আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৌকা ভ্রমণ অথবা সী-(থুক্কু নদী) ট্রায়াল…


ঘটনা টা অবশ্য বেশ কিছুদিন আগের । সেদিন গিয়েছিলাম আনন্দ শীপ-ইয়ার্ড এ। মোজাম্বিকের ৪টি জাহাজ বানিয়েছে তারা সেই জাহাজের ইঞ্জিন আবার আমাদের দেয়া। সেদিন যাবার উদ্দেশ্য ওই জাহাজ গুলোর একটার সী-ট্রায়াল (নদী ট্রায়াল) করা। ধানমন্ডির অফিস থেকে সেই নারায়নগঞ্জ কাছে নয় মোটেই।

সুতরাং ডক-ইয়ার্ডে পৌছে দেখি জাহাজ যথারীতি আমাকে রেখে নিজেই রওয়ানা হয়েছে। বসে থেকে জাহাজের ফিরে আসার জন্য দেরী করছি, এমন সময় আমাকে জানানো হল একটা জাহাজ খাবার আর পানি নিয়ে ওই জাহাজে পৌছে দেবে,সুতরাং তারা আমাকে অনুরোধ করল আমি যেন সেই জাহাজে করে গিয়ে সী-ট্রায়াল রত মোজাম্বিকের সেই নতুন জাহাজে যাই। রাজী হলাম। অতঃপর যে জাহাজটি আমাদের নিয়ে যাবে সেটি দেখলাম আর হতবাক হলাম। আসলে ওটা জাহাজ না, ইঞ্জিন চালিত এক ছোট নৌকা।

যাইহোক চড়ে বসলাম। প্রচন্ড শব্দ করে সে নৌকা নদী তীর ছাড়ল। নৌকা মাঝনদী তে এমন সময় দেখি একজন নৌকার ভেতরে পানি সেঁচে একটা বড় বালতিতে তুলছে আর আরেক জন সেটা নদী তে ফেলছে। দেখে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। আমি আবার সাঁতার জানি না।

তাকে বললাম, “ভাই আপনার নৌকা ঠিক আছে তো, পানি উঠে কেন?” সে হাসতে হাসতে বলে, “নৌকাতে পানি উঠে তো সেটা ঠিক করার জন্য শীপ-ইয়ার্ডে এনেছিলাম, আর আমাকে পাঠিয়ে দিল…” শুনে তো আমার মাথা খারাপ। নৌকা তখন মাঝ নদী তে। আনন্দ শীপ-ইয়ার্ডের যে কর্মচারী আমার সাথে ছিল তার কাছে শীপ কত দূরে আছে জানতে চাওয়ায় বলল যে ৩-৪ ঘন্টা লাগবে যেতে। আমি তখন যে পানি সেঁচছিল তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, যদি নৌকায় পানি হঠাত উঠা শুরু করে, তাহলে সে নৌকা তীরে নিয়ে যেতে পারবে কি না? তার উত্তর, যদি একজন সাঁতার জানে তাহলে সে ইচ্ছে করলে আরও আকজন কে তীরে নিয়ে যেতে পারে, এসব শুনে তো অবস্থা আরও খারাপ। সেই মাঝির গল্প মনে পড়ছিল আর মনে হচ্ছিল আমার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞান থেকে এখন কোন লাভ নাই, বরং মাঝির মত সাঁতার জানলেই অনেক লাভ হত।

এদিকে নৌকার বাইরে পানির উচ্চতা একেবারে নৌকার কিনার পর্যন্ত চলে এসেছে। যখনই পাশ দিয়ে বড় কোন ট্রলার অথবা লঞ্চ যাচ্ছিল, ঢেউ এর কিছু অংশ নৌকার ভেতরেও চলে আসছিল। সব মিলায় ভয়ঙ্কর অবস্থা। মনে মনে ভাবছিলাম, এ যাত্রা তো আর বাঁচার আশা নেই,তাই আমি পানিতে ডুবে মরার পর কী কী হতে পারে সেসব ভাবছিলাম। সারাজীবন বড় বড় যেসব খারাপ কাজ করেছি তা বসে বসে ভাবছিলাম আর মনে মনে সামান্য সম্পত্তির উইল ও করে ফেলছিলাম।

এমনকি ভাবছিলাম আমার ল্যাপটপ যার প্রতি আমার ছোট ভাইয়ের অনেক আকর্ষণ কিন্তু আমি তাকে ধরতে দেই না তেমন সেটা তাকেই দিয়ে দেব আমার মৃত্যুর পর (এ কথা এখন কেউ আবার তাকে বলবেন না দয়া করে)। এমন অনেক উদাসী চিন্তা করছি বসে বসে এমন সময় শুনলাম নতুন জাহাজটাকে দেখা গেছে। শুনে মনে অনেক আশার সঞ্চার হল, যাক এ যাত্রা মনে হয় মরতে হবে না। অবশেষে না মরে, বেঁচে বর্তে আছি আর আপনাদের জন্য ব্লগ লিখছি। তবে জানি না বার বার ভাগ্য এত সহায় হবে কি না।

বিঃদ্রঃ ছবিতে দুই মাঝির নৌকা থেকে পানি সেঁচা…
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.