আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১২ বছরে ১০০ কোটি উৎপাদন (জনসংখ্যা- ২)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

দুই হাজার বছর আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ কোটি। এই জনসংখ্যা বেড়ে ৫০ কোটিতে পৌছতে সময় লাগে প্রায় ১৫০০ বছর। ১৯০০ সালের আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল বছরে প্রায় ০.০০২ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রতি বছর পৃথিবীর জনসংখ্যা ১.৩ শতাংশ করে বাড়ছে। ১৯৮৭ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিলো ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি)।

তার মাত্র ১২ বছর পরে ১৯৯৯ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ বিলিয়ন। অর্থাৎ মাত্র ১২ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি বেড়ে গেছে। পৃথিবীর জনসংখ্যার বৃদ্ধির এ হার কখনোই সমান ছিল না। পরিবেশের প্রভাব, খাদ্য সরবরাহ, রোগ এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।

পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৬.৫ বিলিয়নের বেশী। ১৭ শতকের পর থেকে মানুষের বিজ্ঞান, কৃষি, শিল্প এবং সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় মানুষের শ্রম কমিয়ে দেয় পশু এবং পরে বিভিন্ন ধরনের উন্নত যন্ত্র। ১৯৫০-এর পর থেকে মানুষের সভ্যতায় যুক্ত হয় নতুন এক অধ্যায়। এ সময় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে রোগ ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

এমনকি অনুন্নত দেশগুলোও চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করে। বিভিন্ন রোগের টিকার বহুল প্রসার ঘটে এ সময়। কৃষি ক্ষেত্রে আসে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তি, সহজলভ্য পানি সেচ ব্যবস্থা এবং কীটনাশক। ফলে খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। অনুন্নত দেশগুলোতে ১৯৫০-এ গড় আয়ু ছিল ৩৫-৪০ বছর কিন্তু ২০০০ সালে তা বেড়ে প্রায় ৬৬ বছর হয়েছে।

এসব কারণে বহু দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ পর্যন্ত এসে দাড়িয়েছে। এ হারে বাড়ার ফলে মাত্র ২৩ বছরে বহু দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ার হার বেশি। ২০০০ সালে ১.২ বিলিয়ন মানুষ উন্নত দেশগুলোতে বাস করলেও ৪.৯ বিলিয়ন মানুষ অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করে। এশিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক লোক বাস করে।

চীন ও ভারতের জনসংখ্যা এর মধ্যে অন্যতম। ইউরোপ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ। উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মিলে ১৪ শতাংশ, আফ্রিকা ১৩ শতাংশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো পৃথিবীর জনসংখ্যার ১ শতাংশ ধারণ করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা। বর্তমানে আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।

২০২৫ সালে আফ্রিকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার জনসংখ্যা প্রায় সমান থাকবে। এ সময় পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের জনসংখ্যা সামান্য কমবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২০ শতাংশ লোক উন্নত দেশগুলোতে বাস করে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ হার কমে ১৫ শতাংশে দাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বর্তমানে নতুন জন্ম নেয়া প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে নয়জনই অনুন্নত দেশগুলোর। বহু দেশের অর্থনীতি এখন কৃষি প্রধান থেকে শিল্প প্রধান অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ অঞ্চলেই বড় আকারে অভিবাসন হচ্ছে। গ্রামের মানুষ শহরে চলে আসছে, অনেক গ্রাম শহরে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রামের চেয়ে নগরের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

১৯৫০-এ পৃথিবীর ২৯ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করতো। তবে ১৯৯০ সালে ৪৩ শতাংশ এবং বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরে বাস করে বলে অনুমান করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এসব শহরে বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস করতে হচ্ছে বস্তি এলাকায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে এ ধরনের শহরগুলো মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফলে জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।

বয়স্ক জনসংখ্যা অনেক দেশের জন্যই সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরো বাড়বে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, ১৯৫০-এ উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইওরোপ এবং এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোক ছিল প্রায় ১২ শতাংশ কিন্তু ২০৫০ সালে এ সংখ্যা হবে ৩৩ শতাংশ। (ছবি: ইন্টারনেট)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।