আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লাহ কি নিরাকার ? ও সর্বত্র বিরাজমান ??



শায়খ মুফতী মোহাম্মদ আবদুর রউফ সালাফী মাসিক মদীনা, সম্পাদক মহিউদ্দীন খান, মদীনা ভবন ৩৮/২, বাংলা বাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ পরিচিত । হয়তোবা পত্রিকাটির নাম মদীনা দেয়ার উদ্দেশ্য হবে পত্রিকাটি মদীনাতুর রাসুল [সা:]-এর আদর্শে রচিত, প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত । আর তা যদি না হয়, তাহলে মদীনা নামে প্রত্রিকাটির নামকরণ মদীনা ভক্তদিগকে প্রভাবিত ও প্রতারিত করা ছাড়া আর কিছু না । ভবনের নাম মদীনা রাখার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ছিল বাড়ীর অদিবাসীগণ হবেন মদীনার আদর্শের অনুসারী । যদি তা না হয়, তাহলে স্পষ্ট বুঝতে হবে মদীনার নাম ব্যবহার করে মদীনার ভক্তবৃন্দকে প্রতারিত করে দুনিয়ার অর্থ-স্বার্থ হাসিল করা ।

১৯৯৯ আগষ্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের মদীনা পত্রিকার বয়স হল ৩৫ বৎসর । কিন্তু সেই ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে পত্রিকাটির কোন সংখ্যায় মদীনার দু’রাকাত ফরজ নামাজের পূর্ণ বিবরণ কেউ পায়নি । মদীনার একটি রোযার বিবরণ পায়নি । আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে মদীনার ইমাম, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওস্তাদগণ, এবং মদীনার মুহাদ্দিসগণের আকীদাহ ও বিশ্বাস সম্পর্কে কোন প্রবন্ধ চাপা হয়নি । অথচ মদীনার ইকামত, নামাজ প্রভৃতির বিরুদ্ধাচরণ বাংলাবাজারের মদীনা ভবনে ৩৫ বৎসর ধরে চলছে, হয়তোবা ভবিষ্যতেও চলবে ।

তবুও ভবনের নাম, প্রত্রিকার নাম মদীনাই থাকবে । এ যেন কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন ! বাংলাদেশের ঢাকার বাংলা বাজারের মদীনা রাসূল [সা:]-এর সৌদি মদীনার আক্বীদাহ ও বিশ্বাসের উপর হামলা শুরু করেছে । মুসলমানদের আক্বীদাহ ও বিশ্বাসকে যে সকল অমুসলিম ব্যক্তি বা সংগঠন ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে তারা সবাই ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইসলামের সর্বনাশ করেছে । যেমন ইমদাদুল্লাহ মাক্কী (তাশাওরে শায়েখ), হুসাইন আহমদ মাদানী (হিন্দু-মুসলিম একজাতি) প্রভৃতি । বর্তমানের বাংলা বাজারের মদীনা মুসলমানদের আক্বীদা বিশ্বাস ধ্বংসকারী কোন গোপন মু’তাযেলা সংস্থার বদ-আক্বীদা প্রচার করছে সৌদি আরবের মদীনার নামে ।

তা যদি না হত তাহলে রাসূলের [সা:] মদীনার সাথে বাংলা বাজারের মদীনার সংঘাত কেন ? বাংলা বাজারের মদীনার ৩৫ বর্ষ ৫ম সংখ্যা আগষ্ট ১৯৯৯ সংখ্যার ৫১ নং পৃষ্ঠা ৪৪নং প্রশ্নোত্তর লক্ষণীয় । প্রশ্নটি মুহাম্মদ মতিউর রহমান সৌদি আরব থেকে পাঠিয়েছেন । প্রশ্ন: “আমরা এতদিন বিশ্বাস করে আসছি যে, আল্লাহ তা’আলা নিরাকার এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান । আমাদের এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এখানকার ইসলমী সেন্টারের একজন মাওলানা (বাংলাদেশী) তার সাপ্তাহিক হালকায়ে ওয়াজে বলেছেন যে, আল্লাহ ত’আলা নিরাকার নন এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন । অর্থাৎ আল্লাহর হাত-পা, চোখ ইত্যাদি সবই আছে ।

মাওলানা সাহেব এও বলেন যে, যার মধ্যে এই বিশ্বাস নাই তিনি মুসলমান বা ঈমানদার নন । এই নিয়ে এখানকার বাংগালীদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে । আশা করি কুরআন ও হাদীসের আলোকে আপনার অভিমত জানিয়ে সুখী করবেন”। বাংলা বাজারের মদীনা উক্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এই- উত্তর: “ যে ব্যক্তি এ ধরনের কথা বলেছেন, সে হয় অকাট মূর্খ না হয় বিকৃত মস্তিষ্ক । কোন গোমরাহ ফেরকার গোপন এজেন্ট হওয়াও বিচিত্র নয় ।

আল্লাহ তা’আলা নিরাকার । তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজমান । তার ক্ষমতা সর্বব্যাপী । পবিত্র কুরআনের আয়াতে এবং হাদীস শরীফেও আল্লাহ ত’আলার পরিচয় এভাবেই দেয়া হয়েছে । সুতরাং এ ব্যক্তির প্রলাপে কান দিবেন না ।

’’ মহিউদ্দীন সাহেব উত্তরে যে কতাগুলি বলেছেন, তা হল এই যে, যারা বলবেন আল্লাহ সাকার, তাঁর হাত আছে , পা আছে, চোখ আছে, তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন তিনি- ১.আকাট মূর্খ, ২. না হয় বিকৃত মস্তিষ্ক, ৩. না হয় কোন গোমরাহ ফেরকার গোপন এজেন্ট । উল্টো আমরা দেখছি, মহিউদ্দীন সাহেব নিজেই আকাট মূর্খ ও বিকৃত মস্তিষ্ক । কারণ বিকৃত মস্তিষ্ক লোক ছাড়া সুস্থ ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী কোন মানুষ একজন আলেমকে অকাট মূর্খ ও বিকৃত মস্তিস্ক বলতে পারে না । কারণ পাগল চাড়া ভাল মানুষকে কেউ পাগল বলে না । আর তার মূর্খতার পরিচয় হলো রাসুল [সা:] বলেছেন, আল্লাহর আকার আছে, মেশকাত হা: ৩৫২৫, হয় পৃ: ১০৪৬, বইরুত; আলমাকতাবুল ইসলামী, আরবী ।

হাদীসটি মুত্তাফাক্ব আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম) । আমাদের দেশে হাদীসের শিক্ষাগুরু হয় এই মেশকাত হতে । মহিউদ্দীন খান সাহেব এতোই মূর্খ যে, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার এই অপরিহার্য হাদসীটির জ্ঞানও তার নেই । আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বলেছেন সূরা আল-ইমরান ৭৩, মায়েদা ৬৪, ফাতাহ ১০, যুমার ৬৭, আল হাদীদ ২৯, আল-ইমরান ২৬, আল-মুমেনুন ৮৮, ইয়াসিন ৮৩, মুলুক ১ আয়াতে অথচ তিনি তা জানেন না । সূরায়ে কালামের ৪২নং আয়াতে আল্লাহ তাঁর পায়ের কথা বলেছেন তাও তিনি জানেন না ! আল্লাহ তাঁর চোখের কথা সূরা হুদ ৩৮, মুমিনুন ২৭, তুর ৪৮, কামারের ১৪ নং আয়াতে বর্ণনা করেছেন, অথচ মু্হিউদীন খান সাহেব তা জানেন না ! সত্যই কি জানেন না ? পাঠক ! মুহিউদীন খান সাহেব পবিত্র আল কুরআনের অনুবাদ করেছেন, সংক্ষিপ্ত তাফসীর ও সম্পাদনাও করেছেন ।

সূরা আল ইমরান ১৭০ পৃ:, আয়াত ২৬; পৃ: ১৮২, আয়াত ৭৩; ময়েদাহ পৃ:৩৪৩, আয়াত ৬৪; ফাতাহ পৃ: ১২৬৭, আয়াত ১০; হাদীদ পৃ: ১৩৩৯, আয়াত ২৯; মুমিনুন পৃ: ৯২০, আয়াত ৮৮; ইয়াসিন পৃ: ১১৩৮, আয়াত ৮৩; মুলুক পৃ: ১৩৯০, আয়াত ১; সূরায়ে কালাম পৃ: ১৩৯৮; মুমেনুন পৃ: ৯১৫, আয়াত ২৭; তুর পৃ: ১৩০১, আয়াত ৪৮; কামার পৃ: ১৩১৩, আয়াত ১৪, যুমার পৃ: ১১৭২, আয়াত ৬৭; পাঠ করে দেখুন । এই আয়াত সমূহে আল্লাহর হাত, পা, চোখের উল্লখ্য স্বয়ং মুহিউদীন সাহেবের অনুবাদেই পাবেন । সুতরাং মুহিউদীন সাহেব জানেন যে আল্লাহর হাত, পা, চোখ সব আছে । তিনি আনুবাদও করেছেন, কিন্তু মূলত কুরআনের ঐ আয়াতগুলিকে বিশ্বাস করতে পারেন নি । যারা কুরআন বিশ্বাস করেন তারা ঈমানদার, আর যারা বিশ্বাস করেন না তারা অবিশ্বাসী ।

কুরআনের অনুবাদ করলেই কেউ ঈমানদার হতে পারে না, কারণ অনেক অমুসলিম কুরআনের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও গবেষনা করেও অমুসলিমই থেকেছেন । ইমাম আবু হানিফা [রা:] বলেছেন যে, আল্লাহর হাত আছে, আকার আছে, জীবন আছে যেমন আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ্য করেছেন । কুরআনে আল্লাহর যে চেহারা , হাত, প্রভৃতি উল্লেখ্য করা হয়েছে সেগুলো আল্লাহর দেহের বৈশিষ্ট বা গুণাবলী । তবে তার পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । তোমরা কখনো কেউ বলবেনা যে, আল্লাহর হাত প্রকৃত হাত নয় বরং আল্লাহর হাতের অর্থ (কুদরত) ক্ষমতা ইত্যাদি ।

কারণ এ ধরণের কথা হল মুতাযেল্লাদের আকীদাহ । জেনে রাখ দেহের যেমন বৈশিষ্ট্য হল হাত, তেমন আল্লাহর হাতও তার দেহের বৈশিষ্ট্য । তবে ঐ হাতের পূর্ণ বিবরণ জানি না । ফিকহুল আকবর ৫৮ ও ৫৯ পৃ: । দারুল কুতুবুল উলমিয়াহ, বইরুত ।

মহিউদীন খান সাহেব ৩৫ বৎসর ধরে মদীনার নামে পত্রিকা চালাচ্ছেন । মদীনা নাম ব্যবহার করার মতলব এবার স্পষ্ট হচ্ছে । মদীনার সম্মান যাদের অন্তরে বদ্ধমূল তাদের অন্তরকে কাফের ও অবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার ঘৃনিত উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টায় মদীনা নামটি তিনি ব্যবহার করছেন । মহিউদীন খান সাহেব সৌদি আরবে আবস্হানকারী মাওলানা সাহেবকে বলেছেন, বিকৃত মস্তিষ্ক; বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মহিউদীন খান সাহেব নিজেই মস্তিস্ক বিকৃতির খপ্পরে পড়েছেন । সৌদি আরবে অবস্হানকারী মাওলানা সাহেবই ঈমানদার বরং মহিউদীন সাহেবই কুরআনের আয়াতে ঈমানদার নন ।

তাছাড়া এ কথাও স্পষ্ট হয়েছে যে তিনি মুতাযেল্লা সম্প্রদায়ের গোপন এজেন্ট । তা যদি না হবে তাহলে তিনি মুতাযিলাদের বিশ্বাস ও আকীদাহর ভিত্তিতে জবাব দিবেন কেন ? মহিউদীন খান সাহেব বলেছেন, ‘’কুরআনের আয়াতে ও বহু হাদীসে আল্লাহ নিরাকার ও তিনি সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান রয়েছেন । ‘’ কিন্তু তিনি একটি আয়াত ও একটি হাদীসের উদৃতিও তিনি দিতে পারেন নি । মূলত তার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা । আল্লাহ নিরাকার এমন কোন আয়াত নেই, এমন কোন সহী হাদীসও নেই ।

আমরা জানি মহিউদীস খান সাহেব একজন মুকাল্লিদ ( আন্ধ অনুসারী) । আর কোন মুকাল্লিদ কখনোই বড় আলেম হতে পারেন না, হওয়ার প্রয়োজনও নেই । অন্ধের মত অনুসরণই তার কাজ । মুকাল্লিদ দেখবে বাপ দাদারা কি করেছে ? উস্তাদ কি বলেছে ? তাই সে অনুসরণ করবে । দলিল দেখার তার কোন দরকার নেই ।

আরব বিশ্বের বাইরে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্হান, আফগানিস্হান তুরুস্ক প্রভৃতি দেশের অধিকাংশ আলেমগন মুকাল্লিদ [আন্ধ অনুসারী] । তাই তাদের কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান খুবই সামান্য । কিন্তু অহংকার হিমালয় পাহাড়ের ছেয়েও উঁচু । তাছাড়া আমাদের দেশের এই ধরনের আলেমরা সাধারণ মানুষদেরকে তো মানুষই মনে করেন না । তারাইতো মাদ্রাসায় পড়েন, পড়ান একখানা বই, যার নাম নূরুল আনোয়ার, এই বইটি তারা আম জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, ওরাতো চতুষ্পদ জন্তুর মতো [আরাফাত পাবলিকেশন্স- এর নূরুল আনোয়ার বাবুল ইজমা, পৃষ্ঠা নং ১৬৭] ।

মাওলানা মহিউদীন খান সাহেবও নূরুল আনোয়ারের অনুসারীদের মতো তার পত্রিকায় প্রশ্নকারী সরল প্রাণ মানুষদেরকে বেআক্কেল মনে করে উল্টা-পাল্টা দলিলবিহীন উত্তর দিয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছেন । আর আল্লাহর প্রদত্ত ইলম গোপনকারীদের এটাই স্বভাব । আমরা অনুরোধ জানাব ইমাম বায়হাকী [রা:] এর সংকলিত কিতাবুল আসমাই আসসিফাত পাঠ করুন ! আল্লাহ সম্পর্কে এই হাদীসের সংকলন সকল ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.