আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৪: অপরাজেয় বাংলা

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
চার. দুপুর রোদে গাছের ছায়ায় সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ খুলে বসলেন তার স্মৃতির খাতা। "এখন যেখানে অপরাজেয় বাংলা সেখানে আগে লতিফ সাহেবের করা আরেকটি ভাষ্কর্য্য ছিল। ওটা যে কোন কারনে ভাঙার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সেখানে আরেকটি ভাস্কর্য বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ যখন ঠিক করলো যে এখানে আর একটা ভাস্কর্য বসানো হবে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক ম. হামিদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ম. হামিদ চারুকলা ঘুরে ঘুরে দেখেছে কে ভালো ভাস্কর্য তৈরি করছে। এটা ডুল কো ইনসিডেন্স হয়ে গেছে। ওনারা একটা কাজ খুঁজছে। এ দিকে আমিও কাজটা শুরু করেছি..." তেমন কায়দা করে কথা বলতে পারেন না খালিদ ভাই। কথা বলেন শিশু সুলভ সরলতায়।

কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই হরহর করে বলতে শুরু করেন। থেমে থেমে বলতে বললে খেই হারিয়ে ফেলেন। উনিতো বলে খালাস, ব্যাকায়দায় পড়ি আমি। একটা কিছু দ্বিতিয়বার গুছিয়ে বলতে বললেই বলেন, এই কথাটাতো এক বার বলছি আমি! আমি ত আর তখন উনারে আমার টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতাটার কথা বোঝাতে পারি না। তার পর ও উনি ধৈর্য্য নিয়ে বলতে থাকেন উনার জীবনের মহাকাব্য।

আমিও টেপের পর টেপ ভরে চলেছি। গাছের ডালে হাত দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষি হতে থাকে শান্ত। এই প্রজন্মের এক প্রতিনিধি। বিকেলে ফিরবার পথে ফুটপাথে মোটা মোটা সবুজ কচুর লতি দেখে গাড়ী থেকে নেমে হাটা দেন খালিদ ভাই। গত বার মতিঝিলের আরব বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেয়ালে উনার মুক্তি যুদ্ধ ও আবহমান বাংলা এই রকম থীমের ওপর করা ওনার বিশাল টেরাকোটার কাজের ছবি তুলে ফিরবার পথে উনার এই একই ঘটনা দেখে ছিলাম।

পরে চারুকলার পোলাপানের মুখে গল্প শুনেছি খালিদ ভাই'র নিজ হাতে বাজার সদাই করার সখের কথা। এক গাদা তরি তরকারী কিনে গাড়িতে উঠলেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। অপরাজেয় বাংলার স্রষ্টা। খালিদ ভাই জোর করে বাড়ী নিয়ে এলেন আমাদের। খাওয়াদাওয়া শেষে আমি খাতা কলম নিয়ে বসি।

খালিদ ভাই কৃষক মডেল যিনি দিয়েছেন এবং আপনার সাথে সবচে ঘনিষ্ট হয়ে যিনি কাজ করেছেন সেই বদরুল আলম বেনু সহ ছাত্র মডেল সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে এনাদের কন্টাক্ট আমারে দেন। খালিদ ভাই বললেন বেনু'র ছেলের সাথে যোগাযোগ হইছিল দুই বছর আগে ওর কন্টাক্ট নাম্বারটা আছে ঢাকার ফ্লাটে। ফজলে সাহেবকে ফোন করলেন উনি পেওলন না। আর ফোন করলেন সালেহ চৌধুরী কে। বলে রাখি, অপরাজেয় বাংলা এই নামটি দিয়ে ছিলেন দৈনিক বাংলার সাংবাদিক(সম্ভবত তখন সাব এডিটর) মুক্তি যোদ্ধা সালেহ চৌধুরী।

১৯৭৩ তে যখন স্বাধীনতা ভাষ্কর্যের প্রাথমিক কাজটি শেষ হয় তখন সে কাজটির ওপর ২২ জুলাই ১৯৭৩ এ একটি উপ সম্পাদকীয় লিখেন তিনি দৈনিক বাংলায়। শিরোনাম, অপরাজয় বাংলা । মজার ব্যাপর হলো সেই থেকে লোক মুখে মুখে শ্রুত হতে হতে স্বাধীনতার এই ভাষ্কর্যটির নাম অপরাজেয় বাংলা হয়ে যায়। সালেহ চৌধুরীকে পাওয়া গেল ফোনে। আমি কথা বলি তার সাথে।

কথা হয় যার ব্যাক্তিগত বদান্যতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে ও অভিনব পদ্ধতিতে ভাষ্কর্যের ঢালাইটি যিনি করিয়ে দেন সেই শহিদুল্লাহ্ এ্যাসোসিয়েট্স এর প্রকৌশলী এস এম শহিদুল্লাহ সাহেবের সাথে। ঠিক হয় ঢাকায় এসে নিদৃষ্ট দিনে তাদের কাছে যাবো। চা খেতে খেতে ভাবী বের করে দেখান তার হেফাজতে থাকা সেই সময়ের কিছু ছবি। বলাবাহুল্য এর মাঝে অপরাজেয় বাংলার তিনফুট উচ্চতার সেই মডেল ভাষ্কর্যটির ছবি ও ছিল। ভাবীর কছে শুনলাম এই ছবি গুলি তুলিয়ে ছিলেন চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্ব খান আতাউর রহমান।

তার বিখ্যাত ছবি "আবার তোরা মানুষ হ" এর টাইটেলে এই স্থির চিত্রটি ব্যাবহার করা হতে দেখা যায়। জিজ্ঞেস করলাম ছবি গুলো কার তোলা? ভাবী বললেন খান আতা'র ভাই। ভাবী বললেন আরো এক মজার কথা। ১৯৭৯ সালে অপরাজেয় বাংলার কাজ যখন দ্বিতীয় দফা শুরু হয় তখন এক দিন উনি খবর পেলেন ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি চলছে। খবর পেয়ে উনি পড়িমরি করে ছুটে আসেন ক্যাম্পাসে।

এসে দেখেন ক্যাম্পাসের ভুতুড়ে নির্জনতায় থমথম করছে আর সৈয়দ আবদুল্লাহক খালিদ মাচার উপর ধুলায় ধুসর হয়ে কেটে চলেছেন পাথর্ অথচ নিচ দিয়ে কিছুক্ষন আগেয়ে কারবালা হয়ে গেছে তার কোন খবরও তার ছিল না! বিকেলে খালিদ ভাই, ভাবী সবাই মিলে গেলাম আলম খোরশেদের বিশদ বাঙলায়। মন্ট্রিয়ল ছাড়বার পর আলম খোরশেদের সাথে দীর্ঘ্য বছর পর দেখা। খালিদ ভাই থাকেন একই শহরে নাম শুনেছেন কখনো যান নাই আলম খোরশেদের বিশদ বাংলায়। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে প্রথমবারের মত কাছে পেয়ে আলম খোরশেদ ঘুরে ঘুরে দেখালেন বিষদ বাঙলার কার্য্যক্রম আমাদের। আড্ডা হলো অনেক দিন পর।

মন্ট্রিয়লে আলম ভাই আমাকে আপনি করে বলতেন এখন দেখি তুমি করে বলতে শুরু করেলন! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন হেলাল কি প্লান, কি করতেছ এখন? আমি বলি ডকুমেন্ট্রি বানাচ্ছি, নাম অপরাজেয় বাংলা । (চলিবেক) মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ১: অপরাজেয় বাংলা মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ২: অপরাজেয় বাংলা মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৩: অপরাজেয় বাংলা ওয়েব ঠিকানা, অপরাজেয় বাংলা সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ এর এই ছবিটি গত ১৬ ডিসেম্বর শিল্পীকে নিয়ে লেখা একটি প্রতিবেদনের সাথে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের ছাপা হয়েছে।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।