দিতো।

তাই আমি আছর আর মাগরিবের নামাজের নিয়মিত মুছল্লী হয়ে গেলাম ফজরের সময় ঘুম থাকি.... জোহরের টাইমে স্কুলে...... আছরের সময়টা খেলার সময় তাই এই সময় মুছল্লী হওয়ায় দোষ নাই..... আরো একটা কাহিনী ছিলো আছরের নামাজ পরার জন্য ঘড় থেকে একটু তারাতারি বের হওয়া যাইতো। একটু সময় নিয়ে খেলাধুলা করা যাইতো আবার মাগরিবের নামাজ পরে বাসায় ফিরতাম। এশার নামাজে তোবারক পাওয়া যাইতো না তাই ঐ সময় পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম। একটা জিনিষ আমার পরিস্কার মনে আছে ছোট বেলায় যখন আমি নামাজের কোন সুরা ক্যারাত জানতাম না তখন কানটা খারা করে রাখে শুনতাম আমার পাসের জন কি বলতেছে বা কি পড়তেছে। সবাইতো মনে মনে পড়ে আমি আর শুনতাম না।

তখন একটা ধারনা ছিলো আমার হুজুর জোরে জোরে পড়ে তার মানে হুজুর সব জানে আর বাকী যারা মনে মনে পড়ে তারা সবাই ফাঁকিবাজ। আমার মত ওরাও কিছু জানেনা তাই চুপি চুপি মনে মনে পড়ে। জারা একটু জোরে জোরে পড়ে আমি তাদের পাসে গিয়ে দাড়াইতাম। একটা শব্দ শুনলে ঐটা বার বার পড়তাম। হয়তো একটু শুনলাম তিন আমিও মনে মনে পড়তাম তিন, তিন, তিন আর একটা শব্দ না শোনা পর্যন্ত আমি ঐটাই পড়তে থাকতাম।

আবার হয়তো শুনলাম গোস্ত আমি ও মনে মনে পড়া শুরু করে দিলাম গোস্ত, গোস্ত, গোস্ত আবার যদি শুনতাম সুবাহ্ আমিও পড়া শুরু করে দিতাম সুবাহ্, সুবাহ্ , সুবাহ্ এই রকম ছিলো আমার প্রথম জীবনের নামাজ পড়া। খুব কষ্ট পাইতাম যখন সামনের কাতারে দাড়াইতে চাইতাম কিন্তু ধরে ছোট বলে পেছনে পাঠাইয়া দিত। বড় হয়ে কাবা ঘড়ের সামনে নামাজ পরছি, মসজিদে নাবাবীতে নামাজ পরছি কিন্তু এমনটা দেখি নাই। ছোট কাউরে পেছনে পাঠাইয়া দিতে । এবার আসি আমার মানত নিয়া।

স্কুল ছুটি যখন থাকতো প্রায় দিনই আমি সকালে খেলতে বের হইলে দুপুরেও বাসায় আসতাম না। ফুফাত ভাইয়ের সাথে খেলতাম ফুফুর বাসায় দুপুরে খাইয়া আবার খেলতাম সন্ধায় বাসায় ফিরার কথা মনে পরলেই সারছে আমরা থাকতাম ৩ তলায় প্রতি তলায় উঠার জন্য ২টা করে সিড়ি। দুইতালা থেকে তিনতালায় উঠার মাঝের সিড়িতে পষ্চিম দিকে ফিরা হাত তুলে মোনাজাত ধরতাম। আল্লাহ্ আজকে যেন মাইর না খাই আজকের জন্য আমারে মাফ করে দাও আজকে যদি মাইর না খাই তাইলে আটআনা পয়সা ফকিররে দিমু আটআনা পয়সা মাজারে দিমু। কোন কোন দিন এই দোয়াতে কাজ হইতো।

কোন কোন দিন আম্মুর হাতে ২-৩ ডোস মাইর হজম করতে হইতো। যেইদিন মাইর খাইতাম ঐদিন বাথরুমে গিয়া আবার আল্লাহ্ রে কইতাম কইছিনা ১টাকা দিমু তার পরে ও আজকে মাইর খাইলাম কেন। বাথরুমে হাত মুখ ধুইতাম আর আল্লাহ্ রে নালিস দিতাম। আম্মুর কাছে অনেক মাইর খাইছি জীবেন। আব্বুর থেকে কখনো মাইর খাই নাই আমার আব্বু শ্রেষ্ট আব্বু।

আম্মুর হাতে মাইর খাওয়ার পরে আব্বু হাত মুখ ধুইয়া দিতো। আর বুঝাইতো তুমি এই কাজটা করছো এটাকি ঠিক ছিলো ?? সোজা উত্তর না। আব্বু বুঝাইতো তাইলে এই রকম করো কেন ? এমন আর না করলে কি তোমার আজকের এই মাইর গুলো খাওয়া লাগতো? কোন মা বাবাই তার ছেলে মেয়েকে ইচ্ছে করে মারে না তাদের ভালোর জন্য মারে। তোমাকে আজকে শাসন না করলে তুমি কালকে আবার এই কাজটাই করবা যেটা তুমি একটু আগে বলছো এটা ভালো কাজ না। তোমরা খারাপ হয়ে যাও এটাকি আমরা চাই? আমারা চাই তোমরা মানুষের মত মানুষ হও।

দুধ গরম করে বিস্কুট দিয়ে খাওয়াই দিতেন। এর পরে পড়তে বসাইতেন। আমার আব্বু কখনোই আমাদের ভাই বোনদের কাউরে তুই করে ডাকে নাই, আমি শুনি নাই। সব সময় তুমি করে বলতো। আর আব্বু যখন বুঝাইয়া বলতেন তখন এমনিতেই চোখে পানি চলে আসতো।

চড় থাপ্পোরের দরকার পরতোনা। ছবিগুলো গুগল.কম থেকে খুজে নেয়া।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।