আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাজ চাই, কাজ চাই (জনসংখ্যা- ১)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
বাংলাদেশের শত শত তরুণ কাজের সন্ধানে নৌকায় করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো। কিন্তু পৌছাতে পারে নাই। থাই নৌবাহিনী তাদের ধরে নৌকার ইঞ্জিন খুলে রেখে মাঝ সমুদ্রে হাত-পা বাধা অবস্থায় পানি/খাবার ছাড়াই ছেড়ে দেয়। মারা যায় এদের মধ্যে বহু তাজা প্রাণ। বিনা পরিশ্রমে নয়, সবচেয়ে কঠিনতম পরিশ্রমের কাজ করেই টাকা উপার্জন করার জন্য তারা রওনা দিয়েছিলো।

ছবিতে দেখুন, টগবগে এ তরুণদের সাথে কেমন আচরণ করা হচ্ছে। যাদের কোনো আশাই আমরা পূরণ করতে পারি নাই। শুধু পেরেছি মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে..... -থাই নৌবাহিনীর ছবি/ বিবিসি। কয়দিন ধরে এ খবরে মনটা খারাপ। ভাবছিলাম, আমাদের দেশের তরুণদের কেন এ দুরবস্থা? কেন তাদের জীবন বাজি রেখে, সবকিছু তুচ্ছ করে সমুদ্র পাড়ি দেয়া লাগছে? দেশে মানুষের কাজের সুযোগ এতো কম হলো কেন? বেতনই বা এতো কম কেন? সবগুলো প্রশ্নের জবাবই আঙ্গুল নির্দেশ করে একটা মাত্র দিকের প্রতি।

আমাদের হাতেই যে সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি.... ভূমি অনুপাতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম নয়। ফলে এ বিপুল জনসংখ্যার চাপে দেশে ম্যালথাসের তত্ত্বের বাস্তব প্রমাণ দেখা যাচ্ছে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, মানুষ সৃষ্ট নানা কারণ ইত্যাদি)। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৮ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কিলোমিটারপ্রতি বাংলাদেশে বেশি মানুষ বাস করে।

বাংলাদেশ ছাড়া জনসংখ্যার এতো ঘনত্ব শুধু সিংগাপুর এবং এ ধরনের কিছু নগর রাষ্ট্রে দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নগর নেই। এখনো নগরের তুলনায় গ্রামে বেশি মানুষ বাস করে। এ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ।

এ বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে না পারলে বাংলাদেশে খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা আরো বাড়তেই থাকবে। পৃথিবীর সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে এলডিসি বা লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি বলা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে কম উন্নত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৫ কোটিরও বেশি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের অন্যতম।

যদিও তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। জনসংখ্যার এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়। বিপুল জনসংখ্যার ভারে পৃথিবীর অবস্থা দিন দিন কাহিল হয়ে পড়ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের পার্থক্য দেখা যায়। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত জনসংখ্যা বাড়ছে না এবং কিছু উন্নত দেশের জনসংখ্যা কমছে।

২০০০ সালের পর থেকে পশ্চিম ইওরোপের জনসংখ্যা কমছে। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর হিসাব মতে, সে দেশের জনসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে বাড়ছে না। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যার সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাগটা অবশ্য আফ্রিকার। আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশী। ১৯৯০-এ আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ এবং ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ হার ২ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অর্থাৎ আফ্রিকার জনসংখ্যা ২০২৫ সালে তিন গুণ হয়ে যাবে। ২০২৫ পরবর্তী ৩৫ বছরের মধ্যে আফ্রিকার জনসংখ্যা আরো ডবল বৃদ্ধি পাবে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জনসংখ্যা নীতি তৈরি করেছে। গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে যখন বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত জনসংখ্যা বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়ে উঠছে সে সময় আমেরিকা সরকার অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব বিষয়ে গবেষণা শুরু করে। ১৯৭২-এ ইউএসএ’র নীতিনির্ধারকরা প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে প্রদত্ত রিপোর্টে জনসংখ্যার ০ শতাংশ বৃদ্ধিকে ইউএসএর লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করার সুপারিশ করে।

কিন্তু তিনি এ সিদ্ধান্ত পালন করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতা, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং সন্তান লালন-পালন করা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে দেশটির জনসংখ্যা তেমন বাড়েনি। ইউরোপের দেশগুলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য গত শতাব্দীতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে। বিশেষ করে বৃটেন, সুইডেন এবং রাশিয়া এ লক্ষ্যে দম্পতিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। ইটালির ফ্যাসিস্ট সরকার ১৯২০-এ এবং জার্মানির নাৎসি সরকার ১৯৩০-এ জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

পরে ইউরোপিয়ান সরকারগুলো বিদেশি শ্রমিক দিয়ে জনশক্তির চাহিদা পূরণ করার কৌশল অবলম্বন করে। পৃথিবীর প্রথম উন্নত দেশ হিসেবে জাপান জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। পরিবার ছোট রাখার জন্য ১৯৪৮-এ জাপান সরকার জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি চালু করে এবং গর্ভপাত বৈধ করে। ১৯৫২-এ ভারত সরকার অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সরকারিভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। চীন অতীতে জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক চেষ্টা করে এবং সফল হয় কিন্তু বর্তমানে এ দেশটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর কর্মসূচি চালাচ্ছে।

ফলে বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। [চলবে]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।