আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডগ নামের দুই ছবি: স্লামডগ মিলওনার ও শুটিং ডগস

রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে

পর পর দুটি ছবি দেখলাম। কাকতালীয় ভাবে দুটো ছবির নামের মধ্যেই ডগ আছে। দুই ছবি দুই ভিন্ন ধরণের অনুভূতি আনে। মুগ্ধ হয়েছি, মন খারাপ হয়েছে, ব্যথিত হয়েছি। একটা দেখে ভাল কিছু দেখার অনুভূতি আসে, পরেরটি দেখে মনে পড়লো এই মুহূর্তে গাজায় কি হচ্ছে সেটি।

স্লামডগ মিলিওনার মুম্বাই-এ বেড়ে ওঠা তিনজনের গল্প। জামাল, সেলিম আর লতিকা। মূলত এটা জামাল মালিকের গল্প। সেলিম মালিক তার ভাই, লতিকা প্রেমিকা। জামাল কোন বনেগা ক্রোড়পতিতে (হু ওয়ান্টস টু বি মিলিওনার) অংশ নিয়ে ১০ লাখ ডলার পুরস্কারের একদম কাছাকাছি।

আর মাত্র একটা প্রশ্ন। জামাল এখন একটা কল সেন্টারের সহকারি। মূলত চা খাওয়ায় সবাইকে, মানে ক্যান্টিন বয়। উপস্থাপক অনিল কাপুর এই জামালকে পুলিশে ধরিয়ে দেয় প্রশ্নের উত্তর দিতে জালিয়াতি করার জন্য। পুলিশ শুরু করে নির্যাতন আর শুরু হয় জবানবন্দি।

এই হচ্ছে ছবির শুরু। শুরু হয় পেছন দিক থেকে। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর আসলে জামালের জীবন কাহিনী। পরিচালক অসাধারণ দতায় এটি তৈরি করেছেন। একশ ডলারের নোটে কার ছবি এই প্রশ্নের উত্তর জামালের জানা।

পিস্তল কে আবিস্কার করেছে সেটিও জামালের জানা। এমনকি সে জানে ভজনের মূল লেখক সুরদাস। কিভাবে জানে? সেটাই আসল সিনেমা। জামালের বাবা-মা মারা যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। সেই থেকে লতিকা তাদের সাথে।

তারা ত্রি মাসকেটিয়ার্স। জীবনটা তারপর জামালকে অনেক দিকে নিয়ে যায়। ছেলে ধরা গ্র“পের হাতে পরে তারা। পালিয়ে যায় দুই ভাই। সেখানে সুরদাসের ভজন ভালো গাইতো যে ছেলেটি তাকে অন্ধ করে দেওয়া হয় ভিায় কাজে লাগাতে।

সেই ছেলেটিই জামালকে একদিন বলেছিল ডলারে কার ছবি। পিস্তল সে প্রথম দেখে ভাইয়ের কাছে। ভাই এখন আন্ডারওয়ার্ল্ড-এর বড় একজন কেউকেটা। লতিকাকে খুজে পেলেও বড় ভাই তাকে দিয়ে দেয় তার বসকে। জামাল লতিকাকে পেতে মরিয়া।

ছবিটা এভাবেই এগিয়ে যায়। ছবিটার নির্মাণ অসাধারণ সুন্দর। ক্যামেরার কাজও ভাল। উপরি পাওনা এর আর রহমানের মিউজিক। আর অসাধারণ অভিনয়।

ছোট বেলার জামাল, সেলিম লতিকা যেমন , বড় হয়েও তেমন অভিনয়। এটি ভারতের পটভূমিকার ছবি, ভারতের ছবি না। হলিউডের ছবি। সমালোচকরা ব্যাপকভাবে পছন্দ করেছে ছবিটা। এখন পর্যন্ত পুরস্কারও পেয়েছে অনেকগুলো।

অস্কারের স্লামডগ মিলিওনার সামনের সারিতেই থাকবে। ঢাকায় ভাব ভাল প্রিন্ট পাওয়া যাচ্ছে। আমি তো মুগ্ধ। শুটিং ডগস: রোয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে সেরা ছবি হোটেল রোয়ান্ডা। যাকে বলে আফ্রিকান সিন্ডার্স লিস্ট।

গণহত্যা নিয়ে অন্যতম সেরা ছবি বলা হয় হোটেল রোয়ান্ডাকে। আবার ছবিটা নিয়ে সমালোচনাও আছে। যেমন রোয়ান্ডায় সে সময় অবস্থানরত ইউনাইটেড ন্যাশন অ্যাসিসট্যান্স মিশন ফর রোয়ান্ডা (ইউএনএএমআইএর)-এর ভূমিকা নিয়ে। বলা হয় তারা আসলে গণহত্যা থামাতে তেমন উদ্যোগ নেয় নাই। তাদের ভূমিকা ছবিটাতে সঠিকভাবে আসেনি।

সেদিক থেকে ব্যতিক্রম শুটিং ডগস। ইকোল টেকনিক অফিসিয়াল রোয়ান্ডার একটা মাধ্যমিক স্কুল। এটি চালায় ফাদার ক্রিস্টোফার। আর শিক হিসেবে লন্ডন থেকে চলে এসেছে জো, এক আদর্শবাদি যুবক। ১৯৯৪ সালে ১১ এপ্রিল রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট খুন হলে শুরু হয় গণহত্যা।

হুতুরা সংখ্যাগরিষ্ট। তাদের হাতে মারা যায় টুটসিরা। জাতিসংঘ বাহিনী তখন ছিল রোয়ান্ডায় মতা ভাগাভাগি পর্যবেনে। গণহত্যা শুরু হলে স্কুলে ক্যাস্প করে জাতিসংঘ মিশন। একরাতে এখানে আশ্রয় নেয় আড়াই হাজার টুটসি।

বাইরে তখন চলছে গণহত্যা। দৃশ্যটা এরকম-ক্যাম্পের ঠিক একশ গজের বাইরেই উল্লাস করছে হুতুরা, সবার হাতে এক-৪৭, রামদা, কুড়াল ইত্যাদি। বের হলেও হত্যা। সারা শহর জুড়ে তখন এই হত্যা উৎসব। স্কুলের গাড়ি চালাতো যে তাকেও দেখা গেল রামদা হাতে।

এখানে আশ্রয় নিয়েছে আরো কিছু সাদা চামড়া। সাংবাদিকও আছে। সবার চোখের সামনে চলছে গণহত্যা। কেউ কিছু করছে না। ইউএন মিশনও না।

তাদের নাকি খালি পর্যবেণ করার আদেশ, গুলি করার আদেশ নাই। একসময় সব সাদা চামড়াকে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। থেকে যায় ফাদার ক্রিস্টোফার ও জো। তারা অসহায় টুটসিদের ছেড়ে যাবে না। এক সময় জাতিসংঘ মিশনের কাছেও অর্ডার আসে ক্যাম্প ছেড়ে দেওয়ার।

তারা চলে যাবে। টুটসিদের প থেকে অনুরোধ করা হয় জাতিসংঘ বাহিনীই যেন তাদের মেরে রেখে যায়, তারা হুতুদের হাতে মরতে রাজি না। চলে যায় মিশন। এবার আর জো পারে না। আদর্শবাদী ভাবনা ছেড়ে মৃত্যু ভয়ে সেও চলে যায় মিশনের সাথে।

থেকে যায় শুধু ফাদার ক্রিস্টোফার। জাতিসংঘ বাহিনী আড়াই হাজার টুটসিদের হুতুদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় রোয়ান্ডা ছেড়ে। ফাদার যখন টুটসিদের গগের মহিমা শোনায় তখন একজন প্রশ্ন করে বাইরে যারা ওদের মারার জন্য আছে গড কি তাদেরও ভালবাসে? জ্বালানি নেই, ফাদার অর্ডার দেয় সব বাইবেল পুড়িয়ে আগুন জ্বালাতে। চলে যায় জাতিসংঘ মিশন। কয়েকজন বাচ্চা আর একটা মেয়েকে কোনো রকম বাইরে নিয়ে যায় ফাদার।

পথে ফাদারও মারা যায়। ক্যাম্পে থাকা প্রতিটা টুটসি মারা যায় হুটুদের হাতে। বিবিসি প্রোডাকশনের ছবি। পুরো ঘটনাটিই সত্যি। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গণহত্যার শিকার হয় ৮ থেকে ১০ লাখ টুটসি।

ছবিটার শুটিং করা হয়েছে রোয়ান্ডার সেই সব স্থানে যেখানে গণহত্যা হয়। অরিজিন্যাল জায়গাগুলোইতেই শুটিং হয় এবং টেকনিশিয়ানরাও ছিল এমন টুটসি যাদের আÍীয় স্বজন মারা গেছে এই সময়। এমনকি ধর্ষনের শিকার একজনও ছিল ছবিটার সঙ্গে। যারা দুর্বল চিত্ত তাদের এই ছবি না দেখাই ভাল। উপরের প্রথম ছবিটা শুটিং ডগস ছবির একটা দৃশ্য।

অসহায় টুটসিরা দেখছে বাইরে হুটুদের উল্লাস।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।