আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমপিউটার চালান জিহ্বা দিয়ে!

লাইভ ওয়েব টিভি এর ব্লগ

জিহ্বা দিয়ে কমপিউটারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ন্ত্রণের কৌশল বের করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই কথা বলা, খাদ্যের স্বাদ নেয়া, খাওয়া এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে জিহাদ ছাড়াও বহুবিধ কাজ করে চলেছে এই জিহ্বা। এখন তার নতুন দায়িত্ব হচ্ছে কমপিউটারের কন্ট্রোল প্যাডে পরিণত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া টেকের গবেষকরা মনে করেন, একটি চুম্বকীয় জিহ্বা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী মানুষের মুখকে একটি ভার্চুয়াল কমপিউটার, দাঁতকে কী-বোর্ড ও জিহ্বাকে এগুলো পরিচালনা করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করাতে সক্ষম হবে। এই বিষয়ে লিখছেন সুমন ইসলাম।

গবেষক দলের প্রধান জর্জিয়া টেকের সহকারী অধ্যাপক মেস্যাম গোভানলু বলেছেন, এই পদ্ধতিতে কেবল জিহ্বা নড়াচড়ার মাধ্যমেই আশপাশের সব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এই পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘টাং ড্রাইভ সিস্টেম’ । এতে জিহ্বাটি পরিণত হবে এক ধরনের জয়স্টিকে। ফলে প্রতিবন্ধী বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষরা তাদের হুইল চেয়ার, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও কমপিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ চলছে এবং খুব সহসাই এমন প্রযুক্তি সহজলভ্য হচ্ছে না সেটা স্পষ্ট।

কেউ কেউ একে হাস্যকর, অদ্ভুত চিন্তা বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সিস্টেমটির প্রাথমিক পরীক্ষায় যথেষ্ট সাফল্য এসেছে এবং এর ফলে উৎসাহিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই মুখের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এ ব্যাপারে এখনো কোনো সফলতা অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে গবেষণা এগিয়েছে বহুদূর।

পক্ষাঘাতগ্রস্তদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা জিহ্বাকে অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার বলে মনে করেন। তাই তারা এই গবেষণা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। আটলান্টায় শেফার্ড সেন্টারের গবেষণা ও প্রযুক্তি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক জোনস বলেছেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে জিহ্বা অসংখ্য সুইচ এবং অপশন হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি পরিচালনা করা সহজ এবং এ থেকে কেউ কেউ পুরোপুরি একটি ভিন্ন ভাষা করায়ত্ত করতে সক্ষম হবে। জর্জিয়া টেকের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জিহ্বাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর মাধ্যম।

কারণ জিহ্বাকে বিভিন্নভাবে পরিচালনা করা যায়। ঘাড় থেকে নিচের দিক যাদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা অবশ জিহ্বা তাদের জন্য হতে পারে একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার। প্রতিবন্ধী এবং পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি পদ্ধতি ইতোমধ্যেই উদ্ভাবিত হয়েছে, যা তেমন কার্যকর নয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যয়বহুল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সিপ অ্যান্ড পাস’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পক্ষাঘাতগ্রস্তরা বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা একটি টিউবের মাধ্যমে শ্বাস টানা ও ছাড়ার মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে পারে।

এটি জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলোর একটি। কিন্তু এর সমস্যা হচ্ছে, এতে কেবল চারটি ভিন্ন ভিন্ন কমান্ড বা নির্দেশনা দেয়া যায়। ঘাড়ের মাংসপেশি ও মাথা নড়াচড়ার মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়ার পদ্ধতিও ব্যাপকভাবে চালু আছে। কিন্তু এর মাধ্যমে কমপিউটারের মতো ছোট ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র পরিচালনা হতাশাজনক। নতুন উদ্ভাবনার মধ্যে চোখ নেড়ে নির্দেশনা দেয়ার পদ্ধতিটি সম্ভাবনাময়।

তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ধীরগতিসম্পন্ন। তাছাড়া অনেক সময় মিশ্র সংকেতের কারণে কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে জিহ্বা অনেক বেশি নমনীয়, স্পর্শকাতর এবং ক্লান্তিহীন বিকল্প। মুখের অন্যান্য অংশ এবং পুরো শরীর দুর্ঘটনায় অবশ হয়ে গেলেও জিহ্বা কার্যকর থাকে। কারণ জিহ্বা মেরুদণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়।

এটি যুক্ত মস্তিষ্কের সঙ্গে। বিজ্ঞানীরা জিহ্বাকে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের উপযুক্ত করার কথা ভাবছেন দীর্ঘদিন ধরেই। ১৯৬০-এর দশকে জিহ্বার টিস্যুতে ইলেকট্রোড সংযুক্ত করে এটিকে একটি প্রিমিটিভ লেন্সে পরিণত করার উপায় নিয়ে গবেষণা করা হয়। অতি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, জিহ্বার টিস্যু বা কোষে স্থাপিত ইলেকট্রোড দিয়ে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করে কোনো বস্তুর আকৃতি বোঝা সম্ভব, যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বস্তুর চিত্র বুঝতে সহায়ক। ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলটোভিত্তিক কোম্পানি নিউ অ্যাবিলিটিস সিস্টেম ইনকর্পোরেট ইতোমধ্যেই ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, বাটনের একটি কী-বোর্ড তৈরি করেছে যা স্থাপন করা হয় মুখের তালুতে।

গোভানলুর নেতৃত্বাধীন জর্জিয়া টেকের গবেষণা দল বাস্তব কী-বোর্ডের পরিবর্তে একটি ভার্চুয়াল কী-বোর্ড তৈরির কাজ করছে। তারা জিহ্বার ডগায় তিন মিলিমিটার প্রশস্ত একটি চুম্বক বসানোর কথা ভাবছে। এর ফলে জিহ্বার নড়াচড়ার সাথে চুম্বকের নড়াচড়া গালের ভেতরে দুই পাশে বসানো দুটো সেন্সরে ধরা পড়বে এবং সেখান থেকে একটি হেডগিয়ারে সংযুক্ত রিসিভারে ডাটা চলে যাবে। সেখানে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটা প্রক্রিয়াকরণ হবে এবং নির্দেশনা দেবে, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে কমপিউটার, হুইল চেয়ারসহ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। সিস্টেমটি যখন পুরোপুরি কার্যকর হবে তখন ব্যবহারকারীরা ৬টি নির্দেশনা দিতে পারবে।

এগুলো হলো- বাম, ডান, সামনে, পেছনে, সিঙ্গেল ক্লিক এবং ডবল ক্লিক। জর্জিয়া টেকের একটি ল্যাবরেটরিতে সম্প্রতি একজন গ্র্যাজুয়েট ছাত্র বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেন। জিহ্বায় যে চুম্বক ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে ওই ছাত্র একটি হুইল চেয়ার পরিচালনা করতে সক্ষম হন। গোভানলু আশা করছেন, জিহ্বা নড়াচড়ার মাধ্যমে একসময় তারা কয়েক ডজন নির্দেশ দেয়ার ব্যবস্থা যুক্ত করতে সক্ষম হবেন। তখন কোনো পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি জিহ্বা বাঁয়ে-ওপরে নিয়ে বাতি জ্বালানো-নেভানো বা জিহ্বা ডানে-নিচে নিয়ে টিভি চালানো বা বন্ধ করার কাজটি করতে পারবে।

জর্জিয়া টেক জিহ্বাকেন্দ্রিক পদ্ধতির যে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে তা ইতোমধ্যেই অনেককে আগ্রহী করে তুলেছে। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই প্রকল্পে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং ক্রিস্টোফার অ্যান্ড ডানা রিভ ফাউন্ডেশন দেড় লাখ ডলার মঞ্জুরি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কাজটি এত সহজ নয়। এটিকে সফল করতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বিজ্ঞানীদের। প্রথমেই পরিবর্তন ঘটাতে হবে ঢাউস আকারের হেডগিয়ারের।

উন্নয়ন ঘটাতে হবে সফটওয়্যারের, চুম্বকের আকারও ছোট করতে হবে। ওয়্যারলেস ব্যাটারি চার্জ ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি। সর্বোপরি দামের দিকেও তাদের লক্ষ রাখতে হবে। কারণ ব্যয়বহুল হলে এটি বাণিজ্যিকভাবে টিকে থাকতে সক্ষম হবে না। টাং ড্রাইভ সিস্টেমটি যখন আলোর মুখ দেখবে তখন কেবল হুইল চেয়ার নয়, টিভি, কমপিউটারসহ সব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে জিহ্বা দিয়ে।

কজ ওয়েব। মন্তব্য লিখতে গ্রুপে জয়েন করুনঃ Click This Link লেখার সূত্রঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.