আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শু যেভাবে সু হলো



এবারের বিজয় দিবসে লাল সবুজের কেতনটি একটু বেশি উচ্ছ্বলভাবে হাসছে যেন। স্মৃতি স্তম্ভের আশপাশ লোকে লোকারণ্য। ফুল দিতে আসা একটি দলের সবুজ রঙের ব্যানারে দেখলাম লাল কালিতে ‘বিজয়দিবস ২০০ ’ লেখা রয়েছে। অবাক লাগল.. ২০০ কেন ? ভাল ভাবে লক্ষ্য করলাম, গতবছরের ব্যানারটিতে অদক্ষ হাতে ‘৭’ এর জায়গায় সবুজ কালিতে ‘৮’ লেখা হয়েছে। পরে বুঝলাম সবুজ ব্যানারে সবুজ কালির লেখায় আমার দৃষ্টিভ্রম হয়েছিল।

সেখান থেকে ফিরে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে গেলাম। কোন সঙ্গী ছিল না পাশে, বড় একা একা লাগছিল। একটি সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে পড়লাম। শুনেছি বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা নাকি ইন্টারনেটে খুঁজতে থাকেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের। বাংলাদেশে তখন আমরা কি করছি তা জানার এবং দেখার আশায় তারা টিভি চ্যনেলে বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন অধীর আগ্রহে।

তেমন এক চাতক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল নেটে। বয়স আটচল্লিশ, অবিবাহিত। তিনি নিজেকে আমার কাছে পরিচয় দিলেন, তিনি নাকি একটি জীবন্ত মরুভূমি। কোথায় থাকেন জানতে চাওয়াতে তাও বললেন ‘মরুভূমি’। চ্যাট করতে করতে সেই বন্ধুটি একটি ডায়রীর স্ক্যান করা তিনটি ছেঁড়া এবং অস্পষ্ট পাতা আমাকে পাঠিয়ে বললেন, তিনি গতকাল তাঁর পুরনো জুতো জোড়া সারিয়ে বাসায় ফেরার সময় ওই পাতাগুলো নাকি কুড়িয়ে পেয়েছেন।

ডায়রীটি আরবি ভাষায় লেখা, অবশ্য নীচে বাংলায় অনুবাদ করা রয়েছে। উল্লেখ্য অনুবাদটি আমার নেট ফ্রেন্ডের করা। আমি ডায়রীর পাতায় চোখ রেখে এবং অনুবাদে ডুবে যেতে যেতে স্বার্থপরের মত ভদ্রলোকের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। ১২.১২.০৮ মধ্যরাত ২.৩৪ .. (ডান পাশে খানিকটা ছেঁড়া) .. .র অভিধানটি এক পৃষ্ঠার, শুধুমাত্র একটি শব্দের অর্থই দেয়া রয়েছে তাতে। জুতো, .. (দ্বিতীয় লাইনের শুরুতে সামান্য ছেঁড়া) ..জেকেই নিজের জুতো মারতে ইচ্ছে করে সবসময়।

আমি কি আজীবন পিষ্টই হতে থাকবো ? কারো মনে কি কখনও ঠাঁই পাবো না ? কারো কপালে কি কখনও একটি মমতা মাখানো চুম্বন এঁকে দিতে পারবো না এজীব.. (নীচের দিকে সম্পূর্ণ ছেঁড়া).. ১৩.১২.০৮ মধ্যরাত ১.৫৭ .. (খানিকটা ছেঁড়া) ..মার মুনিব খুবই খেয়ালি ধরনের মানুষ। বয়স আটাশ, একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে কাজ করেন। ক’দিন ধরে তাকে খুবই অন্যমনষ্ক দেখাচ্ছে। চৌদ্দই ডিসেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন আছে। [একটু থমকে গেলাম।

আমিতো এতদিন জানতাম চৌদ্দই ডিসেম্বর দিবসটি শুধুমাত্র আমাদের, ওদিন আমরা শোকে মুহ্যমান হবো। ] অনেক সাংবাদিক ভাই উপস্থিত থাকবেন সেদিন। মধ্যমণি পৃথিবীর প্রচণ্ড প্রতাপশালা.. দুঃখিত প্রতাপশালী প্রেসি.. (নীচের দিকে সম্পূর্ণ ছেঁড়া).. ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. .. (এই পৃষ্ঠার ডান পাশে ছেঁড়া থাকলেও সম্ভবত সেখানে কিছু লেখা ছিল না) ..আজ রোববার। মুনিব এভাবে আমাকে কখনও আদর করেননি। তিনি আমার গায়ে আদর করতে করতে মুখে কি যেন বিড়বিড় করছেন।

তারপর বাসা থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. সম্মেলন শুরু হয়েছে। আমার মুনিব বসে আছেন সামনে বসা সাংবাদিক ভাইদের তৃতীয় সারিতে, এদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ওদেশের নামী প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে প্রায় বিশ ফুট দূরত্বে। তাঁকে ভেতরে ভেতরে খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছে। মনে মনে কি একটা কাজে সফল হওয়ার জন্য বারবার প্রার্থনা করছেন ঈশ্বরের কাছে।

১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. ডায়াসে দন্ডায়মান দুই ভদ্রলোক পরষ্পর করমর্দন শুরু করতে যাবেন এই সময় আমার মুনিবের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গেল। পা দিয়ে দশ নম্বর আমাকে একটু আলগা করে নিলেন, সত্যি বলতে কি আমি উনার ইশারা ঠিক বুঝতে পারিনি তখনও। ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. হঠাৎ আমার মুনিবের মুখ থেকে বের হয়ে এল এই ধরনের অনুষ্ঠানের অচল কিছু শব্দ, 'ব্যাটা কুত্তা এটা তোর জন্য বিদায়ী চুম্বন'। এই বলে তিনি ডান আমিকে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারলেন লক্ষ্যবস্তুর কপাল বরাবর, ক্ষোভটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান।

দ্রুত আমার জমজ আমিকে তুলে নিয়ে তাও ছুঁড়ে মারলেন একই জায়গায়, এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হল, তবে..। ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. মনে হল লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়াতে ভালই হয়েছে। মঞ্চের দুই হাস্যোজ্বল মনুষ্যের পিছনে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে তাঁদের স্ব স্ব দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় পতাকা। দ্বিতীয় আমি গিয়ে লাগলাম সরাসরি শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রাখা বহু তারকাখচিত পতাকাটির গায়ে। ১৪.১২.০৮..(সময় অস্পষ্ট).. তার চেয়ে প্রেসিডেন্টের গায়ে লাগাই ভাল ছিল কি ? তাহলে ব্যক্তির গায়ে লাগা যেত।

কিন্তু এখন যে পতাকা - মানে পুরো জাতির গায়ে লেগে গেলাম আমি। সম্মানিতের গায়ে লেগে সম্মানিত হওয়াতে আমার জাত ভাইদের মর্যাদা বাড়বে কি কিছুটা ? ব্যক্তির জন্যে জাতির মাথা হেঁট হয়ে এসেছে অনাদিকা..(সামান্য ছেঁড়া)..। মনোবাসনা পূরণের একটি সুযোগ পাইয়ে দেয়ার জন্য আমার মুনিবকে প্রাণভরে ..(অস্পষ্ট)..বাদ দিলাম। দৃশ্যটি যারা টিভিতে সরাসরি দেখছিলেন তাদের সকলের মুখ হা হয়ে গেল কি ? নিশ্চয় তখন তাদের পায়ের জুতো গুলো আনন্দে ঝলমল করছিল। হঠাৎ করে হ্যাঙ্গ হয়ে গেল।

কি ? কম্পিউটার ? নাকি আমার মনটা ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।