আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাত সতের ছড়া/আবু সালেহ /রচনাকাল ঃ ০৪-১২-২০০৫

বাংলাদেশের মানুষ এখনও তার সম্পূর্ণ অধিকার পাইনি। এই সংগ্রাম যতদিন চলবে ততদিন ছড়ার সংগ্রাম চলবে

৩৭টি ছড়া রচনাকাল ঃ ০৪-১২-২০০৫ সাত সতেরো ছড়া আবু সালেহ ১. খাল বিল সব শুকিয়ে গেছে কেউ ফেলেনা জাল যেন মরুর দেশ সেজেছে ঠিক এমনই হাল। পদ্মা নদী বালুচরে ভরেছে ঐ করূন চোখে কিভাবে আর আগের মত মজার ছড়া লেখি। ২. পৃথিবী নাকি ছোট হয়ে গেছে সে কারণে হায় যে যখনি ইচেছ করে হেথায় সেথায় যায়। যে ঘটনা ঘটছে কোথাও ঠিক তখনি জানে পৃথিবীটি ছোট হওয়ায় বদলেছে তার মানে।

৩. কৃষক এখন নেই জমিতে ছেলেরা রয় দুবাই এক সংগেই প্লেনে চ’ড়ে চলে গেছে দু’ভাই মা ও বাবা তাতে খুশী পাবে টাকা কড়ি সাত-পুরুষের জমাজমি কি আর এখন করি। ৪. বদলে গেছে সকল কিছু তাই মেনেছি সব এ’নিয়ে কেউ করে নাতো তেমন কলরব। যখন যেমন তখন তেমন এ ভাবেই যে চলে বাবা দাদার ভাষা ছেড়ে অন্য কথা বলে। বাবা ও মামা এসব নিয়ে তেমন কিছু কয়না তারা বলেন, এ না হ’লে কেউতো বড় হয় না। ৫. উন্নত এই পৃথিবীকে কে চায় নিচেয় নামুক কেউ চাবেনা আবার তার এই পাতালে থামুক।

সে কারণে সকল কিছুই মেনে নেয়া ভালো যদিও রয় চোখের পরে অমাবশ্যার কালো। ৬. গ্রামাঞ্চলে হাট বসে আর শহরে যে মার্কেট হাট নিয়েছে সরকার ঐ মার্কেট নেয় শেঠ। একই দেশে দুই নিয়মে আইন কানুন চলে এই কথাটি উচচস্বরে কে আর তেমন বলে। ৭. ঘরে ঘরে ইস্কুল আজ ঘরে ঘরে কলেজ উদ্দেশ্যটা বিশাল বড় বাড়ে যাতে নলেজ। শিতি লোক দেশের কাজে বিলিয়ে দেয় মন দিন ও রাতে চায় যে তারা দেশের উন্নয়ন।

সেই ল কতখানি ঐ হ’চেছ পূরণ তা’ আসল বিষয় কেউতো আজও কিছুই জানেনা। ৮. আব্বা এখন ‘ড্যাড’ হয়েছে মা হয়েছে ‘মাম্’ ব্যাপার শুনে শীত সকালে ঝরতে থাকে ঘাম। বাংলা ভাষার দরদীরাই এ’সব চালু করে শুধু শুধুই বরকতেরা গুলীর ঘায়ে মরে। ৯. খুব আধুনিক হওয়াটাই কি ভালো কিছু হলো নকল মানুষ সেজে এখন সবাই কেমন ম’লো কেউ কারোরই সয়না মোটে ভাগ হয়েছে জাতি এ নিয়ে হয় ঝগড়া ঝাঁটি শুনছি দিবারাতি। ১০. ঘুঘুর ডাকে ঘুম ভাঙতো সে ডাক গেছে হারিয়ে বন-জংগল সাফ ক’রে যে দিয়েছে সব তাড়িয়ে।

ডুমুর গাছের পাতার বাসায় টুনটুনি আর নেই তবু যেন কারা বলে অসুবিধা নেই ! ১১. মুরুব্বীকে সালাম দেয়া আজ রেওয়াজের বাইরে আখলাক ও আহকাম যে দেশের কোথাও নাই রে। স্বাধীনতা সাজিয়ে তোলে ‘মূর্খতাকে’ দিয়ে দেখে শুনে চুপ করে রই ভাবিনা এ’নিয়ে। ১২. সবাই বলে মুক্তিযুদ্ধের বীর কাহিনীর কথা বর্তমানে ব’সে ঝিমাই বাড়ে বিষন্নতা। যে কারণে মুক্তিযু্েদ্ধ জীবন হলো দান তারা হারায় স্বপ্নগুলো গায় রাজাকার গান। ১৩. মুক্তিযুদ্ধের কথা যারা বলে তাদের জীবন কোন মতে নিভু নিভু জ্বলে ােভের কথা চাপা প’ড়ে রয় নিভলো যারা স্মরণীয় নয় এ’সব কথা যাবে নাতো বলা রাজাকারের খুব যে বড় গলা।

১৪. টুনটুনিদের বাসাটা খুব ছোটটো আশাটা গুঁড়িয়ে দিল কে নয়তো মানুষ সে। ১৫. কানটা ধ’রে কথা বলি অপরে যে শোনে একইভাবে সেওতো ধরে নতুন কেনা ফোনে। মোবাইলের চলন হওয়ায় কান ধরাটাই বেশী বর্তমানে এটাও হলো সংস্কৃতি, দেশী। ১৬. পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে টেলিভিশন ছাড়ে ব্রেক নৃত্য দেখে দেখে বই যে ছুঁড়ে মারে নাচের সাথে নিজেও নাচে বইটা পড়ে থাকে আধুনিকের ছোবলে তার জীবন ঢেকে রাখে। ১৭. ঢাকা যাবে এমন কি আর পথ আর লাগেনা টানা কোনো রথ বাস, ট্যাক্সি, উড়োজাহাজ, মটর গাড়ী আছে চলাচলে সমস্য আর নেই যে কারো কাছে।

ভাড়ার টাকা থাকলেই হয় পৌঁছা যাবে ঠিক তবে ঢাকায় যখন তখন হারাতে হয় দিক। পকেট মারার দল রয়েছে প্রতারকও মেলা খুব সাবধান চলা ফেরায় করোনা কেউ হেলা। ১৮. শীতের সকাল ঠান্ডা খাওনা হাঁসের আন্ডা সিদ্ধ কিংবা ভাঁজা শরীর হবে তাজা। ১৯. কোন পড়াতে দামী হওয়া যায় সেই উত্তর শুনতে সবাই চায় কেউ বলছে ক¤িপউটারে গেলে সারা জীবন সুখই কেবল পেলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলে ‘শাহী’ভাবে জীবন যাবে চ’লে কেউ বললো হ’লে পরে কেউ কবি স্বপ্নগুলো ভাসবে চোখে সবি। ২০. বাবা মায়ের কাছে করবে যত দাবী দাওয়া কিছু পাবে কিছু আবার যাবেনাতো পাওয়া যেটুক ভাবে সেটি হলো আদর এবং দোয়া পাবেনাতো মন বুঝানো দিল্লীর ঐ মোঁয়া।

২১. কে চলেছে বিদেশে ঐ ছেড়ে নিজের দেশ দুঃখ যে তার গায়ে পিঠে লাগবেই শেষমেশ। যে মাটিতে সোনা ফলে সে দেশ ছেড়ে যাও ঐ বিদেশে বলো তুমি কি সুখ তুমি পাও ? ২২. পদ্মা নদী শুকিয়ে গেল ফারাক্কা বাঁধ দেয়ায় তাই পারাপার হয়না যে আর কালিদাশের খেয়ায়। গাঙচিলেরা ওড়েনা যে হেলে দুলে আর বিরান ভূমি হয়ে গেছে নদীর দুটি পাড়। ২৩. এক সময়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতো এসে বাঘ হালুম হুলুম শব্দ তুলে শুনিয়ে যেতো রাগ কাউকে যদি বাগে পেতো থাবা দিয়ে ধ’রে দেখা যেতো সেই লোকটি পড়ে আছে ম’রে শেয়াল ছিল, ভালুক ছিল, বন বিড়ালী ছিল বর্তমানে যায়না দেখা কোথায় ধ’রে নিল। চিড়িয়াখানায় বন্দী দশায় দু’একটি রয় তবে তারা আগের মত তাগড়া জোয়ান নয়।

নানা জাতের গোখরো ছিল ফনা তুলে ধ’রে পথ চলতে ভয় দেখাতো কি দিন ছিল ওরে আজকে দেশে হিংস্র ওসব জন্তু পশু নেই একশ্রেণীর মানুষ তবে পশু রয়েছেই। ২৪. যদি থাকো ঘরের কোনায় একা খুঁজেও তোমায় কেউ পাবেনা দেখা প্রয়োজনে কেউ যদি কয় এসো কোথায় পাবো বলবো ডেকে মেশো। সবাই মিলে হায়েনা স্বাপদ মারি দূরে যদি থাকো তবে কি করতে পারি আমরা যখন সমাজবদ্ধ জীব লাজ লজ্জায় বের করিনা জীভ বরং সবাই মিলেমিশে চলি কি কারনে অলস ঢলাঢলি। কূঁড়ের মত বসে থাকো ছিঃ বেরিয়ে এসো কাজ যে নিয়েছি। ২৫. কাক পাখিটা করে কেন কা-কা মনটা বুঝি তাঁর রয়েছে ফাঁকা সবার সাথে সে পারেনা মিলতে তাই সে খোঁজে গোপন কোন চিলতে রংটি কালো তাই বুঝি হয় একা তাকে নিয়ে হয়না কিছু লেখা কোকিল কালো তবু যে রয় কদর তার জন্য নয় বরাদ্দ সদর শালিক চড়াই ঘুঘু সবাই এসে নাচে কালো কোকিল থাকে উঁচু গাছে কি আর অমন কন্ঠ মধুর কও কুহু কুহু শুনেই মানুষ পাগল কেন হও যে কখনও সমাজবদ্ধ নয় বাড়াবাড়ি এসব কি আর নয় ? কাক পাখিটা ধারে কাছে থাকে মঙ্গল ও অমঙ্গলে ডাকে।

২৬. যে মানুষের সাথে তোমার হয়না মেলামেশা তার সাথে ক্যান সখ্য গড়ার তোমার নেশা অহংকারি, বদ মেজাজী নানা দোষে দোষ তাকে নিয়ে ক’রো কেন সাপের মত ফোঁস। ২৭. বর্ষা এলে বৃষ্টি যখন দেয় ভিজিয়ে গা তখন তোমার মনটা বুঝি খারাপ লাগে না ! ঝমঝমিয়ে ঝরে যখন ভালই লাগে বুঝি একা মনে কাউকে তখন করো খোঁজাখুঁজি হতে পারে কল্পনাতে স্বপ্নপুরীর কেউ বৃষ্টি এলে তাই বুঝিরে মনে তোমার ঢেউ। ২৮. শরত যখন সাদা মেঘের ভেলায় দৌড়ে ছোটে নীল আকাশের মেলায় কাশের বনে বক পাখিরা এসে শরত শোভা গভীর ভালবেসে শিউলী ফুলের মালা গেথে দেয় উদাসী কেউ সেই মালাটি নেয়। ২৯. হেমšতকে জড়িয়ে রাখে মাঠ এই হেমšত নতুন কাব্য পাঠ নতুন ধানের গন্ধ ছড়ায় দেশে চাঁদের মতই বধু ওঠে হেসে নবান্নতে উতলা তার মন বাংলাদেশে দৃশ্য চিরšতন। ৩০. চৈত্রে যখন খাঁ খাঁ করা দুপুর বেজে ওঠে শুকনো পাতার নূপুর আগুনের ঐ হালকা ছুটে বেড়ায় চৈতি তাপে মানুষ ফেরে ডেরায় ডেরাতো নয় গাছের ছায়ায় বসে চৈতি তবু মনকে দোলায় ও সে।

৩১. এই ছড়াটি ভালবাসার এই ছড়াটি ভালো এই ছড়াটি পড়লে তোমার কাটবে মনের কালো। এই ছড়াতে বাংলাদেশের ছবি আঁকা আছে এই ছড়াতে মনীষীদের নিয়ে যাবে কাছে এই ছড়াতে স্বাধীনতার কথা বলা হয় এই ছড়াতে তোমার আমার কেবলি জয় হয়। ৩২. স্কুলের পড়াটা বাকী রয়ে গেল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যে বেলা বয়ে গেল ভূগোলের ম্যাপটাও হয়নি যে আঁকা সবগুলো খাতা ঐ একেবারে ফাঁকা স্কুলে যেতে তাই ভয় ভয় লাগে এইসব বুঝিনাই ঘুমাবার আগে কি হবে ভেবে বা ভয় পেয়ে আর পড়া ফেলে ঘুমাবার নেই দরকার। ৩৩. মা নেই বাপ নেই, নেই বোন ভাই কার কাছে বলো আর ভালবাসা পাই তাই আমি সারাদিন বই নিয়ে থাকি এভাবেই মনটাকে তাজা ক’রে রাখি। স্কুলে যাই রোজ পড়ি মন দিয়া বড় হবো খুব বড় স্বপ্নটা নিয়ে সহপাঠী, প্রতিবেশী কাছে এসে কয় øেহ আদর ভালবাসা বইতেই রয় আমিও ভাবি তাই ভুলে যাই শোক ফিরাই না, পলকেও বই থেকে চোখ।

৩৪. ব¯িতর লোকগুলো আমাদেরই ভাই তাদের জীবনে হায় কোনো সুখ নাই হাড় ভাঙা খাটুনীতে শরীর যে ীণ হাসিমুখ তাদের যে নেই কোনো দিনও সারাদিন কাজ করে আর রিক্সা চালায় অভাবের সংসার তাকে কে জ্বালায়। ৩৫. যত ধনী, বড়লোক সকলে গরীবের স¤পদ রাখে দখলে মতার দাপটে যে অন্ধ গরীবের সুখ পাওয়া বন্ধ। তারা খায় গোশ-রোষ্ট নিত্য ুধিত গরীবের জ্বলে ঐ পিত্ত নিরবেই স’য়ে যায় সবকিছু তারা দেখা যায় অকালেই যায় তারা মারা গরীবের কেউ নেই আছে এক আল্লাহ ধনীরা তার সাথেও দিতে চায় পাল্লা অধিকার কেড়ে নেয় বেড়ি দেয় পায়ে একদিন বিচার তার হবে নানা দায়ে। ৩৬. ভাল লাগে চাঁদনী রাতে জোছনা ঢালা মাঠ ভাল লাগে মায়ের মুখে সুরের ছড়া পাঠ ভাল লাগে পাখির কূজন সূর্য উঠার বেলা ভাল লাগে হিজলতলায় পুতুল বিয়ে খেলা ভাল লাগে হাøুহেনার ছড়িয়ে দেয়া ঘ্রান ভাল লাগে দখিন হাওয়ার দেয় জুড়িয়ে প্রাণ ভাল লাগে ব’য়ে যাওয়া বাংলাদেশের নদী আরো ভাল লাগবে আমার বইলে নিরবধি। ৩৭. যে গাছ আমার প্রিয় ছিল কে নিয়েছে কেটে গাছের মায়ায় সারা গায়ে বেড়াই উদাস হেঁটে।

কালিবাড়ির কাছে ছিল বিশাল বটের গাছ দেখা যেতো গাছের ডালে হরেল-ঘুঘুর নাচ। হানু নদীর পাড়ে ছিল ফল-ফলারির বন পাখ-পাখালির মত সবাই কাটাই সারাণ। পুরোনো সেই কদম গাছে ফুটতো যখন ফুল ছড়িয়ে পড়া সৌরভ তার মন হতো আকুল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।