আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাবধানে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, ভাল থাকুন

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে কথা। আত্মীয়তাসূত্রে হঠাৎ একজন জানালেন। তার পরিচিত একজনকে কিছু লোক ফোনে হুমকি দিচ্ছে। টাকা চায়।

অনেক টাকা। পঞ্চাশ হাজার। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসার। ফোন তুললেই হুমকি আসে। বলে, আমরা কালা জাহাঙ্গীরের লোক।

লাশ ফেলে দেব। টাকা দে। বৃদ্ধা খুব সাহসী। পাল্টা বকাবকি করলেন। বৃদ্ধ নিষেধ করেন।

এদের সঙ্গে পারবা না। চুপ করো। বৃদ্ধা বললেন, সন্ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াবো নাকি, তাই বলে? বৃদ্ধার চাপেই একরকম থানায় গেলেন দুজন। গিয়ে দেখেন বিশাল লাইন পড়ে গেছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অপেক্ষা করেন।

আর এর ওর সমস্যা জানতে চেষ্টা করেন। যা শোনা যায়, তাতে দুজনেই হতবাক। থানায় যারা এসেছে, তারা সবাই তাদেরই মতো একই সমস্যার ভুক্তভোগী। সবাইকেই হুমকি দিয়েছে কালা জাহাঙ্গীরের লোকেরা। ওইরাতেই আবার ফোন আসে।

থানায় কেন গিয়েছিল জানতে চায়। নিরুপায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রাতে এক তরুণ আত্মীয়কে ফোন করেন। অনুরোধ, যেন তাদের বাসে তুলে দেয়া হয়। ফোন নাম্বার বদলানোর ব্যবস্থা করা হয়। কোনো খবরের কাগজে এ ধরনের কোনো সংবাদ পড়েছি বলে মনে পড়ে না।

কেন পড়িনি? ভাবছি। নির্বাচন হলো। নতুন সরকার এলো। অনেক চমক দেখা গেল। কিন্তু নগরে মানুষের সাধারণ জীবন কেমন? হঠাৎ হঠাৎ মানুষ খুন হওয়ার, অস্ত্র আসার, টুকরো টুকরো হওয়ার খবর আসছে।

না এ খবরগুলো আর চোখের আড়ালে থাকছে না। ছাপা হচ্ছে প্রতিদিনই। অনেক খবরই আসছে না। কিন্তু যা আসছে তাতেই বেশ বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকছে। শুধু খবরের কাগজ পড়ে পরিস্থিতি বুঝলে তো হয় না।

মানুষজনের অভিজ্ঞতা শুনছি। পাশের বাসার ভদ্রলোক সেদিন বললেন, তার ছেলের বন্ধু স্কুলে গিয়েছিল। নতুন মোবাইল কিনেছিল। বিকালে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে। মোবাইল নিয়েছে।

কিন্তু মেরে ছেলেটার এমন হাল করেছে যে, হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। এক কলিগ বাসা ফেরার পথে ছিনতাই কারীর শিকার হলেন। তারা নাকি কোন সূত্রে খবর পেয়েছে তার কাছে ২০ লাখ টাকা আছে। তার কাছ থেকে সব টাকা মোবাইল নেয়ার পর সেই না পাওয়া ২০ লাখ টাকার জন্য শুরু করে অত্যাচার। তারই বেল্ট খুলে তার গলায় পেঁচায়।

মারধর করে শেষে চোখে মলম লাগিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। আরেক কলিগ একেবারে আলো আলো সন্ধ্যা বেলা শিকার হলেন। প্রতিদিন শুনছি। প্রতিদিন। খুব কাছের একজন।

খুব দূরের একজন। প্রতিদিনই শিকার হচ্ছেন কেউ না কেউ। এক বন্ধু বললেন, ল্যাপটপের ব্যাগ হাতে নিয়ে আসতে সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ টান পড়ছে দিনের বেলাতেই। সিএনজি, ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে কেউ ঘরে ফেরা মানে একটা অনিরাপদ জার্নি।

সেদিন এক বন্ধু রাতে সিএনজি নেয়ার পর, বার বার ফোন করছিলাম। সব ঠিকঠাক আছে কি না জানতে চাইছিলাম। চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, মানুষের মনে আতঙ্ক নামে একটা বস্তু অতিদ্রুত বাসা বাঁধছে। মানুষ নিরাপদ বোধ করছে না। পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

মোড়ে মোড়ে বখাটেরা সংগঠিত হচ্ছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে কিংবা তার আগের বিএনপি আমলেও কখনও সন্ধ্যা বেলা বা গভীর রাতেও বাড়ি ফেরার আগে সিএনজি নিতে দ্বিধা করেছি কি না মনে পড়ে না। সম্প্রতি দ্বিধা হচ্ছে। অফিস থেকে বেরুনোর পর, সিএনজি নিয়ে বাসায় ফেরার কথা মনে হলেই ছিনতাইকারীর স্পটগুলোর কথাই মনে হয়। প্রতিদিন তো আর ভিড়ের বাসে ওঠা সম্ভব হয় না।

কোনো দিন নিশ্চয়ই ফিরতে হবে। একা। চোখে মলম লাগানো অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। ভাবতে গেলেই গা শিউরে ওঠে। খুব কষ্ট করে হলেও ভিড়ের বাসে ঘরে ফিরি।

দ্রুত ফেরার চেষ্টা করি। বুঝতে পারি আমরা একা একা যে অমোচনীয় অনুভূতির শিকার হচ্ছি তার নাম আতঙ্ক। এর থেকে সহসা রেহাই পাওয়া যাবে বলেও মনে হচ্ছে না। রাস্তায় পুলিশ-রাবের টহল চোখে পড়ে না। খবরের কাগজে পড়লাম, পুলিশ নাকি বদলী আতঙ্কে ভুগছে।

থানায় গিয়ে খুব বেশি সাড়া মিলছে না। শুনছি, পুলিশ ভয়ে আছে। এইসব নিত্যদিনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে শাসকদলের যোগ থাকতে পারে। শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের অধীনে এরা কাজ চালাতে পারে। হঠাৎই সন্ত্রাসীরা দল বদল করে বদলানো পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।

কিন্তু এই উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তো এখন আর যাপন করি না। কিন্তু যাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তারা বলে, চাঁদাবাজি গুণ্ডামি আর পাণ্ডামির মচ্ছব চলছে। হুমকি-ধামকি লেগে আছে। ছাত্রদলের গুণ্ডা পাণ্ডারা বদবদল করে খালাস। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা কী করবে? তারা কোন দলে যাবে? সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় এক শিক্ষক ফোন দিলেন।

বললেন, আমার এক ছাত্র খুব বিপদে পড়েছে। তুমি কিছু করতে পারো? আমি বললাম, স্যার কিছু করতে না পারি, অন্তত শুনে রাখি। বললেন তার এক ছাত্রকে বাড়ি ফিরতে নিষেধ করেছে তার পরিবার। বলেছে, কখনোই যেন ফিরে না আসে। কারণ, তার সহপাঠি একজনের জীবন বাঁচাতে তার পরিবারকে ৫০,০০০ টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।

মুক্তিপণ নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। মুক্তিপণ না দিলে নাকি তাকে মেরে ফেলতো। ভুল ভাববেন না। এরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।

এরাই হয়তো ছাপ্পর মেরে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। কিন্তু মানুষের সামান্য নিরাপত্তা দিতে পারছে না তাদের সরকার। অনেক বড় বড় কথা শুনছি। শুধু শুনছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.